পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আবার ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব রকম কার্যক্রম চালু করা হবে। গতকাল ব্রিটিশ কাউন্সিলে হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন আর্শিয়া আজিজ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শুধু ব্রিটিশ কাউন্সিল নয়; ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা এবং বিদেশি নাগরিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও বিদেশিরা আশ্বস্ত হতে পারছে না। দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা এবং জঙ্গি নিধনের মহারণে রক্তাক্ত বল প্রয়োগে জঙ্গি হত্যা বিদেশিদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা ও ভীতির সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাতিল করেছেন বিদেশিরা। কিছু কর্মকর্তা হঠাৎ করে নিজ দেশে চলে গেছেন। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বড় বড় অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি দেশ তাদের ঢাকাস্থ দূতাবাসে কর্মরতদের পরিবার-পরিজনকে নিজ নিজ দেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। শুধু তাই নয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা দিয়েছে।
নিরাপত্তাহীনতার কারণে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের পরিচালক বারবারা উইকহ্যাম বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলে যারা কাজ করেন এবং এখান থেকে যারা সেবা গ্রহণ করে থাকেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতেই মূলত আমরা সাময়িকভাবে বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছি। সাময়িকভাবে বন্ধ থাকা অবস্থায় আমাদের গ্রাহকরা যদি কোনো ধরনের তথ্য জানতে চায় তবে তারা নফ.বহয়ঁরৎরবং@নৎরঃরংযপড়ঁহপরষ.ড়ৎম -এ ইমেইল করে জানতে পারবেন।
গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার রক্তাক্ত ঘটনায় ১৮ বিদেশি নিহতের পর বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসরত এলাকা কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত বারিধারা, গুলশান, বনানীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওই এলাকার অনেক হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও আশঙ্কামুক্ত হতে পারছে না বিদেশিরা। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান দূতাবাস তাদের বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি চেয়েছে। আর ভারতের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য তাদের দূতাবাসে বিজিবি মোতায়েনের। অনুমতি চেয়ে পাঠানো চিঠিতে জাপান দূতাবাস উল্লেখ করেছে, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে জাপানের নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদনও জরুরি। মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মী জুলহাস মান্নান নিহত হওয়ার পর একই ধরনের আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, ছাড়াও ঢাকাস্থ দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন করেছে যুক্তরাজ্য রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরালিয়ন, নরওয়ে, সুইডেন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড দূতাবাস। শুধু দূতাবাসগুলো নয়; দেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন সংস্থার অফিস নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন করেছে। ঢাকায় কর্মরত বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করে। সে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব কূটনীতিকদের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিদেশিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবে বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা বৈঠকে মন্ত্রীর কথায় নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারেননি। কূটনীতিকরা উদ্বেগ ও আতঙ্ক জানালে তাদের নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়। বাস্তবেও কূটনৈতিক জোনসহ বিদেশিরা রয়েছেন এমন এলাকার নিরাপত্তাকে এখন সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। তারপরও দূতাবাসে কর্মরত অনেক কর্মকর্তার পরিবার-পরিজনকে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে। অফিসে কম প্রয়োজন এমন কর্মকর্তাদের ছুটি দিয়ে দেশে পাঠানো হয়েছে। অল্পসংখ্যক কর্মচারী দিয়েই চালানো হচ্ছে কাজ। গুলশান ও বারিধারায় বসবাস করেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, কূটনৈতিক পাড়ায় ব্যাপক পুলিশি টহল ও পুরো কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না ঢাকায় কর্মরত বিদেশিরা। এ কারণে বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে অফিসের বাইরে কোনো কাজ না করতে নিজ নিজ নাগরিকদের বার বার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, অবৈধভাবে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করা দ্য এশিয়া প্যাসিফিক মানি লন্ডারিং গ্রুপ (এপিজিএমএল) ৪৩টি দেশ নিয়ে গঠিত। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির বার্ষিক সভা ২৪ থেকে ২৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সভা উপলক্ষে হোটেল বুকিংসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে সভাটি বাতিল করা হয়। আবার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য (২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর) এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের সম্মেলন-অ্যাপনিক-৪২ বাতিল করা হয়েছে। এ সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় ২শ’ বিদেশি এক্সপার্টের অংশ নেয়ার কথা ছিল। এজন্য স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে আয়োজক ছিল ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। এজন্য ঢাকার দুটি পাঁচ তারকা হোটেলও বুকিং দিয়েছিল সম্মেলনের স্থান হিসেবে।
শুধু দূতাবাসের কর্মরতরা নয়; নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ছাড়ছেন বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিদেশিরা। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে চলে গেছেন। ৫ জুলাই বিনা নোটিসে বাংলাদেশ ছেড়েছেন ৫ স্পেনীয় ইঞ্জিনিয়ার। নারায়ণগঞ্জের কাছে সিদ্ধিগঞ্জে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে ৩৩৫ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা। পহেলা জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ১৮ বিদেশি নিহতের পরই বাংলাদেশে বসবাসকারী তাদের নাগরিকদের জন্য স্পেন বিশেষ সতর্কতা জারি করে। তার পরেই চুপি চুপি বাংলাদেশ ছাড়েন সিদ্ধিরগঞ্জের ওই ইঞ্জিনিয়াররা। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্তারা টেরটিও পাননি। হামলার পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমী বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ঈদের ছুটির পরে বিদেশিদের সঙ্গে ঢাকায় তাঁদের যে বৈঠকগুলো হওয়ার কথা ছিল; তার অধিকাংশই হয় বাতিল হয়েছে অথবা অন্য দেশে করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। বব উইনকো নামে জাপানি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ৭ জনের একটি প্রতিনিধিদলের ২২ জুলাই বাংলাদেশ সফরের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটিকে বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দেয়নি। বাংলাদেশের কয়েকটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে ক্রয়াদেশ দেয়ার কথাটি ছিল তাদের। একইভাবে বাংলাদেশ ভ্রমণ স্থগিত করেছেন তুরস্ক ও ফ্রান্সের তিনটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা ঢাকা আসার প্রোগ্রাম বাতিল করেন। গার্মেন্টস পণ্যের ওই ক্রেতারা তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এদিকে আগামী ৬ আগস্ট জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা’র ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। পহেলা জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলায় জাইকার ৫ কর্মী নিহতের পর বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি দেখতে তিনি ঢাকা সফরে আসছেন বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে এক সেমিনারে বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তায় আস্থাহীনতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমদ বলেছেন, বিদেশিদের জন্য দৃশ্যমান নিরাপত্তা আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। শুধু জঙ্গি দমন করলে আস্থা আসবে না। আইনের শাসন, সবার অংশগ্রহণের নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।