পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের স্টার প্লাস টেলিভিশনে ‘কৌণ বনেগা ক্রোড়পতি’ নামে একটি রিয়েলিটি গেম শো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। অমিতাভ বচ্চনের সঞ্চালনায় ওই শোতে অংশ নেয়া ক্রোড়পতি হওয়াদের কপাল খুলেছে টাকা পেয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে নিজে এমপি হওয়া এবং স্ত্রীকে এমপি পদ উপহার দেয়া ক্রোড়পতি সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের কোন জেলে রয়েছেন কে জানে!
হুন্ডি ব্যবসা, মানবপাচার ও অর্থপাচার চক্রের হোতা কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া ক্রোড়পতি হিসেবে পরিচিত লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের সহসাই মুক্তি মিলছে না। কুয়েতের মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার পাপুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন সে দেশের পাবলিক প্রসিকিউশন। এ খবর গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে কুয়েতের পত্রিকা আরব টাইমস। পত্রিকাটির খবরে বলা হয় আগামীকাল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মুদ্রা ও মানবপাচারে সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কুয়েতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী ৫ বাংলাদেশি। আদালতকে তারা জানান, কুয়েত আসার জন্য তারা পাপুলকে তিন হাজার কুয়েতি দিনার করে দিয়েছেন। এছাড়া প্রতি বছর আকামা নবায়নের জন্য দিয়েছেন ৩০০ দিনার বা তারও বেশি। এসব তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে পাপুলকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
লক্ষীপুর-২ আসনের এই এমপি এক বিষ্ময়কর রাজনীতিক। তিনি টাকার জোরে হঠাৎ রাজনীতিক হয়ে সংসদ সদস্য হন। একই সঙ্গে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করতে সক্ষম হন। পাপুলের এমপি হওয়া এবং স্ত্রীকে এমপি বানানোর কাহিনী আলাদিনের চেরাগের কাহিনীর মতোই। তার এমপি হওয়ার কিচ্ছাকাহিনী নিয়ে মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে।
দিল্লির সম্রাট শাহজাহান যেমন স্ত্রী মমতাজকে খুশি করতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর তীরে আগ্রায় তাজমহল তৈরি করেছেন; তেমনি স্ত্রীকে খুশি করতে পাপুল টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে দেশের আইন প্রণেতার পদ উপহার দিয়েছেন।
এর আগে গত ফেব্রæয়ারি মাসে অবৈধ ভিসা ব্যবসার দায়ে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েত সিআইডি রিপোর্ট করলে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় কুয়েতের পত্রিকা আরব টাইমস খবর দেয় বাংলাদেশের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে প্রতারণা ও মানবপাচারের দায়ে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারের খবর পেয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। অন্যান্য গণমাধ্যমে তখন খবর আসে ‘কুয়েত থেকে লাপাত্তা এমপি পাপুল।’ তখন ওই খবর মিথ্যা প্রচার করে পাপুল বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের মধ্যেই কুয়েত গিয়ে নিজের প্রভাব দেখাতেই গত ৯ মার্চ ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি সেখানে দম্ভ করেই বলেন, ‘আমি কাচের পাহাড় তৈরি করিনি, আমি পাথরের পাহাড় তৈরি করেছি। এটা ভাঙবে না, কেউ ভাঙতে পারবে না।’ মূলত টাকার বিনিময়ে নিজে এমপি হওয়া এবং পরবর্তীতে একই ভাবে স্ত্রীকে আইন প্রণেতার মতো বিশাল পদ উপহার দেয়ার আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি ফেসবুক লাইভে এভাবে দম্ভোক্তি করেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতো কুয়েতের রাজনীতিক ও প্রশাসনের লোকজন টাকার কাছে বিক্রি হননি। গত ৬ জুন শনিবার রাতে তিনি কুয়েত সিআইডি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অতপর তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। এ খবর শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে।
এমপি পাপুলের গ্রেফতার এবং মানবপাচারের কাহিনী বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশাসন যন্ত্র এখনো নীরবতা পালন করলেও দুর্নীতি দমন কমিশন লোক দেখানোর জন্য হলেও উদ্যোগ নিয়েছে। এমপি কাজী পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে চিঠি দিয়েছে। দুদকের বিশেষ দূত মারফত পাঠানো চিঠি গ্রহণ করেছেন পাপুলের স্ত্রী।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, পাপুল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন তাদের চিঠি দিয়েছেন। দুদক সূত্র জানায়, পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার বিস্তারিত নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পরিবর্তিত ও অপরিবর্তিত ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে।
তবে ল²ীপুর-২ আসনের এমপি কাজী পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম এখনো দাবি করছেন তার স্বামীকে কুয়েতের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। কিছু তথ্য নিতে তাকে নিয়ে গেছে মাত্র।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।