Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তামাক কর কাঠামো তামাক কোম্পানিকে লাভবান করবে

১৮টি তামাক বিরোধী সংগঠনের বিবৃতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ৫:৩৯ পিএম

২০২০-২১ অর্থ-বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপের প্রস্তাব তামাক কোম্পানিকে লাভবান করবে এবং সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব হারাবে পাশাপাশি তা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে দাবী করছে ১৮টি তামাক বিরোধী সংগঠন। শুক্রবার (১৯ জুন) গণমাধ্যমে প্রেরিত একটি সম্মিলিত বিবৃতিতে তারা এই দাবী করে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের লক্ষ্য হিসাবে ‘তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করলেও এই প্রস্তাব দিয়ে দুটি লক্ষ্যের একটিও অর্জন সম্ভব নয় বরং এটি উল্টো ফল বয়ে আনবে। মূল্য বৃদ্ধির ধরণ তামাক কোম্পানিকে লাভবান করবে এবং রাজস্ব ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবে সিগারেটের মূল্য স্তর না কমানো এবং তামাকজাত দ্রব্যের দাম আগের মত রাখা বা নামমাত্র বৃদ্ধি এর ব্যবহার কমাতে কোন অবদান রাখবে না। ক্রয় স্বামর্থ বৃদ্ধি ও মুল্যস্ফিতির তুলনায় দাম বৃদ্ধি অনেক কম হওয়ার তামাকের ব্যবহার বাড়বে যা দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন হুমকির মুখে ফেলবে। বিশেষ করে এই করোনা পরিস্থিতিতে তামাকের ব্যবহার বৃদ্ধি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। কারণ তামাকসেবীর করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি বলে বিবৃত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য গবেষকরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে প্রতি শলাকায় দাম বাড়বে মাত্র ২০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ অথচ একইসময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। সিগারেট ধূমপায়ীদের ৭২ শতাংশই নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। নিম্ন স্তরে এই সামান্য দাম বৃদ্ধি এবং মধ্যম স্তরের দাম অপরির্তিত রাখায় তা ধূমপানের অভ্যাস আরো বাড়বে এবং আয় বৃদ্ধির তুলনায় পণ্যটি সস্তা হয়ে যাওয়ায় কিশোর-তরুণরা ধ‚মপানে উৎসাহিত হবে। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তর সিগারেটের দাম যথাক্রমে মাত্র ৪ টাকা ও ৫ টাকা বৃদ্ধি একই ফল আনবে বরং এখানে কর হার বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে এবং তামাক কোম্পানির লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

প্রতি শলাকা বিড়ির দাম বেড়েছে মাত্র ১৬ পয়সা। এই বৃদ্ধি তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমাতে বা রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে কতটা অবদান রাখবে তা সহজেই অনুমেয়। বরং এখানেও কোম্পানির লাভ প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির প্যাকেটে ২ টাকা ১৬ পয়সা বাড়বে। পাশাপাশি জর্দার মূল্য বৃদ্ধি সন্তোষজনক হলেও গুলের মূল্য সামান্য বৃদ্ধি এবং পণ্য দটির ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ না করায় এখানেও উৎপাদনকারী কোস্পানির লাভ বাড়ছে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দায় ১ টাকা ৪০ পয়সা এবং গুলে ৭০ পয়সা।

সার্বিক বিবেচনায় তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানো বা রাজস্ব বৃদ্ধি নয় বরং এই বাজেট প্রস্তাব করার মাধ্যমে মঅর্থমন্ত্রী আরো একটি ‘তামাক কোম্পানীর লাভের বাজেট’ ঘোষণা করলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর সুপারিশ অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর নির্ধারণ, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ এবং সিগারেটের মূল্যস্তর চারটির পরিবর্তে দুইটি নির্ধারণ করা হলে ২০ লক্ষ ধুমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে ৬ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা হবে এবং প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

অন্যদিকে গত বছরের মত এবারের প্রস্তাবেও তামাক রপ্তানি উৎসাহিত করতে তামাক রপ্তানি শুল্ক শূন্য ভাগ রাখা হয়েছে। এর ফলে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাবে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বাধার সৃষ্টি করবে।

আমরা জানি করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারীর কারণে দেশ এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এই ক্ষতি পোষানোর জন্য সরকারের প্রয়োজন অতিরিক্ত রাজস্ব আয়। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্তে¡ও অতিরিক্ত রাজস্ব আয় এবং তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির ও করারোপের সুযোগ উপেক্ষা করা হয়েছে। যার ফলে মানুষ নজিরবিহীন স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যও বাধাগ্রস্ত হবে।

সম্মিলিতভাবে বিবৃতিটি প্রেরণ করে এইড ফাউন্ডেশন, আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বিসিসিপি, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), ঢাকা আহসানিয়া মিশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, প্রজ্ঞা, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র), তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, ডবিøউবিবি ট্রাস্ট ও ইপসা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ