পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতারণা-মানবপাচার-অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের নানা অপকর্মের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ। কুয়েতের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক আরব টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গ্রেফতার বাংলাদেশি আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে শুধু অর্থ ও মানব পাচার নয়, তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে বিপুলসংখ্যক কর্মীর সঙ্গে প্রতারণার তদন্তও চলছে। এখন পর্যন্ত ১১ জন কর্মী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন।
আরব টাইমস অনলাইন জানিয়েছে কুয়েতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিলেন এমপি পাপুল। ফলে তার জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। এর আগে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বরত উপ-প্রধানমন্ত্রী টুইটারে দেশবাসীকে জানান, ‘সবচেয়ে বড় মানবপাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে’। কুয়েতের স্থানীয় পত্রিকাগুলো জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের পর দেশটির পুলিশ ৭ শীর্ষ কর্মকর্তাসহ তিন সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার তথ্য পায় সিআইডি। ওই কর্মকর্তারা ঘুষ এবং উপহারের বিনিময়ে পাপুলকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল।
সুত্রের বরাত দিয়ে আরব টাইমস জানিয়েছে, পাপুল এমপি স¤প্রতি বিভিন্ন দেশের কয়েকটি ব্যাংকে কয়েক লাখ কুয়েতি দিনার হস্তান্তর করেছেন। অর্থ ও মানবপাচারের মামলায় নাম উঠে আসার পর কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষও দেন তিনি। বিচারকমন্ডলী ১১ প্রবাসীর সাক্ষ্য শুনেছেন। তারা তাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে পাপুলের কঠোর শাস্তি চেয়েছেন। প্রতি বছর কুয়েতে তাদের অবস্থান নবায়ন করে নিতে এসব সাক্ষীর কাছ থেকে আসামিকে অর্থ প্রদান করতে হতো বলে তারা জানিয়েছেন।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে সিআইডি কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে। এরপর এমপি পাপুলকে আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নানাভাবে তাকে মুক্ত করার চেষ্টা করা হলেও সে দেশের কঠোর আইনের কারণে এখনো সম্ভব হয়নি।
কুয়েতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর এবং প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানব ও অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, এমন কয়েকশ’ ব্যক্তির তালিকা করেছে কুয়েত সরকার। সেই তালিকা ধরেই স¤প্রতি বিতর্কিত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ। সেই অভিযানেই গ্রেফতার হন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এমপি পাপুল।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দৈনিক আরব টাইমস, আরবি দৈনিক আল কাবাস, কুয়েতি টাইমসসহ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশি এই এমপির বিরুদ্ধে মানবপাচারে জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে। কুয়েত পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, চক্রটি ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে কুয়েতে নিয়েছিল। এমপি পাপুল তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন। এভাবে তিনি পাঁচ কোটি কুয়েতি দিনার পকেটে পোরেন; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
কুয়েতের আরবি দৈনিক আল রাই জানিয়েছে, পাপুলের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে পাচারের তথ্যও এসেছে কুয়েতের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। এ কারণেই নিবিড় তদন্তের স্বার্থে পাপুলকে তদন্তকালীন পুরো সময় আটক রাখা হবে।
এদিকে পাপুলের মাধ্যমে কুয়েত যাওয়া নিয়ে প্রতারণার শিকার প্রবাসীরা ফেসবুকে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তারা দেশেও এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। তারা পাপুলের এমপি পদ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। প্রবাসী সূত্রগুলো জানায়, কুয়েতে পাপুলের মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- মারাফিয়া কুয়েতিয়া গ্রুপ, মারাফিয়া কুয়েতিয়া প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, মারাফিয়া কুয়েতিয়া ট্রেডিং অ্যান্ড কনট্রাকটিং, মারাফিয়া সিটি লিংকস ট্রাভেল এজেন্ট, মারাফিয়া সিকিউরিটি অ্যান্ড আইটি সল্যুউশনস এবং মারাফিয়া ইন্টারন্যাশনাল মানি এক্সচেঞ্জ। দেশটির আইন অনুযায়ী আদালতে অর্থপাচার প্রমাণিত হলে ৭ বছরের সাজা হবে। সেই সাথে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।
কুয়েত প্রবাসী ভুক্তভোগীরা বলছেন, অবৈধ সম্পদ রক্ষার জন্যই পাপুলের দরকার ছিল কূটনৈতিক পাসপোর্টের। কুয়েতের আরবি দৈনিক আল রাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশি ধনাঢ্য ব্যক্তি’ পাপুল কুয়েতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি কুয়েতি দিনার (এক হাজার ৫১৮ কোটি টাকা) হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অপরাধ তদন্ত সংস্থা তথ্য পেয়েছে। এই অর্থেও একটা বড় অংশ তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে পাচার করেছেন।
কাজী পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম প্রথমে গ্রেফতার হওয়ার খবরের প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে তিনি স্বামী পাপুল এমপিকে ছাড়াতে সরকারের উপর মহলের তদবির শুরু করেন। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন পাপুলের স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকাকে চিঠি দিয়ে তাদের সম্পদ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রথমে ঘটনাটি নিয়ে দায়সারা মন্তব্য জানানো হয়নি, জানার চেস্টা হচ্ছে ইত্যাদি বললেও ঘটনার ডালপালা ছড়ানোর পর ‘লজ্জাজনক’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।