পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একটা ডেড লাইন ফেল করলে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হবে- এটা কোনোভাবে হওয়া উচিত নয় : প্রফেসর ড. শামসুল হক
নূরুল ইসলাম : বিআরটিএতে লুটপাট চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি এখনও দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজমুক্ত হতে পারেনি। তার উপর নতুন করে দ্বিগুণ (এক সাথে দুই বছরের) ট্যাক্সের খড়গ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত তারিখে গাড়ির ট্যাক্স দিতে ব্যর্থ হলে আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। আগে যেখানে শতাংশ হারে জরিমানা নির্ধারণ করা ছিল। এর সাথে ফিটনেসের জরিমানাতো আছে। এ নিয়ে ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়াসহ বিআরটিএ’র অফিসগুলোতে গাড়ির মালিকদের সাথে বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের বাকবিত-া লেগেই আছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ করে নতুন নিয়ম করে বিআরটিএ গাড়ির মালিকদের সাথে রীতিমতো জুলুম করছে। বিশ্বের কোথাও যার কোনো নজির নেই। জানতে চাইলে, বিআরটিএ’র আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তারা নিজেদের অসহায় দাবি করে বলেন, কম্পিউটারে এমনভাবে সিস্টেম করা হয়েছে যাতে একদিন ডেট ফেল করলেই দ্বিগুণ ট্যাক্স দিতে হবে। এতে করে গাড়ির মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন স্বীকার করে তারা বলেন, এনবিআর এটা নির্ধারণ করেছে। আর তা বাস্তবায়ন করছে সিএনএস (কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং সিস্টেম) নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিআরটিএ’র ট্যাক্সের বিষয়টি কেন্দ্রীয় জরীপ অঞ্চলের কমিশনাররা দেখেন। কমিশনাররা তাদের ক্ষমতাবলে এটা নির্ধারণ করতে পারেন। তবে এই মুহূর্তে আমি বিষয়টি মনে করতে পারছি না। তিনি সংশ্লিষ্ট কমিশনারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। নির্ধারিত তারিখে ট্যাক্স দিতে ব্যর্থ হলে দ্বিগুণ ট্যাক্স দিতে হবে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, আইনের ভাষায় যে কোনো জরিমানা বা শাস্তি অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। একটা ডেড লাইন ফেল করলে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ হবেÑ এটা তো কোনোভাবে কেউ মেনে নেবে না। এটা কোনোভাবে হওয়া উচিত নয়।
মিরপুর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, যারাই ফিটনেস ও ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে আসছেন তারাই দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে জেনে হোঁচট খাচ্ছেন। একজন ভুক্তভোগী জানান, তার ট্যাক্স প্রদানের নির্ধারিত তারিখ ছিল ২৪ জুন। সাত দিন পরে তিনি ট্যাক্স প্রদান করতে এলে তার কাছে দ্বিগুণ টাকা দাবি করা হয়। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রিন্ট দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীরা বলেন, কম্পিউটারে উঠেছে। এটা কোনোভাবে কমানো যাবে না। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। ওই ব্যক্তি নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ওনাদের ভাবখানা এমন যেনো কম্পিউটারই নীতি নির্ধারক। মানুষের কোনো ক্ষমতা নেই। নাম কেনো গোপন রাখতে চাইছেন জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ভাই, বিআরটিএ’র কর্মকর্তারা ইচ্ছা করলে বহুভাবে হয়রানি করতে পারে। দ্যাখেন না টাকা দিলে আনফিট গাড়িকে এরা ফিটনেস দেয়। আবার টাকা না পেলে ফিট গাড়িতে নানা দোষত্রুটি ধরে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্যাঁচে ফেলে। নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন পরে ট্যাক্সের টাকা জমা দিতে এসেছিলেন আতাউল হক নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। তিনি বলেন, এই ২১ দিনের জন্য ১০ শতাংশ হারে জরিমানার নিয়ম ছিল আগে। এখন নাকি দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে। এটা কি মগের মুল্লুক যে বিআরটিএ যা ইচ্ছা তাই করবে। তিনি বলেন, নির্ধারিত তারিখে ট্যাক্সের টাকা জমা না দিলে দ্বিগুণ দিতে হবে, এ বিষয়টি আমার মতো হাজার হাজার গাড়ির মালিকের অজানা। বিআরটিএ আমাদেরকে না জানিয়ে এমন কঠিন নিয়ম কিভাবে করলো? এটা কি কোনো সভ্য দেশে সম্ভব? কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোতাহার হোসেন বলেন, আমাদের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব সড়ক পরিবহন সেক্টরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার জন্য অনেক পরিশ্রম করছেন। তিনি নিজে রাস্তায় নেমে পড়েন। যেটা সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রীকে দেখা যায় না। সেই মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের অধীন বিআরটিএতে এমন ‘বাটপারি’ হবে ভাবাও যায় না। তিনি বলেন, মাননীয় মন্ত্রী বিষয়টি জানেন কিনা সন্দেহ। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পরে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মোবাইলে ফোন করলে মন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, স্যার এখন সংসদে।
মিরপুর বিআরটিএ অফিসে গিয়ে গাড়ির মালিক ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে নির্ধারিত তারিখে ট্যাক্স দিতে ব্যর্থ হলে প্রথম তিন মাস ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হতো। এভাবে ২০ ও ৩০ শতাংশ হারে ক্রমানুসারে জরিমানা দিতে হতো। তাতেও ব্যর্থ হলে ৮০ শতাংশ হারে জরিমানা করা হতো। গত বছর পর্যন্ত এই নিয়মই চালু ছিল। গত জুন থেকে নতুন নিয়ম (!) চালু হয়েছে। তবে নতুন এই নিয়মের বিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার জারি করা হয়নি। গাড়ির মালিকদেরকে জানানোর জন্যও কোনা প্রকার প্রচারকার্য চালানো হয়নি। এ কারণেই মানুষ টাকা দিতে এসে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। এতে করে বিআরটিএ’র কর্মকর্তারাও বিব্রত হচ্ছেন। আলাপকালে বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা আর্থিক বছরের ফাঁদে দ্বিগুণ টাকা প্রদানের এই নিয়মকে ‘কালো নিয়ম’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটা নিয়ে মানুষ কি পরিমাণ ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা নিয়ে লেখালেখি করেন। সরোয়ার নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি ড্রাইভারের হাতে টাকা দিয়ে বিআরটিএতে পাঠিয়েছিলাম। ড্রাইভার আমাকে দ্বিগুণ টাকার কথা জানানোর পার আমি নিজে ছুটে আসি। এসে দেখছি কম্পিউটারেই নাকি সিস্টেম করা। এখানে কর্মকর্তাদের করার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ঈদের মাসে বহু কষ্টে ফিটনেস ও ট্যাক্সের টাকা জোগাড় করেছি। এখন দ্বিগুণ (দুই বছরের একসাথে) টাকা দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। এখন গাড়ি বসিয়ে রেখে বাসেই চলাচল করতে হবে। কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র সচিব মোহাম্মদ শওকত আলী বলেন, এটা আসলে দ্বিগুণ টাকা নয়। বছরের শেষে যে টাকা দেয়ার কথা ছিল তা হয়তো কেউ দিতে পারেনি। এরই মধ্যে নতুন বছর এসে যাওয়ায় আরেক বছরের টাকা নেয়া হচ্ছে। এটাকে দ্বিগুণ বলা ঠিক হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।