পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশের পুরোনো জঙ্গি সমস্যা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে তারা ফায়দা লুটছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জনপ্রশাসনে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির প্রশংসা করে তিনি বলেন, আধুনিক, গতিশীল ও উদ্ভাবনীমূলক জনপ্রশাসনই দেশকে উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ‘উন্নয়ন উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন-২০১৬’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন’ (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের বিভিন্ন উদ্ভাবন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটি আমাদের সকলের। আসুন, তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য আরো নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করি। আগামী প্রজন্মের জন্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত, উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা দিতে হলে আমাদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই জনগণ সেবার জন্য ঘুরবে না, সরকার জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রয়েছে বিশাল মানব সম্পদ। তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে এই মানব সম্পদকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের শেষে ‘উন্নয়ন উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন-২০১৬’ শীর্ষক সামিট উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ইউএনডিপির এ দেশীয় প্রতিনিধি পলিন টেনাসিস। সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, মালদ্বীপ ও ভুটানের মন্ত্রী, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চট্টগ্রাম-এই তিন জেলাকে শ্রেষ্ঠ জেলার এবং শ্রেষ্ঠ বিভাগ হিসেবে ঢাকাকে সম্মাননা প্রদান করেন। তিন জেলার জেলা প্রশাসক যথাক্রমে মোশাররফ হোসেন, হুমায়ুন কবির ও মেজবাহ উদ্দিন নিজ নিজ জেলার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। আর ঢাকা বিভাগের পক্ষে বিভাগীয় কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা স্মারক নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন ভালো কাজও হচ্ছে, আবার এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। কাজেই এজন্য আমাদেরকে খুব সতর্ক হতে হবে। বাংলার মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না-এই নীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনপ্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সকলে মিলে একবিংশ শতকের উপযোগী আধুনিক, সেবামুখী, চৌকষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলবেন।
‘কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে’ পৌঁছতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ দেশটি আমাদের। আজকে এদেশের মানুষের জন্য যে সেবা দিয়ে যাবো আগামী প্রজন্ম তার সুফল ভোগ করবে।
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত, উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা দিতে হলে আমাদেরকে আরো বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি মনেকরি, জনপ্রশাসনের প্রতিটি সদস্যের সে যোগ্যতা, দক্ষতা আছে। শুধু চর্চা করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি।
প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রতিটি স্তরের সরকারি কর্মচারীদের দেশের উন্নয়নে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। সেবা প্রদানের নতুন কৌশল ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। যে যেখানে দায়িত্বে থাকবেন সেখানে আপনাদের চিন্তা-চেতনা দিয়ে দেশকে কীভাবে আরো উন্নত করা যায়-সে বিষয়ে আরো মনোনিবেশ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করি এদেশের জনগণের জন্য। তাদের সেবা দেওয়া, তাদের জীবনমান উন্নত করা, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, উন্নত করা-এটাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের সেবা করাটাই আমাদের কাজ। জনগণ আমাদের কাছে আসবে না, আমরাই বরং জনগণের কাছে গিয়ে তাদেরকে সেবা দিয়ে আসব-এটাই হবে আমাদের চিন্তা-চেতনা। এটাই আমাদের নীতি।
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘উদ্ভাবনী চিন্তা ও তথ্য প্রযুক্তির বিকাশকে প্রধান্য’ দেওয়ার এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তার কন্যা। জাতির পিতার এ সকল পদক্ষেপই আমাদের আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি। তার এই পদক্ষেপগুলো আমাদের আগামী দিনে চলার পথ দেখিয়েছে।
১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর ‘এনালগ থেকে ডিজিটাল যুগে’ প্রবেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে এক্ষেত্রে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। জয় তাকে কীভাবে কম্পিউটার শিখিয়েছেন এবং সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন সেকথাও বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা এ সময় রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে উদ্ভাবন ও তথ্য প্রযুক্তির সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে-উদ্ভাবনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে ‘ইনোভেশন ফান্ড’ তৈরি করে ১০৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন, ‘আইডিয়া ব্যাংক’ চালু করা, ইন্টারনেট ডেনসিটি ও সাবমেরিন ক্যাবলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, দেশে তথ্য প্রযুক্তি বান্ধব নীতি প্রণয়ন এবং দেশের ৯৯ ভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা। ২৫ হাজারেরও বেশি ওয়েবসাইট নিয়ে ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও শিক্ষক কর্তৃক ‘ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি’ নামে দুটি মডেল উদ্ভাবন, মুক্তপাঠ নামে বাংলা ভাষায় একটি উন্মুক্ত ই-লার্নিং প্লাটফর্ম চালু, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক’ তৈরি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি মন্ত্রণালয়, চারটি অধিদপ্তর এবং ৬৪টি জেলা প্রশাসক ও সাতটি বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ‘ই-ফাইলিং সিস্টেম’ চালু করা।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে ৫২৭৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার চালু করে সেখান থেকে ২০০ প্রকার সেবা দেওয়ার, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়ার ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ সেবা চালু করার কথাও বলেন। ‘কৃষি কলসেন্টার’ এবং ৪০০টি ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এজেন্ট ব্যাংকিং’ চালু করার প্রসঙ্গও তুলে ধরে শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিনা খরচে সাবমেরিন ক্যাবলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করেছিল-একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাবমেরিন ক্যাবলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত না হবার কারণ হিসেবে তারা বলেছিল এ সংযোগ নিলে বাংলাদেশের সকল তথ্য চুরি হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমরা আবার সরকার গঠন করি। আমাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি আমার ছেলে জয়ই আমাদেরকে উপহার দিয়েছে। তারই পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করি। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।