পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে ৯ জন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, নিহত সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, কল্যাণপুরের হতাহত জঙ্গিরা গুলশান হামলাকারী গ্রুপেরই সদস্য। রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো তাদের। পুলিশের ভাষ্যমতে, সোমবার দিবাগত রাতে জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালাতে গেলে গুলি বিনিময় হয়। রাতভর পুলিশের অভিযানের প্রস্তুতিতে পুরো কল্যাণপুর এলাকায় ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ভয়ে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় ওই এলাকার মানুষ। কিন্তু সূর্য ওঠার আগে মাত্র ১ ঘন্টায় পুলিশের অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামক অভিযানে জঙ্গিরা ব্যর্থ হয়। পুলিশ জানায়, ওই আস্তানায় থাকা ১১ জঙ্গীর ৯ জন নিহত হলেও ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরজন পালিয়ে গেছে। অভিযানের পর র্যাব অফিস থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে তাজ মঞ্জিল নামে বাড়িটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। ভবনের ফ্লোরগুলোর ভাড়াটেদেরও নেওয়া হয়েছে পুলিশের জিম্মায়। পুলিশ জানায়, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুলিশ ওই ভবনের প্রবেশের সব রাস্তা ঘিরে রেখেছে। ঘটনার পর গতকাল কল্যাণপুর এলাকার সকল স্কুল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইভাবে বন্ধ রয়েছে ঘটনাস্থলের আশপাশের সকল দোকানপাট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এলাকায় বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠা। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত জঙ্গিদের বড় ধরনের কোনো নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়ে সফলভাবে তা নস্যাৎ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এতেই প্রমাণ হয় যে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে দক্ষতা অর্জন করেছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার রাতে মিরপুর থানা পুলিশ কল্যাণপুরের কয়েকটি মেসে অভিযান চালায়। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, ৫ নম্বর রোডে জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা বাসায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ওই বাসায় অভিযান শুরু করতে যায়। পুলিশ ৬ তলা ওই ভবনের তিন তলায় পৌঁছার পরই জঙ্গিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। পুলিশ তখন পাল্টা গুলি চালায়। এতে এক জঙ্গি নিহত হয়। এ সময় অপর এক জঙ্গি পাশের বাড়ির টিনের চালায় লাফিয়ে পড়ে পালানোর চেষ্টা করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে রাকিবুল হাসান রিগান (২৫) এবং আইএস সদস্য বলে দাবি করে। তার বাড়ি বগুড়ায়। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর সে গত এক বছর আগে বাড়ি থেকে আত্মগোপনে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে ভবনটির ৫ তলায় ১১ জন জঙ্গি রয়েছে বলে হাসান পুলিশকে তথ্য দেয়। এ সময় পুলিশ ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে আশপাশের এলাকাও ঘিরে ফেলা হয়। ভোর পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা কর্ডন করে রাখে। সূর্য ওঠার আগেই সোয়াত, র্যাব, ডিবি ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সহস্রাধিক সদস্যের অপারেশন স্টর্ম-২৬ পরিচালনা করে। এক ঘন্টার অপারেশন শেষে পুলিশ জানায়, ওই অপারেশনে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর পরই অপারেশন সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পুলিশ ওই ভবন ও আশপাশ থেকে বাড়িওয়ালাসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদিকে গ্রেফতারকৃত হাসানের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ৫ম তলার ওই ফ্ল্যাটে থাকা জঙ্গিরা হলো রবিন, সাব্বির, তাপস, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান ও ইকবাল। পুলিশের অভিযানে এরা সবাই নিহত হয়েছে।
ফেসবুকে নিহতদের ছবি
কল্যাণপুরের পুলিশের ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ এ নিহত ৯ জঙ্গির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাই তাদের ছবি ফেসবুকে ছেড়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নিহত জঙ্গিদের কেউ চিনতে পারলে তাদের নাম-পরিচয় ডিএমপির ফেসবুক পেজে ইনবক্সে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিএমপির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জানানো হয়, ‘ছবিতে প্রদর্শিত রাজধানীর কল্যাণপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাথে গুলিবিনিময়কালে নিহত জঙ্গি/সন্ত্রাসীদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা জানা থাকলে এই পেজের ইনবক্সে প্রদান করুন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।’
নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে ডিএমপি মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এ. এস. এম. হাফিজুর রহমান জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ইনবক্সে এখনো কারো পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ডিএমপি কমিশনারের সংবাদ সম্মেলন
অপারেশন স্টর্ম-২৬ শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিল নামের ওই ভবনে তল্লাশিকালে ৫ তলা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা বোমা নিক্ষেপ করে। তাৎক্ষণিক পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এরপর ডিসি মিরপুরের নেতৃত্বে ডিএমপি ফোর্স পুরো বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সন্ত্রাসীরা ভেতরে আল্লাহু আকবর ধ্বনি তুলে গুলি ও বোমা ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বাড়ির পেছন দিকে একচালা বাড়ির ওপরে দুজন জঙ্গি লাফ দিয়ে পড়ে এবং পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের গুলিতে হাসান নামে এক জঙ্গিকে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। পরে পুরো বিল্ডিং আমরা চারিদিক দিয়ে ঘিরে ফেলি। তারপর আমরা অভিযানের পরিকল্পনা করি। এরই মধ্যে আমাদের নবগঠিত কাউন্টার টেরোরিজমের সকল অফিসার, ডিএমপির বিশেষায়িত টিম, সোয়াত টিম রাত আড়াইটার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারপর তারা এলাকার অবস্থান, বিল্ডিংয়ের অবস্থানসহ সব দিক বিবেচনা করে একটি অভিযান পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে বিশেষায়িত সোয়াত টিমের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে এক ঘণ্টাব্যাপী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলিবিনিময় চলতে থাকে। সন্ত্রাসীরা পিস্তল, বোমা এবং লোকাল মেইড গ্রেনেড দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। পাল্টা গুলি বিনিময়কালে ঘটনাস্থলে ৯ জন জঙ্গি নিহত হয় এবং আমাদের একজন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ টি লোকাল গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া ৫ কেজি জেল বিস্ফোরক, ১৯টি ডিটিনেটর, ৪টি ৭ পয়েন্ট ৬২ রাইফেল, ২২ রাউন্ড গুলি, ৪টি পিস্তল, ৭টি ম্যাগজিন, তিনটি চাকু, ১২টি গেরিলা চাকু এবং আরবিতে আল্লাহু আকবর লেখা দুটি কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জঙ্গিদের সবারই বয়স ছিল ২০-২৫ বছরের মধ্যে। তাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত। তাদের পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল। জিন্সের প্যান্ট ছিল। একজন ব্যতীত বাকি সবার পরনে কেডস ছিল। কমিশনার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যা জানা যাচ্ছে, এই জঙ্গি দল গত ২০ জুন এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। এখানে তারা বিশেষ অভিযানের জন্য সবাই মিলিত হয়েছিল। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এই অভিযানটি ছিল ইতিহাসের অন্যতম সফল একটি অভিযান। যেখানে শতভাগ জঙ্গি নিশ্চিহ্ন হয়েছে এবং আমাদের পক্ষ থেকে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। শুধুমাত্র আমাদের একজন পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
বড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিরা দু-এক দিনের মধ্যে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল উল্লেখ করে গুলশানে হামলায় জড়িতদের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
রুটিন কাজের অংশ হিসেবে কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ অভিযানে সফলতার মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী জেএমবি সদস্যরা এ কাজ করেছে। জঙ্গিরা সফল হলে আইএস বলে ঘোষণা দিত। আসলে যারাই জেএমবি, তারাই আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, হরকাতুল জিহাদ। ওরা সরকারকে বিব্রত করতেই এ ধরনের কাজ করছে। জাহাজ বিল্ডিংয়ে যেসব কাগজপত্র, গোলাবারুদ পাওয়া গেছে তাতে দু-এক দিনের মধ্যে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল বলে ধারণা করেন মন্ত্রী।
পোশাক, অবস্থান ও গোলাবারুদ দেখে মনে করা হচ্ছে, গুলশান হামলার সঙ্গে তাদের লিংক রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা তথ্যে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি সম্পৃক্ততায় অনেককে আটক করা হয়েছে। অনেককে চিহ্নিত করেছি। আরো নিশ্চিত হয়ে জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে। আটক ও মৃত জঙ্গিদের শরীরে ড্রাগের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হবে। এদিকে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কী দিক-নির্দশনা দেয়া হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হবে।
‘জাহাজ বিল্ডিং’ ঘিরে কৌতূহল
রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাড়িটির নাম তাজ মঞ্জিল হলেও জাহাজ বিল্ডিং নামেই বেশি পরিচিত। বাড়িটির সম্মুখভাগ দেখতে অনেকটা জাহাজের মতো। পাঁচতলা এই ভবনের দোতলায় থাকেন বাড়িওয়ালা। তিন তলায় ফ্যামিলি ভাড়া দেয়া হয়। চার ও পাঁচতলায় মেস। ভবনটির প্রতিটি তলায় ৪টি করে ইউনিট রয়েছে। গত ১২ জুলাই ভবনটির পাঁচতলা ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। ছয়তলা এই ভবনটির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদ। গতকালের পর এ বাড়ি ঘিরে স্থানীয় সাধারণ মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। অনেকে দূর থেকেও দেখতে আসছেন বাড়িটিকে। আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকেও বাসিন্দারা উঁকি মেরে মেটাচ্ছেন কৌতূহল।
যা উদ্ধার করা হয়েছে
ডিএমপি কমিশনার জানান, ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি ১২টি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। জেল বিস্ফোরক পাঁচ কেজি, ডেটোনেটর ১৯টি, সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল চারটি, ২২ রাউন্ড গুলি, পিস্তল চারটি, ম্যাগজিন সাতটি, একটি তলোয়ার, তিনটি কমান্ডো চাকু, ১২টি গেরিলা চাকু, আরবিতে আল্লাহু আকবর লেখা দুটি কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে কাউন্টার টেরিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, জঙ্গিরা পুলিশের ওপর ১১টি গ্রেনেড ছুড়েছিল। এগুলো নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আরও কিছু জিহাদি বই, কালো পোশাক, কালো পতাকা ও আরবি ভাষায় লেখা ব্যানার উদ্ধার করেছে যৌথবাহিনী।
লাশ মর্গে
নিহত জঙ্গিদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নয়টি লাশ সেখানে পৌঁছায়। এর মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সে চারটি লাশ, দ্বিতীয়টিতে দুটি এবং তৃতীয় অ্যাম্বুলেন্সে তিনটি লাশ তোলা হয়। আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স এগুলোর পেছনে ছিল। মোট নয়টি লাশ ঢামেকে নেয়া হয়।
৯ জঙ্গির ময়নাতদন্ত আজ বুধবার
কল্যাণপুরের নিহত ৯ জঙ্গির ময়নাতদন্ত আজ বুধবার সম্পন্ন করা হবে বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি বলেন, জঙ্গিদের লাশ মর্গে আসার পরপরই আমরা ৯টি লাশ ভালো করে দেখি। লাশে গুলির চিহ্ন দেখতে পাই। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট আমাদের কাছে না আসায় ময়না তদন্ত করা যায়নি। বুধবার তিনজন ডাক্তারের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে।
এ সময় ঢাকা মেডিকেল ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস, ডা. কবির সোহেল উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান ডা. সোহেল মাহমুদ।
রাতেই পালিয়েছে ১০-১২ জঙ্গি
রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানার খোঁজে পুলিশের তল্লাশির আগেই ১০-১২ জন ‘জঙ্গি’ পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন এক বাসিন্দা। শহিদুল আলম বাদল নামে ওই বাসিন্দা জানান, অভিযান চালানো হয় যে বাসায় সেটির পাশেই তার বাসা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর শব্দ শুনতে পান। শব্দ শুনেই তিনি বাসার ছাদে যান। পাশের ওই বাসার ছাদ দিয়ে জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরা এক যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেন। এরপর নিচে তাকিয়ে দেখেন আরো ১০-১২ জনকে পালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, জঙ্গি আস্তানার ওই বাড়িটি অনেকটা গলির ভেতরে। আশপাশের বাসার সঙ্গে প্রায় লাগানো অবস্থায়। কল্যাণপুর সমাজ কল্যাণ সমিতির (উত্তরাঞ্চল) সিকিউরিটি ইনচার্জ আবুল কাসেম বলেন, রাত ১১টায় পুলিশ আসার পরে এক লোককে ব্যাগ হাতে নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেন। ইয়ং বয়সী ওই ছেলের হাতে শপিংব্যাগ ছিল। কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে উত্তরে সে বলে সামনেই যাচ্ছি। তার গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশকে জানাই। পুলিশ আসার পরে ওই ছেলেকে এলাকায় আর পাওয়া যায়নি।
বাড়ির মালিকের স্ত্রী-ছেলে গ্রেফতার
ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য না নেয়া ও পুলিশের কাছে তথ্য গোপন রাখার কারণে রাজধানীর কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বিল্ডিং’-এর মালিকের স্ত্রী মমতাজ পারভীন ও তার ছেলে মাজহারুল ইসলাম জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য না নেওয়া ও পুলিশের কাছে তথ্য গোপন রাখার কারণে ৫৪ ধারায় এই দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদ প্রবাসী। তার স্ত্রী ও সন্তান বাড়ির দোতলায় বসবাস করেন। গ্রেফতার দুজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে গতকাল দুপুরে ভবনটি থেকে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াসহ ৪২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিরপুর থানায় নিয়ে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জানা গেছে, বাড়ির মালিকের ছেলে জুয়েল ঈদের আগে দেশে ফিরে আসেন। তিনি আমেরিকান-বাংলাদেশি।
ঘটনাস্থলে থাকা রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, বাড়িটিতে এখন আর কেউ নেই। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সবাইকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। এ সময় তিনি আরো জানান, বাড়ির ভেতরে সিআইডির ক্রাইম সিন টিম কাজ করছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসাটি সিলগালা করে রাখা হবে।
নিহত জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ, নাম-ঠিকানা জানানোর আহ্বান
রাজধানীর কল্যাণপুরে যৌথ বাহিনীর হামলায় নিহত নয় জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একই সঙ্গে তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা জানাতে আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ডিএমপির ফেসবুক পেজে এসব ছবি প্রকাশ করা হয়।
ডিএমপির ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ছবিতে প্রদর্শিত আজ ২৬-৭-২০১৬ তারিখে রাজধানীর কল্যাণপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে নিহত জঙ্গি/সন্ত্রাসীদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা জানা থাকলে এই পেজের ইনবক্সে প্রদান করুন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছে।’
পুলিশ জানায়, গতকাল ভোরে কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স পরিচালনা করে যৌথ বাহিনী। এতে নয় জঙ্গি নিহত হয়। রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামের এক জঙ্গি আহত হয়। তাকে আটক করা হয়েছে। আটক জঙ্গি রাকিবুল হাসানের কাছ থেকে আটজনের নাম জেনেছে পুলিশ। তারা হলো- রবিন, ইমরান, অভি, আতিক, সোহান, ইকবাল, সাব্বির ও তাপস। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
জঙ্গিরা মেস ভাড়া নিয়েছিলেন শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীর পরিচয়ে
কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হওয়া জঙ্গিরা ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামের বাড়িটিতে মেস ভাড়া নিয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবীর পরিচয়ে। বাড়ি মালিক নিজের ফ্ল্যাটটি বাদে পুরো ভবনটিই মেস হিসেবে ভাড়া দেয়ায় জঙ্গিদেরও সমস্যা হয়নি মেস ভাড়া নিতে।
তবে আশপাশের বাসিন্দা এমনকি ওই ভবনের অন্যান্য তলার বাসিন্দারাও অপারেশনের আগে ঘুনাক্ষরেও টের পাননি এরা জঙ্গি গ্রুপের সদস্য।
সরাসরি সম্প্রচার করেনি টিভি চ্যানেলগুলো
কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান এবার সরাসরি সম্প্রচার করেনি দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় টেলিভিশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সমালোচনা সামনে আসে। অভিযানের সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিউজের শিরোনাম, প্রাপ্ত তথ্য ও বিভিন্ন অতিথি নিয়ে ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করেনি।
গুলশান হামলার পর অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনার সময় র্যাবের পক্ষ থেকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে সরাসরি সম্প্রচার না করার আহ্বান জানানো হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পুলিশের অভিযান সরাসরি সম্প্রচারের সমালোচনা করেন।
এদিকে গতকাল সকালে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের খবর পেয়ে টেলিভিশন, অনলাইন ও পত্রিকার সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়। ব্যারিকেড দিয়ে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষদের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই ভবনটির আশপাশে কোনো সাংবাদিককে থাকতে দেয়া হয়নি। সরিয়ে দেয়া হয়। সকালে একবার ৭নং সড়কে সাংবাদিকদের যেতে দেয় পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।