পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের ঘটনায় নিহত ৯ জঙ্গিসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামীও করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে মিরপুর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মো. শাহজালাল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন একই থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাজ্জাদ। নাম উল্লেখ করা আসামীদের মধ্যে একমাত্র আসামী রকিবুল হাসান ওরফে রিগান রিগ্যান পুলিশ প্রহরায় ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকি ৯ আসামী পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৬ জুলাই রাতে মিরপুর জোনের উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে কল্যাণপুর এলাকায় ব্লক রেইড শুরু করা হয়। রাত ১২ টা ৩৫ মিনিটের সময় ৫ নং রোডের ৫৩ নম্বর তাজ মঞ্জিলের ৬ষ্ঠ তলা ভবনের ৫ম তলা ফ্ল্যাটে পুলিশ অবস্থান নেয়। এ সময় ৫ম তলায় পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের অবস্থানরত কক্ষের দরজায় নক করলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণ করে পালানোর চেষ্টা করে। এতে পুলিশের এসআই দীল মোহাম্মদ আহত হন। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে এক জঙ্গিকে আহত অবস্থায় আটক করা হয় এবং অপর জঙ্গি পালিয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নীচে থাকা পুলিশ সদস্যরা ভবনের সামনে পিছে এবং বিভিন্ন তলায় অবস্থান নেয়। এরপর পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে মিরপুর জোনের ডিসি মিরপুর বিভাগের সব পুলিশ এবং কন্ট্রোল রুম থেকে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানোর জন্য ওয়্যার্লেস ম্যাসেজ পাঠান। এরপর ওই ভবনটিকে চারপাশ থেকে কর্ডন (ঘিরে) করে রাখে পুলিশ। যাতে ভবনে থাকা জঙ্গিরা পালিয়ে যেতে না পারে। কিছুক্ষণ পর জঙ্গিরা জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট শ্লোগান দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। বিষয়টি পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে অত্র এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করে ওই ভবন ও আশপাশ এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ঘটনা জানার পর পরই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ক্রাইম এন্ড অপস, যুগ্ম কমিশনার ডিবি, ডিবি পশ্চিম জোনের ডিসি এবং ডিবি, সিটি, সোয়াত টিম ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জঙ্গিরা আবারো পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। ফলে আশপাশের জনগণের জানমাল হুমকির মুখে পড়ে এবং বড় ধরনের ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা মাইকিং করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। এরপরও জঙ্গিরা জঙ্গি সংশ্লিষ্ট নানা শ্লোগান দেয় এবং পুলিশের ওপর হামলা অব্যাহত রাখে। উদ্ভূত আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সোয়াত টিম অভিযানে অগ্রসর হয়ে মডেল থানা পুলিশের সাথে ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় জঙ্গিরা সোয়াত টিমকে লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে গুলি বর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সোয়াত টিম পাল্টা গুলি বর্ষণ করে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময়ের পর সোয়াত টিম জঙ্গিদের অবস্থানরত কক্ষে ঢুকে ৯ জঙ্গির লাশ, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, আগ্নেয়াস্ত্র, জিহাদী বই, ধারালো অস্ত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্র দেখতে পায়।
পুলিশের ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ অভিযানের পর জঙ্গি আস্তানা থেকে জঙ্গিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মালামাল ও আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৬ জুলাই বিকেলে দুই পুলিশ কর্মকর্তা পৃথকভাবে জঙ্গিদের ব্যবহৃত মালামাল ও বিভিন্ন আলামতের জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন। এক নম্বর জব্দ তালিকায় ক্যামব্রিয়ান স্কুলের ৪টি ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ কার্ড, ২টি পেন ড্রাইভ, মানিব্যাগ, প্লাস্টিকের ফাইল, চেস্ট স্প্রিং, নগদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা, আ. রহিম নামের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইলের সিমকার্ড, ৪৪৫টি গুলির খোসা, মোবাইল ফোন, ২টি চাকু, ৫টি লাল-সাদা, ২টি কালো-সাদা, ১টি নীল-সাদা পাগড়ী, হাতঘড়ি, ২টি স্ক্রু ড্রাইভার, বটিসহ ২৮ প্রকারের বিভিন্ন মালামাল ও আলামত জব্দের বিষয় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া দুই নম্বর জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ইএসএ, চীন ও জাপানের তৈরি চারটি ম্যাগাজিনযুক্ত সিলভার এবং কালো রঙ্গের পিস্তল, ১৪ রাউ- গুলি, এক রাউ- গুলির খোসা, সুইচ গিয়ারসহ বিভিন্ন প্রকারের ১৪টি চাকু, কালো ফ্রেমের চশমা, লাল-সাদা রংয়ের হাজী রুমাল, লাল-সাদা-সবুজ-কালো রঙয়ের একটি গামছা, চারটি কালো রঙয়ের পাঞ্জাবী, একটি সেনাবাহিনীর পোশাকের রঙয়ের ব্যাগ, দুইটি কালো কাপড়ের উপর সাদা রঙয়ের আরবী লেখা ব্যানারসহ ২৬ প্রকারের বিভিন্ন মালামাল ও আলামতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার মধ্যরাতের পর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিলে পুলিশের অভিযানকালে জঙ্গিরা হামলা চালায়। পরে ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে সোয়াত বাহিনীর নেতৃত্বে ‘অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’ নামে অভিযানকালে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। পুলিশ বলছে, নিহত জঙ্গিরা সবাই জেএমবি সদস্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।