Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেল-সড়কে বরাদ্দ বেড়ে কমেছে সেতুতে

যোগাযোগ খাত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। যা বিদায়ী বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দের চেয়ে ৫১৭ কোটি টাকা কম। প্রস্তাবিত বাজেটে দেখা যায়, সড়ক ও রেলে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে কমানো হয়েছে সেতুতে। করোনাভাইরাস সৃষ্ট ক্ষতি পোষাতে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বিপুল বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ জন্যে বরাবর বেশি বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমেছে। কমেছে যোগাযোগ খাতে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ২৯ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনা মহামারির মধ্যেও সড়ক খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬৮ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলো হচ্ছে-সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এর মধ্যে সওজের অধীনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক এবং দেড় কিলোমিটারের ছোট সেতু রয়েছে। বর্তমানে সওজের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে, দেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে সাইন–সংকেত ব্যবস্থার উন্নয়ন। বর্তমানে ঢাকা-উত্তরবঙ্গের পথে মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলমান আছে। ঢাকা-সলেট মহাসড়কও চারলেনে উন্নীত করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ডিটিসিএর অধীনে দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণ হচ্ছে ঢাকায়। ইতিমধ্যে ৪৪.৬৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২২ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে ঢাকায় আরও পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সড়ক বিভাগের অধীনে বিআরটিএ মূলত যানবাহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাঁরা গ্রাহক সেবা দিয়ে ব্যয়ের চেয়ে আয় করে বেশি। তবে এই বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়ন করতে নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন দাবি করে আসছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হচ্ছে সেতু বিভাগ। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য এই বিভাগ আলোচিত। সরকারের বাজেটে গত ছয় বছর ধরে বড় বরাদ্দ পেয়ে আসছে বিভাগটি। এবার সেতু বিভাগের জন্য ৭ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এই খাতের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দ কমেছে ৫৮৫ কোটি টাকা। অবশ্য বিদায়ী বাজেটে বরাদ্দের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা সংশোধিত বাজেটে কমানো হয়েছিল। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এই বিভাগে অনেকগুলো প্রকল্পই চলমান আছে। তবে পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প ছাড়া বাকিগুলোর তেমন অগ্রগতি নেই। এ জন্যেই প্রতিবারই বরাদ্দ করার অর্থের একটা বড় অংশ ফেরত যায়। এ জন্যেই করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট কিছুটা কমেছে।

এই বিভাগের অধীনে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় ৭৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ৩০টি স্প্যান বসেছে। এখন সেতুর সাড়ে ৪ হাজার মিটার দৃশ্যমাণ। আরও ১১টি স্প্যান বসালে পদ্মা নদীর এবার-ওপাড় জোড়া লাগবে। অবশ্য পুরো কাজ শেষ করতে রেললাইন বসানো, যানবাহন চলার সড়ক প্রস্তুতসহ নানা আনুসঙ্গিক কাজ করতে হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পুরো খরচই রাজস্ব খাত থেকে বহন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণকাজ অর্ধেক এগিয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীন সরকারের সঙ্গে জি টু জি চুক্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর বাইরে ঢাকা উড়াল সড়ক ও আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া উড়াল সড়কসহ দক্ষিণবঙ্গে বেশ কিছু সেতু নির্মাণের প্রকল্প আছে সেতু বিভাগের। তবে এসব প্রকল্পে গতি কম।

রেলপথ মন্ত্রণালয়
এবারের বাজেটে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৬ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বিদায়ী অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ৬১ কোটি টাকা বেশি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখন সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণ। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রথমবারের মতো রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পও সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের পুরোটা ডাবল লাইন করা, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধুর সেতুর পাশে একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করছে সরকার।

রেলের উন্নয়নে সরকার ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা খরচের কথা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের সব জেলায় রেলপথ যাবে। এ জন্যেই গত এক দশক ধরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে সরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেল-সড়ক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ