পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলমান করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছু কিছু ব্যাংক সহায়তা করছে না বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সংগঠনের সভাপতি প্রস্তাব দেন, যারা সহায়তা করবে না, তাদের কাছ থেকে সরকারি অর্থ তুলে নিয়ে সহায়তাকারী ব্যাংককে দিতে হবে। আর সহায়তাকারী ব্যাংকগুলোকে আগামী বছরের জন্য ১ শতাংশ করপোরেট করে ছাড় দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি। একই সঙ্গে ন্যূনতম ও আগাম কর ৩ বছরের জন্য স্থগিত করার দাবি জানান তিনি। গতকাল ‘২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট’ নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। এ সময় তিনি প্রস্তাবিত বাজেটকে মানবিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট হিসেবে উল্লেখ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্যাকেজ বাস্তবায়নে অনেক ব্যাংক এগিয়ে এলেও কিছু ব্যাংকের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। যেসব ব্যাংক প্যাকেজ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে না; ওই সব ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেয়ার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি যারা সহযোগিতা করছে তাদের ট্যাক্সের সুবিধা দেয়া ও আমানত বাড়িয়ে দেয়া যায় কি-না তা বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ প্রস্তাব করলাম। শিগগিরই অর্থমন্ত্রীকে এ বিষয়ে চিঠি দেব। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, প্রণোদনা নিয়ে একটি শ্রেণি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার আওতায় ঋণের অর্থ দিতে পারছে বলে বলা হলেও এর সঙ্গে একমত নন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ব্যাংকে তারল্য বাড়ানোর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংককাররা আমাদের সঙ্গে (এফবিসিসিআই) সভায়ও বলেছে, কোন তারল্য সঙ্কট নেই।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, প্রণোদনা বাস্তবায়ন কেবল ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয়, সার্বিকভাবে সমাজের ওপর এর প্রভাব পড়বে। এসএমই খাতের জন্য প্রণোদনার আওতায় বরাদ্দ হওয়া ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে গত দুই মাসে মাত্র ৫০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোটবড় ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাবে বড় শিল্প খাত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে গড়ে অর্ধেক সুদ। বাকি অর্ধেক সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে ব্যাংকগুলোকে দেবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ব্যাংকগুলো সহযোগিতা করছে না ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের এসএমই খাতে ব্যাংকগুলোর অনীহা দেখা যাচ্ছে। অনেক ব্যাংক বলছে, এ খাতে ঋণ দিলে খরচ বেশি। এটা আসলে ঠিক নয়। এ প্যাকেজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো সমস্যা থাকলে তার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড সিএমএসএমই খাত। এখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ। গত ১০ বছরে অনেকগুলো ব্যাংক এসেছে। তাদের বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে নিয়ে আশা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাছে যেতে পারিনি। আবার এ খাতের উদ্যোক্তারাও ব্যাংকিং চ্যানেলে যায় না। কারণ তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে ক্রয় করে পণ্য বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করেন। তাদের ব্যাংকে যেতে হয় না। যে কারণে বড় একটা অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়ে গেছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এখন সময় এসেছে দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক রয়েছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক আকারে নিয়ে আসা। আগামী তিন বছরে এ কাজ করতে হবে। তবে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ দিতে হবে। এ খাতে এখন খরচ বেশি হলেও আগামীতে গ্রাহক বাড়লে খরচ কমে যাবে। এ জন্য সিএমএসএমইতে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। প্রণোদনা ঘোষণার পর এফবিসিসিআই সরকারকে অনুরোধ করে ব্যাংক কোনোভাবেই যেন চাপে না পড়ে, ব্যাংকের তারল্য, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে বাংলাদেশে ব্যাংকের প্যাকেজের বেশিরভাগ সিএসএমই ৯৯ শতাংশ ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের বাইরে। বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বার্ষিক লেনদেন তিন কোটি টাকার ওপর বছরে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে আয়কর ধরা হয়েছে। এটি অযৌক্তিক। এই ধরনের আগামকর এবং ন্যূনতম কর আগামী তিন বছরের জন্য প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এ সময় সরকারের কিছু কর্মকর্তা ও পরামর্শকের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা জানান এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
তার অভিযোগ, এসব কর্মকর্তা ও পরামর্শক সরকারের কাছ থেকে টাকা নিলেও সমন্বিত ও স্বয়ংক্রিয় কর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেননি অথবা করেননি। কর হার কমিয়ে আওতাও বাড়ানো হয়নি। বরং এখন নতুন নতুন জটিলতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এক শতাংশের জন্য বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের ভুক্তভোগী হওয়া উচিত নয়। এফবিসিসিআই সভাপতি এ প্রসঙ্গটিতে আসেন এবারের বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) বিষয়ে কিছু বিধির বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে। ব্যবসায়ীরা ওই সব বিধান নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাট রেয়াত নেয়ার সুযোগ সীমিত করা, উচ্চপর্যায়ের অনুমতি ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে নথিপত্র জব্দ করার সুযোগ, ভ্যাট বিরোধ নিষ্পত্তিতে মামলার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বদলে ২০ শতাংশ অর্থ জমা, টেলিযোগাযোগে ৫০ শতাংশ জমা দিয়ে সালিসে যাওয়া এবং তার ৩০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রণোদনা হিসেবে পাবেন বলে বিধি করা ইত্যাদি।
শেখ ফাহিম বলেন, এ ধরণের আরও ধারা আছে যেগুলো প্রক্রিয়াকে জটিল করবে। স্বচ্ছতা ব্যাহত করবে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে। এটি স্বয়ংক্রিয় কাস্টমস, কর-ভ্যাট নীতির পরিপন্থী, যা বাস্তবায়নের জন্য টাকা বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দিয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত করেছিলেন। যাতে এ সময়ে আইনটি রাজস্ব ও ব্যবসাবান্ধব করা যায়। কিন্তু এ সময়ে কর্মকর্তারা কোনো কাজ করেনি। এখনো তাদের অনেকের চাকরি আছে এবং একই প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরোনো ব্যর্থ পরামর্শকেরা আবারও যোগ দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খাদ্য সহায়তা সাড়ে চার কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন করোনার শুরু থেকেই। এফবিসিসিআই সদস্য জেলা চেম্বার্স, অ্যাসোসিয়েশনস, বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসংখ্য মানবিক দৃষ্টান্ত থেকে এফবিসিসিআইয়ের আস্থা যে সম্মিলিতভাবে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, ইনশাল্লাহ।
এফবিসিসিআই ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থকর্মী, সাংবাদিক, ফিল্ড রিপোর্টার, ক্যামেরা পারসন, বাংলাদেশ আর্মড ফোর্স, পুলিশ, র্যাব, ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারস, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স, ই-কমার্স, কল সেন্টার, টেলিকম অপারেটরস, সরকারের প্রতিটি সেক্টরের কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের করোনাকালে ১৬ কোটি মানুষের পাশে থাকার জন্য সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থবিল ২০২০-২০২১ মহামান্য সংসদে উত্থাপন করেন। ২০১০ সাল থেকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দর্শন, ২০২১ মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ উন্নত রাষ্ট্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় এই বাজেটে করোনার বাস্তবতা যোগ হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ ছিল প্রণোদনা অনুদান এবং ভর্তুকি সুদের ঋণ সুবিধা। কিছু ঋণ এবং অনুদান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১৯ প্যাকেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যান্য দেশের সুবিধা, ট্যাক্স নেটের অন্তর্ভুক্ত জনগণের জন্য প্রযোজ্য। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনলাইনেও বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা ও সাংবাদিকরা যুক্ত হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।