পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (৭৫) হৃদরোগ ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গত শনিবার রাতে বাসা থেকে হাসপাতালে নেয়া হলে রাত ১১.৪৫ মিনিটে রাজধানীর সিএমএইচ-এ মারা যান তিনি।
মারা যাবার পর গতকাল সকালে তার করোনা পজিটিভ থাকার রিপোর্ট আসে। এরপর বাদ আসর জানাজা শেষে তাঁর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কেকানিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। দীর্ঘদিন শহরের কলেজ রোডের যে বাসায় থেকে তিনি রাজনীতি করেছেন সেই বাসায়ও তাঁকে নেয়া হয়নি। এদিকে, একই দিনে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর মৃত্যু শোক নেমে এসেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরা পৃথক বার্তায় গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ এবং মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমদেনা জানিয়েছেন।
এছাড়াও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ শোক জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও শোক জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরম আস্থাভাজন ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তাঁর চিরবিদায়ে যেন একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। শিক্ষকতা থেকে রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর সাহচর্য থেকে তার কন্যা শেখ হাসিনার পরম আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। কওমী মাদরাসার স্বীকৃতি দেয়া, তাবলীগ জামায়াতের দুই পক্ষের দ্ব›দ্ব-রেশারেশি দূর করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৯ কন্যা, ১ পুত্র, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শিক্ষাজীবন শেষে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আব্দুল্লাহ। পরে তিনি অ্যাডভোকেট হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট এবং ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কোরান হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে যখন ছয় দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল, সেসময় এ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আব্দুল্লাহ। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আব্দুল্লাহ ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ সেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বিভিন্ন সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মো. আব্দুল্লাহ দীর্ঘ দিন যাবত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের সম্মানিত গভর্নর হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী সংসদীয় আসন ২১৭ তথা গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গীপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে যতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, শেখ আব্দুল্লাহ তার পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার সংসদীয় প্রতিনিধি হিসেবে সততা, নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।