Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুয়েতে গ্রেফতার এমপি পাপুলের মুক্তি অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতের স্টার প্লাস টেলিভিশনে ‘কৌণ বনেগা ক্রোড়পতি’ নামে একটি রিয়েলিটি গেম শো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। অমিতাভ বচ্চনের সঞ্চালনায় ওই শোতে অংশ নেয়া ক্রোড়পতি হওয়াদের কপাল খুলেছে টাকা পেয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে টাকার বিনিময়ে নিজে এমপি হওয়া এবং স্ত্রীকে এমপি পদ উপহার দেয়া ক্রোড়পতি সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের কোন জেলে রয়েছেন কে জানে!

হুন্ডি ব্যবসা, মানবপাচার ও অর্থপাচার চক্রের হোতা কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া ক্রোড়পতি হিসেবে পরিচিত লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের সহসাই মুক্তি মিলছে না। কুয়েতের মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার পাপুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছেন সে দেশের পাবলিক প্রসিকিউশন। এ খবর গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে কুয়েতের পত্রিকা আরব টাইমস। পত্রিকাটির খবরে বলা হয় আগামীকাল তার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মুদ্রা ও মানবপাচারে সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কুয়েতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তারই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রবাসী ৫ বাংলাদেশি। আদালতকে তারা জানান, কুয়েত আসার জন্য তারা পাপুলকে তিন হাজার কুয়েতি দিনার করে দিয়েছেন। এছাড়া প্রতি বছর আকামা নবায়নের জন্য দিয়েছেন ৩০০ দিনার বা তারও বেশি। এসব তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর আগে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে পাপুলকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
লক্ষীপুর-২ আসনের এই এমপি এক বিষ্ময়কর রাজনীতিক। তিনি টাকার জোরে হঠাৎ রাজনীতিক হয়ে সংসদ সদস্য হন। একই সঙ্গে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করতে সক্ষম হন। পাপুলের এমপি হওয়া এবং স্ত্রীকে এমপি বানানোর কাহিনী আলাদিনের চেরাগের কাহিনীর মতোই। তার এমপি হওয়ার কিচ্ছাকাহিনী নিয়ে মিডিয়ায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে।
দিল্লির সম্রাট শাহজাহান যেমন স্ত্রী মমতাজকে খুশি করতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর তীরে আগ্রায় তাজমহল তৈরি করেছেন; তেমনি স্ত্রীকে খুশি করতে পাপুল টাকার বিনিময়ে স্ত্রীকে দেশের আইন প্রণেতার পদ উপহার দিয়েছেন।
এর আগে গত ফেব্রæয়ারি মাসে অবৈধ ভিসা ব্যবসার দায়ে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েত সিআইডি রিপোর্ট করলে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। সে সময় কুয়েতের পত্রিকা আরব টাইমস খবর দেয় বাংলাদেশের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে প্রতারণা ও মানবপাচারের দায়ে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারের খবর পেয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। অন্যান্য গণমাধ্যমে তখন খবর আসে ‘কুয়েত থেকে লাপাত্তা এমপি পাপুল।’ তখন ওই খবর মিথ্যা প্রচার করে পাপুল বিশ্বব্যাপী মরণঘাতী করোনাভাইরাসের মধ্যেই কুয়েত গিয়ে নিজের প্রভাব দেখাতেই গত ৯ মার্চ ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি সেখানে দম্ভ করেই বলেন, ‘আমি কাচের পাহাড় তৈরি করিনি, আমি পাথরের পাহাড় তৈরি করেছি। এটা ভাঙবে না, কেউ ভাঙতে পারবে না।’ মূলত টাকার বিনিময়ে নিজে এমপি হওয়া এবং পরবর্তীতে একই ভাবে স্ত্রীকে আইন প্রণেতার মতো বিশাল পদ উপহার দেয়ার আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি ফেসবুক লাইভে এভাবে দম্ভোক্তি করেন। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মতো কুয়েতের রাজনীতিক ও প্রশাসনের লোকজন টাকার কাছে বিক্রি হননি। গত ৬ জুন শনিবার রাতে তিনি কুয়েত সিআইডি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। অতপর তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। এ খবর শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পেয়েছে।
এমপি পাপুলের গ্রেফতার এবং মানবপাচারের কাহিনী বিষয়ে বাংলাদেশের প্রশাসন যন্ত্র এখনো নীরবতা পালন করলেও দুর্নীতি দমন কমিশন লোক দেখানোর জন্য হলেও উদ্যোগ নিয়েছে। এমপি কাজী পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে চিঠি দিয়েছে। দুদকের বিশেষ দূত মারফত পাঠানো চিঠি গ্রহণ করেছেন পাপুলের স্ত্রী।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, পাপুল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন তাদের চিঠি দিয়েছেন। দুদক সূত্র জানায়, পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার বিস্তারিত নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা, পরিবর্তিত ও অপরিবর্তিত ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে।
তবে ল²ীপুর-২ আসনের এমপি কাজী পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম এখনো দাবি করছেন তার স্বামীকে কুয়েতের পুলিশ গ্রেফতার করেনি। কিছু তথ্য নিতে তাকে নিয়ে গেছে মাত্র।

 



 

Show all comments
  • Peyar Ahmad ১৩ জুন, ২০২০, ১২:৩৮ এএম says : 0
    It's not he's false it's political failure our politics levels wher gone it's axempule mr.papul and mrs papul
    Total Reply(0) Reply
  • Abu Sayed ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    সোনার দেশের সোনার এমপি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে
    Total Reply(0) Reply
  • Swapon Sarowar ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    Good news
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    দয়া করে পড়ুন,আসলে লেখে সব কিছু বোঝানো যায় না, তবুও বলি ধরাটা খায়ছে পাপুল ২০১৬ সালের ভিসায়,কুয়েতে সবচেয়ে বর কন্ট্রাক্ট বলদিয়ার অর্থাত সিটি করপোরেশন এর আন্ডারে রোড ক্লিনার, কন্ট্রাকটা পাপুল সাহেব পাই এক বড় কুয়েতি মুদির(অফিসার) কে অনেক দামি ব্রান্ডের গাড়ি ঘুস দিয়ে, এই কন্ট্রাক্ট কে পাপুল সাহেবর লাভ হবে কম,কিন্তু তার পরও এতো দামি ব্রান্ডের গাড়ি দিয়ে কন্ট্রাক্ট ধরেছে এই কারনেই যে দুই হাজার ভিসা পাবে বিনা পয়সায়, সেই ভিসা বিক্রি করে হবে সে কোটি পতি,এর মধ্যে ছিলো অনেক গুলো জাল ভিসা,কুয়েত আসার পর অনেকের পতাকা / আকামা লাগেনি, কিছু লেগেছিল, এবার শুরু হলো বেতন লেবারের ৬০দিনার বলে নিয়ে এসে দেয় ৩০ দিনার, তাও আবার সময় মতো দেয় না, কথা বললেই দেয় হুমকি ধামকি মামলার ভয় দেশে পাঠানো ভয় এবং কি গায়েও হাত তোলে, তার বড় ধরনের গ্যাংক আছে এরা খুবই এক্টিভ,তারপর আকামা নবায়ন করার জন্য আবার ৪০০ দিনার দাবি করে, না দিলে নবায়ন করেনা, তখন সেই শ্রমিক অবৈধ হয়ে যায়,এভাবে তারা শ্রমিকের রক্ত চুষে দেশে হয়েছে দানবীর। শ্রমিকের পিট দেওয়ালে ঠেকার পর কিছু শ্রমিক আন্দোলন করলো সবাই না, কেননা ভয় ছিলো দেশে পাঠিয়ে দেবে, তখন কুয়েত সরকার জানলো বিষয়টা, তার পর থেকে শুরু যারা জবানবন্দি দিয়েছে তারা সবাই ১৬ সালের আসা,এটা দুই হাজার ভিসার হিসাব করছে কুয়েত সরকার, কিন্তু পাপুল ভিসা বিক্রি করে আসছে ৩০ বছর,। এবার একটা হিসাব দিয়ঃ-কুয়েতে যতো অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক আছে তার ৭৫% মারাফি,পাপুল সাহেবের কোম্পানির, একটা শ্রমিক আসে ৬/৭ লক্ষ টাকা দিয়ে, বেতন ৬০ দিনার, তাতে বাংলা টাকা ১৬ হাজার মতো,এক বছর পর আবার আকামা নবায়ন করার জন্য দিতে হয় ৪০০ দিনার তাতে বাংলা টাকা এক লক্ষ টাকার উপরে,। তাহলে একটা শ্রমিক কতো টাকায় আসলো এক বছরে কতো কামালো, এক বছর পরে আবার এতো টাকা কয় জন দিতে পারে, এই কারনেই সে অবৈধ হতে বাধ্য হয়।এভাবেই নিজের পকেট ভারি করে, দেশি গরীব দুখীর ভায়েদের জীবন যৌবন পরিবার ধংস করে দেই এই পাপুল।আরো অনেক বিষয় আছে যা লেখতে পারলাম না।এছাড়াও আছে কাজের সাইড পরিবর্তন করতে দিতে হয় মোটা অংকের ঘুস,শুনলে অবাক হয়ে যাবে সে কিন্তু বিনা পয়সায় শ্রমিক আনে,সেগুলো নেপাল ভারত শ্রীলঙ্কার সহ নানান দেশ থেকে, শুধু বাঙালি হলেই ৬/৭ লক্ষ টাকা। তার মতো অনেক কোম্পানি আছে বাংলাদেশী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সে সব কোম্পানির একই অবস্থা, এরা শুধু ভিসার ব্যাবসা করে, কাজ থাক বা না থাক, কে বৈধ আর কে অবৈধ, কে বাঁচল আর কে মরলো তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। আর কি বলবো দূতাবাসের কথা, মনে দুঃখ মনেই থাক। দোয়া করি ভালো থাক আমার সকল সহ যোদ্ধা প্রবাসী ভাই গুলো।রফিক কুয়ত
    Total Reply(0) Reply
  • Allah Is Always With Me ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    বুঝিনা আমি এদের কিছু ধরা খেলে এদের তথ্য প্রকাশ হয় তার আগে যে তথ্য প্রকাশ হয় নাকা
    Total Reply(0) Reply
  • Firoz Alam ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর
    Total Reply(0) Reply
  • Sohidul Lslam ১৩ জুন, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    ঠিক আছে আপনাদের যত দিন দরকার রিমান্ডে রাখেন?
    Total Reply(0) Reply
  • habib ১৩ জুন, ২০২০, ১০:১৩ এএম says : 0
    Awamluge parena emon kono kaz nai...
    Total Reply(0) Reply
  • SHAHED hossain ১৩ জুন, ২০২০, ১০:৫৪ পিএম says : 0
    Very very very good news আপনাদের যত দিন দরকার রিমান্ডে রাখেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমপি

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ