পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যস্ত। অদৃশ্য ভাইরাসটি থেকে বাঁচতে পাল্টে ফেলেছে জীবনধারা। করোনাভাইরাসের বাইরের খবর দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
ঠিক সেই সময় দেশের একজন সংসদ সদস্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মিডিয়ায় খবরের শিরোনাম হচ্ছে। মিডিয়ায় খবর হিসেবে তিনি বেশ গুরুত্ব পাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে। তিনি হলেন, ল²ীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কুয়েতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। কুয়েত সরকার এমপি শহীদ পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির হিসাব জব্দ করেছে। এর মধ্যে কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩৮ কোটি (১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা) বাজেয়াপ্ত করেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়েতের আইন অনুযায়ী মানবপাচার-অর্থ পাচার প্রমাণিত হলে এমপি কাজী শহীদ পাপুলের ৭ বছরের সাজা হবে। সেই সাথে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। সাজা হলেই বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী কাজী পাপুলের সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের সাজা প্রাপ্ত হলে তার পদ বাতিল হবে।
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের সাজা হলেই সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনজিল মোরসেদ বলেন, ফৌজদারি অপরাধে যেখানেই সাজা হোক সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। কেননা সংবিধানে দেশের কোন উল্লেখ নেই। কোন এমপির সাজা হলেই স্পিকার ব্যবস্থা নিবেন। না নিলে হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের বরাত দিয়ে আরব টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে। এমপি পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য ইতোমধ্যে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। প্রসিকিউশনের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে, ওই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার রয়েছে। যার মধ্যে ৩ মিলিয়ন দিনার কোম্পানির মূলধন। কুয়েতের আইন অনুযায়ী সন্দেহভাজন অর্থ তোলা-স্থানান্তর করা যায় না। আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা যায়।
কাজী পাপুলের হাতে পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। এর আগে ৬ জুন গ্রেফতারের পার দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে পাপুল অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং সে দেশের কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম বলেছেন। কুয়েতি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পাপুলের মদদদাতা হিসেবে ইতোমধ্যে সাতজনকে চিহ্নিত করেছেন তদন্তকারীরা। তাদের মধ্যে কুয়েতের দুজন বর্তমান এবং একজন সাবেক পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। রিমান্ডে পাপুল জানিয়েছেন, তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির প্রায় ৯ হাজার কর্মী রয়েছে। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। লোক নিয়োগে ৩৪টি সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে বলেও তথ্য দিয়েছিলেন তিনি।
ইংরেজি দৈনিক আরব টাইমস এবং আরবি দৈনিক আল-কাবাস প্রতিবেদনে বলেছে, এমপি কাজী পাপুল ইস্যুতে কুয়েতে দেশি-বিদেশি নতুন নতুন নামযুক্ত হচ্ছে এবং তা চাঞ্চল্য তৈরি করছে। বিশেষতঃ ‘বাঙালি এমপির কেসটি কুয়েতের রাজনীতি ও প্রশাসনে বাড়তি উত্তাপ তৈরি করেছে। দিনে দিনে এটি কেবলই বিস্তৃত হচ্ছে। পাপুলের স্বীকারোক্তি মতে সন্দেহভাজন ৯ জন কুয়েতি হাই অফিসিয়্যালকে সিআইডি তাদের হেফাজতে নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদ সংস্থাগুলোর রিপোর্ট মতে, এক নারীসহ পাপুল কানেকশনে এ পর্যন্ত কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান ৩ এমপি, স্বরাষ্ট্র ও জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের ৭ শীর্ষ কর্তাসহ মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করেছে কুয়েতের সিআইডি। সবাই কড়া নজরদারিতে রয়েছেন। কুয়েতের মিডিয়াগুলো এমপি কাজী শহীদ পাপুলকে ‘মাফিয়া বস’ হিসেবে অবিহিত করেছে। ব্যবসা পেতে কুয়েতি কর্মকর্তাদের বিলাশবহুল ৫টি গাড়িসহ মিলিয়ন দিনার উপহার দিয়েছেন। আগে কুয়েতি পার্টনারের সঙ্গে ব্যবসা করলেও এ বছরে তিনি একজন মার্কিন ব্যবসায়ীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলেন। কুয়েতে আয় করা বেশিরভাগ অর্থই তিনি আমেরিকা পাঠিয়ে দেন।
এদিকে, এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এছাড়া দেশে থাকা তার স্ত্রী এমপি সেলিনা ইসলাম, কন্যা ও শ্যালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাচ্ছে দুদক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।