Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চাকরির বাজারে বিপর্যয়

১৩ ভাগ চাকরিজীবী করোনায় বেকার : বিআইডিএস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস কর্মজীবী মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে এনেছে। নতুন নিয়োগ নেই অথচ চাকরি হারাচ্ছেন কর্মজীবীরা। কোথাও চাকরি থাকলেও বেতন নেই, কোথাও বেতন কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারি পাটকলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস-এর এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে। গবেষণা জরিপে বলা হয় অফিসে (ফরমাল সেক্টর) চাকরি করেন এমন ১৩ ভাগ মানুষ করোনায় এ পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন। চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই এমন মানুষের সংখ্যা আরো বেশি। আর ২৫ ভাগ চাকরিজীবীর বেতন কমে গেছে।
জানতে চাইলে বিআইডিএসের জরিপ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তারা ৮০ ভাগ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। এখন সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে সেটা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আর প্রণোদনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত চাকরি টিকিয়ে রাখা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা। সেটার ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের যা সম্পদ আছে তা দিয়েই কাজ করতে হবে। দরকার সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনা। যারা ফরমাল সেক্টরে চাকরি করেন তাদের বড় একটি অংশ এখন বিপাকে আছেন। তাদের আয় কমে গেছে বা আয় নেই। এই জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কোনো কর্মসূচি নেই।
বিআইডিএস-এর এই জরিপে বলা হয়, বিআইডিএস অনলাইনে গত ৫ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ২৯ হাজার ৯০৯ জনের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করেন। কমপক্ষে মাধ্যমিক পাস এমন নাগরিকদের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া পুরুষ ও নারীর অনুপাত ৬৭:৩৩।
জরিপে অংশ নেয়া ১৩ শতাংশ মানুষ, যারা ফরমাল সেক্টরে কাজ করতেন, তারা চাকরি হারিয়েছেন বলে জানান। যাদের আয় ১১ হাজার টাকার কম তাদের ৫৬.৮৯ শতাংশ পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে; ৩২.১২ শতাংশের আয় কমে গেছে। যাদের আয় ১৫ হাজার টাকার মধ্যে তাদের ২৩.২ শতাংশের আয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৭.২৬ শতাংশের আয় কমে গেছে। আর যাদের আয় ৩০ হাজার টাকার বেশি তাদের ৩৯.৪ শতাংশের কমেছে এবং ৬.৪৬ শতাংশের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এই সময়ে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।
বেতন নেই: ১৩ ভাগ মানুষ যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা প্রতিমাসে নিয়মিত বেতন পেতেন। তারা দিনমজুর বা অনানুষ্ঠানিক কোনো কাজের সাথে জড়িত নন। আর আনুষ্ঠানিক খাতে চাকরি আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না এরকম কর্মজীবীর সংখ্যা অনেক। ২৫ ভাগের বেতন ৫০ থেকে ৩৫ ভাগ কমানো হয়েছে।
এদিকে সরকার এরইমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটমন্ত্রী এর আগে পাটকলগুলো বন্ধের কথা বললেও এবার কৌশলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক বলে এগোচ্ছে বলে পাটকল শ্রমিক নেতারা মনে করছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারাবেন।
জানতে চাইলে পাটকল শ্রমিক আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক খলিলুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে সরকারের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের সিদ্ধান্ত অমানবিক। সরকার স্থায়ী ২৫ হাজার শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানোর কথা বললেও বাস্তবে একই কারণে অস্থায়ী ও বদলি শ্রমিকদেরও চাকরি থাকবে না।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার জানান, করোনার মধ্যে এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার পোশাক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, এখনো শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। আগে যাদের চাকরির বয়স এক বছরের কম তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে। এখন যাদের চাকরির বয়স বেশি এবং বেতন বেশি তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।
বেসরকারি ব্যাংকে ছাঁটাই না করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। তারা বলেছেন, এখন মোট বেতনের ৬৫ ভাগ দেয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বাঁধার কারণে তা এখনো কার্যকর হয়নি। তবে অনেক ব্যাংক এর মধ্যেই কর্মচারীদের শতকরা ২০ শতাংশ বেতন কমিয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি আছে, বেতন নেই। যারা এমপিওভুক্ত তারা মোট বেতনের সরকারের দেয়া ৬৫ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ এখনো কর্মচারীদের বেতন দিলেও কত দিন তা দিতে পারবে অনিশ্চিত। তবে সরকারি চাকরি যারা করেন তাদের বেতন নিয়ে এখনো কোনো সঙ্কট তৈরি হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাকরির-বাজার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ