Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হোটেল শ্রমিকরা নিদারুণ কষ্টে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনায় সবকিছু চালু হলেও আগের মতো আর বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না হোটল- রেস্টুরেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আর আগের মতো পসার জমাতে পারছেন না। ফলে জীবন ধারণে নিদারুণ কষ্টে পড়ে গেছেন এই শ্রেণির লাখ লাখ মানুষ।

শনিরআখড়ায় চা বিক্রি করেন জহির। করোনা শুরু হলে চায়ের দোকান বন্ধ করে নোয়াখালী চলে যান। তিন মাস পর এসে আবার দোকান খোলেন। কিন্তু আগের মতো বেচাবিক্রি নেই। ফলে দোকানভাড়া, বাসাভাড়া থাকা খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বললেন, তিন মাসে দোকান ও বাসাভাড়া ত্রিশ হাজার টাকা দেয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্পদ নষ্ট করে সে টাকা দিলেও বেচাবিক্রি না থাকায় নিদারুণ কষ্টে পড়ে গেছি।

মালিবাগের হোটেল শ্রমিক রুবেল। তার মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। ঘরে ছোট আরও দুই ভাই-বোন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় হোটেল বন্ধ হলে ঢাকায় টিকতে না পেরে গ্রামের বাড়ি রংপুর চলে যান। সাধারণ ছুটি তুলে নেয়ার পর আবার ফিরেছেন। কাজেও যোগ দিয়েছেন। তবে হোটেলে যোগ দিয়ে আর আগের মতো বেতন পাচ্ছেন না। করোনা সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে, তার কিছুই হোটেল শ্রমিক রুবেলের পরিবার পায়নি।

কেবল শনির আখড়ার জহির আর মালিবাগের রুবেল নয়, তার মতো রাজধানীর অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ছোট ছোট হোটেলগুলোর শ্রমিকের অবস্থাই একই রকম। করোনায় যতদিন হোটেল বন্ধ ছিল, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। এখন দোকান ও হোটেল খুললেও আগের মতো বেচাবিক্রি নেই, বেতন মিলছে কম।

রাজধানীর রেঁস্তোরা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগরে হোটেল-রেঁস্তোরায় কাজ করেন ৬০ হাজার কর্মচারী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ছুটির আওতায় যখন সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন এসব শ্রমিকদের ছিল না খেয়ে থাকার অবস্থা। তারা গ্রামে চলে যান। এ মাসে সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়ানোয় অনেক হোটেল যেমন খুলতে শুরু করেছে; তেমনি বন্ধও রয়েছে প্রায় অর্ধেক হোটেল। ফলে অর্ধেক শ্রমিকও এখনো কাজে ফিরতে পারেননি। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থা আরো খারাপ। পুঁজি হারিয়ে তাদের দিশেহারা অবস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর নামি রেস্টুরেন্টগুলোতেও কর্মচারীর সংখ্যা কম নয়। গুলশান-বনানী বা বসুন্ধরার মতো এলাকা ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত রেস্টুরেন্টগুলোও ছিল অনেকের সহায়। হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করতেন। করোনায় তাদের সবাইকেই কমবেশি একই সঙ্কটের মুখে পড়তে হয়েছে। গুলশানের একাধিক রেস্টুরেন্ট মালিক জানান, তারা সাধারণ ছুটিতে কর্মচারীদের ছুটি দিয়ে কেবল বাবুর্চিকে পূর্ণ বেতন দিয়ে ‘ধরে রেখেছিলেন’। কারণ বাবুর্চি চলে গেলে পরে ভালো বাবুর্চি পাওয়া যাবে না। এখন আবার রেস্টুরেন্ট খুললেও সবাইকে কাজে নিতে পারেননি। কারণ বেচাবিক্রি আগের চেয়ে অনেক কম। যাত্রাবাড়ির একটি রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, হোটেল শ্রমিকরা করোনাকালে যেমন প্রণোদনা পায়নি, তেমনি মালিকদের ক্ষতির খবরও কেউ নেয়নি। তিনি বলেন, নতুন হোটেল বন্ধ রেখে এমনিতেই ক্ষতির মধ্যে ছিলাম। এরপর করোনার আক্রমণে পুরো ব্যবসাই বন্ধ ছিল। এখন চালু করেও বিক্রি খুবই কম। আমি তো এখন বিপদে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেঁস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার রুহুল আমিন বলেন, হোটেলগুলো শিল্প ক্যাটাগরিতে না থাকায় এর শ্রমিকরা নিয়োগপত্র সুবিধা পান না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হোটেল-শ্রমিক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ