Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ই-কমার্সে বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত

আলিবাবা-অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান সরাসরি আসতে পারবে বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে আশা করছে সরকার দেশীয় কোম্পানি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনার আহ্বান ই-ক্যাবের

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের অনলাইন মার্কেট এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর এটি বড় শহর থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। বড় বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট উদ্যোক্তারাও এখন ফেসবুক কমার্সের মাধ্যমে এই ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছেন। চাল-ডাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, কাপড়-প্রসাধনী, ওষুধ, কৃষিপণ্য, মৌসুমী ফলসহ সবকিছুই এখন ঘরে বসেই কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এতে একদিকে যেমন মানুষের সময় বাঁচছে অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। সম্ভাবনাময় এই খাতের আরও প্রসার এবং প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ করতে সরকার এবার শতভাগ বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এখন বিদেশি বিনিযোগকারীরা চাইলেই বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠান খুলে ই-কমার্স বাণিজ্যে যুক্ত হতে পারবেন। এজন্য ইতোমধ্যে নীতিমালা সংশোধন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মূলত এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এ নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ই-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলে আশা করছে সরকার। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কারণে যেন দেশীয় উদ্যোক্তার ক্ষতিতে পড়তে না হয় সেজন্য সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো।

জানা যায়, এতোদিন ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করতে পারতেন না। দেশীয় কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যৌথভাবে বিদেশিদের বিনিয়োগ করতে হত। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারতেন। যেমন- বিশ্বের জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেট আলিবাবা বাংলাদেশে দারাজ ডটকমের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসা করছে। কিন্তু এখন থেকে ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। আলিবাবা কিংবা অ্যামাজনের মতো জনপ্রিয় বিশ্ব বিখ্যাত ই-কমার্স কোম্পাসিগুলো চাইলে এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবেন। এজন্য ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল।

নীতিমালায় এতোদিন বলা ছিল, ডিজিটাল কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন করতে হবে। তবে বিদেশি ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দেশীয় কোনো ইন্ডাস্ট্রি সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ ব্যতীত এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না এবং দেশীয় ডিজিটাল কমার্স ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে- ডিজিটাল কমার্স খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু বিদ্যমান বিধি-বিধান প্রতিপালন করলেই হবে। অর্থাৎ এখন থেকে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মালিকানায় ব্যবসা করতে পারবেন।

ইতোমধ্যে দারাজ, উবার, চালডাল, পাঠাও এর মতো প্রতিষ্ঠানে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৪৯ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করেছে। যা পূর্বের নীতিমালার লঙ্ঘন। ফলে নতুন নীতিমালা সংশোধন না করলে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতো বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
ডবিøউটিও সেলের মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, এতদিন ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারী এককভাবে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। তাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে হত। এক্ষেত্রে বিদেশিদের বিনিয়োগ রাখতে হত সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ থাকত কমপক্ষে ৫১ শতাংশ। এই বিধি-নিষেধ উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে বিদেশিরা চাইলে এ খাতে শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবেন। তবে বিডা, বেজা ও বেপজার পলিসি মেনেই তাদের বিনিয়োগ করতে হবে। এখন ই-কমার্স খাতের জন্য আলাদা কোনো লিমিটেশন থাকলো না।
ই-কমার্সে বিদেশী বিনিয়োগ বিশেষ করে আলিবাবা ও অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান চলে আসলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স এখন সম্ভাবনাময় খাত। এই শিল্পটি মাত্র শুরুর দিকে রয়েছে। ধীরে ধীরে মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকছে। স্থানীয় কোম্পানিগুলো ভালো করছে। এই অবস্থায় বিদেশী বিনিয়োগ আসলে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। তাদেরকে এই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে যারা ব্যবসা করতে পারবে তারা টিকে থাকবে, না হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে ই-কমার্সের জন্য বিপুল সম্ভাবনা এবং বিশাল মার্কেট রয়েছে জানিয়ে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমরা সব সময় বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সাধুবাদ জানিয়েছি। তবে আমরা চেয়েছি যাতে যৌথ মালিকানায় আসে। এটি এতোদিন ছিল কিন্তু নীতিমালার কিছু বিষয়ের সাথে সাংঘষিক ছিল একারণে সংশোধন করা হয়েছে।
স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য হুমকি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে যদি প্রটেক্ট করা হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। এজন্য আমরা কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। এসব প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগকারী বাইরের হলেও ওয়্যার হাউজ ফেসিলিটি, ডেলিভারি যেনো স্থানীয় কোম্পানি দিয়ে করা হয়। স্থানীয়দের প্রতিদ্ব›িদ্বতার যেনো সুযোগ করে দেয়া হয়। তা না হলে ইকো-সিস্টেম ডেভেলপ করবে না। লোকাল কোম্পানির হাতে যাতে মার্কেট শেয়ার (মার্কেট প্লেসগুলো) বেশি থাকে। পুরো মার্কেটের শেয়ার বাইরের হাতে যেনো চলে না যায় এটি খেয়াল রাখতে হবে।

হাফিজুর রহমান বলেন, সরকার তাদের জন্যও প্রচলিত আইনেই বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারবে। প্রয়োজনে কোনো কোম্পানিকে সরকার বলতে পারবে-এত টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না বা স্থানীয়দের সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে হবে ইত্যাদি
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ই-বাণিজ্য হচ্ছে। সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, গত বছর বাংলাদেশে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। তবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর তথ্য অনুযায়ি, দেড় হাজার কোটি টাকা।



 

Show all comments
  • Tabassum Rahman ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    সরকারকে ধন‍‍্যবাদ জানাই এটার জন‍্য যে আমাদের মতো উদ‍্যোক্তাদের দেশের অবদান রাখতে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন‍্য ও পণ‍্যকে মানুষের নিকট পরিচয় করে দেওয়ার জন‍্য
    Total Reply(0) Reply
  • Afsana Abtab ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    আমি গতকাল পেগাসাস নিয়ে পড়লাম তারা স্টার্টআপ কোম্পানি গুলোকে ফান্ড দিতে চায় এবং বলেছে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে তাই তারা এসব কোম্পানি গুলোর পাশে থাকতে চায়। এখন আমাদেরকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shafin Ahmed ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    ই-কমার্স এর সম্ভাবনা গুলো যদি দেশীয় প্রতিষ্ঠাগুলো বুঝতে পারত তবে দেশের ই - কমার্স আরও শক্ত ভিতের উপর দারিয়ে যেত।
    Total Reply(0) Reply
  • Gulam Kibria ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    আমি মনে করি, সরকার সময় দিয়েছিলো এবং দেশিদের থেকে আশানুরূপ ফলাফল আসে নি, এজন্য এখন বিদেশি বিনিয়োগ উম্মুক্ত করে দিয়েছে এবং কয়েক বছরের মধ্যে অনেক কিছুই হবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Farzana Yasmin ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    যে কোনো কাজে ভালো খারাপ দূইটায় আছে।সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের ভালো দিকটা গ্রহন এবং খারাপ দিকটা বর্জন করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Sri Juarsi ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    actually the key to e-commerce business is patience, because selling is more difficult than what we imagine.
    Total Reply(0) Reply
  • Samina Shamsuddin ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত। তবে আমাদের সতর্ক থাকতেও হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nishat Rimi ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
    সহমত পোষণ করছি।বড় কোম্পানী গুলোর আগমন দ্রুতই ঘটবে ই কমার্সে।অনেক পরিবর্তন আসছে
    Total Reply(0) Reply
  • Raju Ahmed ২৭ জুন, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    বিনিয়োগ করে যখন ভাল হচ্ছে বুঝতে পারে। তাই ছোট করে সবার করা দরকার। আমি গ্রামে অফিস করলাম। ছোট করে শুরু করে দেখি কি হয়?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ই-কমার্স

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩১ জানুয়ারি, ২০২২
২৬ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ