পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলপাড় হয়েছে। একাধিক মন্ত্রী তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ইনু তার বক্তব্য নিয়ে মন্ত্রিসভার সকল সদস্যের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা ও দুঃখপ্রকাশ করলেও সহকর্মীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বন্দুকের নল থেকে বের হওয়া গুলি আর মুখ থেকে বেরিয়ে যাওয়া কথা আর ফেরত আসে না”। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ওই বক্তব্য দিয়ে তিনি (তথ্যমন্ত্রী) নিজেই নিজেকে চোর বানিয়েছেন।” গত রোববার ঢাকায় পল্লী সহায়ক ফাউন্ডেশনের সম্মেলনে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে চুরির জন্য সংসদ সদস্যসহ আমলাদের দায়ী করে বক্তব্য দেয়ায় মন্ত্রিসভায় ক্ষোভের মুখে পড়েন ইনু। ‘বাংলাদেশ সামিট: টেকসই উন্নয়ন ২০১৬’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি তো এমপি, আমি জানি, টিআর কীভাবে চুরি হয়। সরকার ৩০০ টন দেয়, এর মধ্যে এমপি সাহেব আগে দেড়শ’ টন চুরি করে নেয়। তারপর অন্যরা ভাগ করে। সব এমপি করে না। তবে এমপিরা করেন।”
এদিকে মন্ত্রিসারপসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো সকলকে সতর্ক করেছেন। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বৈঠকে তিনি বলেন, আগস্ট মাসে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা আছে। শুলশানে হামলা হয়েছে, আর যে হামলার চেষ্টা হবে না সেটা ভাবলে চলবে না। নানা প্রকারে জঙ্গিরা হামলার চেষ্টা করতে পারে। সবাইকে চোখ-কান খোলা রেখে সতর্ক থাকতে হবে’। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদনের শুনানি একমাস পেছানোয় মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইনু ওই বক্তব্যের জন্য আরেক দফা দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন। ওই বক্তব্য নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর আসার পর রাতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইনু বলেন, আমি নিজে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দসহ সকল জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকভাবে সম্মান করি এবং সেই সম্মান অক্ষুণœ রয়েছে। তারপরও কেউ যদি অনভিপ্রেতভাবে দুঃখ পেয়ে থাকেন, সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে খবর ও তার দুঃখ প্রকাশের বিবৃতির অনুলিপি খামে করে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সব সদস্যের দেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ সদস্যদের নিয়ে কথা বলার প্রেক্ষিতে উনি (ইনু) বিবৃতি দিয়ে আগেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই বিবৃতির কপি সবাইকে দেয়া হয়েছে। এসব নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, মন্ত্রিসভার নিয়মিত এজেন্ডাভুক্ত আলোচনা শেষ হলে তথ্যমন্ত্রী নিজেই দুঃখ প্রকাশ করে লেখা বিবৃতিটি পড়ে শোনান। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তীঁর ছেড়ে দিলে এবং মুখের কথা বেরিয়ে গেলে ফিরে আসে না।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এ সময় তথ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে তিনি চুরি করেছেন এমন প্রমাণ দিতে পারলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।
প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, এভাবে সবাইকে চোর বানানো ঠিক হয়নি। ওই কথা বলে তিনি (ইনু) সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছেন।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, আমি ওইভাবে বলিনি’Ñ এমন বলার সুযোগ নেই। কারণ সংবাদ মাধ্যম বক্তব্যের রেকর্ড দেখালে তখন আর বলার কিছু থাকবে না।
ইনু সবাইকে চোর বানিয়েছেন, তাহলে উনিও খেয়েছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে ‘চুরির’ জন্য সংসদসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের দায়ী করে বক্তব্য দেয়ায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘উনি (ইনু) সবাইকে চোর বানিয়েছেন। সবাই খেলে উনিও খেয়েছেন।’ ‘তিনি তো (ইনু) সবাইকে গম চোর বানিয়েছেন। নিজেকেও বানিয়েছেন। তিনিই বলুন, তিনি কতো মণ গম চুরি করেছেন’। বৈঠকে এক অনির্ধারিত আলোচনায় ওই সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় অন্য মন্ত্রীরাও এর ব্যাখ্যা চান। পরিস্থিতি বুঝে দুঃখ প্রকাশ করেন হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি। বিএনপির আমলের চুরির কথা বলেছি। এ সময় প্রসঙ্গটি এসেছে। আমি বুঝতে পারিনি। আমি এর জন্য দুঃখিত’। ইনুর দুঃখ প্রকাশের পরও মন্ত্রীদের অনেকে বলেন, ‘আপনি বেখেয়ালে বলেননি। আপনি বুঝে-শুনেই বলেছেন। এর জন্য আপনাকে সংসদে বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে’। সহকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে তথ্যমন্ত্রী পরে আর কোনো কথা বলেননি বলে বৈঠকে উপস্থিত আরেকজন মন্ত্রী জানান।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে আবাসিক এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও জোরদার করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায়, গলির মধ্যে হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। ভালোভাবে দেখে খোঁজ-খবর নিয়ে এসব উচ্ছেদ করতে হবে।
শিপিং করপোরেশন আইনের খসড়া অনুমোদন
‘বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সামরিক শাসনামলে করা একটি অধ্যাদেশটির বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়া আইনটি বাংলায় প্রবর্তন করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।
১৯৭০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আইনটি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে ‘বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই আদেশের অনুবৃত্তিক্রমে বিভিন্ন সময়ে আইনটি সংশোধিত হয়েছে। সংশোধিত আইনগুলোকে একত্রিত করে ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষায় নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত হয়। নতুন আইনে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি জানিয়ে মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, অল্পকিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে শিপিং করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় রাখা হলেও সরকারের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বা অন্য জায়গায় করা যাবে বলেও আইনে উল্লেখ রয়েছে।
জাহাজ বা নৌ-যান অর্জন, ভাড়া করা, ভাড়া দেয়া, দখলে রাখা, হস্তান্তর করা, দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে করপোরেশনের কার্যপরিধির অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়িক লেনদেনসহ যেকোনো কাজে নিয়োজিত করা, জাহাজ নির্মাণ বা সংযোজন করা, জাহাজ ব্যবস্থাপনায় দেশ-বিদেশে বন্দরে শিপিং এজেন্ট নিয়োগ, ব্যাংক হিসাব খোলাসহ করপোরেশনের ১২টি কাজ পরিচালনার কথা বলা হয়েছে আইনে।
৭ থেকে ১৩ জন নিয়ে একটি পরিচালনা পর্ষদের কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, যার প্রধান হবেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী। আর সদস্য হিসেবে থাকবেন নৌ-পরিবহন সচিব, অর্থ বিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মর্যাদার কর্মকর্তা, করপোরেশনের এমডি, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ), নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) ও নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্যিক)। এর প্রধান নির্বাহী হবেন এমডি। করপোরেশনের ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের এবং ৪৯ শতাংশ বাইরে দেয়া থাকবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব। আর অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫০ কোটি টাকা। শেয়ার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবেন শেয়ার হোল্ডাররা।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার বেশি
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় গৃহীত ৯২টি সিদ্ধান্তের মধ্যে ৬৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ২০১৫ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১১টি বৈঠকে ৯২টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়িত সিদ্ধান্ত ৬৫টি (৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ) এবং বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্ত ২৭টি (২৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ)। এ সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত নীতি বা কর্মকৌশলের সংখ্যা দু’টি, অনুমোদিত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নয়টি, জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইনের সংখ্যা ২০টি। গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ১৩টি বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ৮৬টি। এর মধ্যে বাস্তবায়িত সিদ্ধান্ত ৪৪টি (৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ), বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্ত ২৪টি (৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ), অনুমোদিত নীতি বা কর্মকৌশল দু’টি, অনুমোদিত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক নয়টি এবং সংসদে পাসকৃত আইনের সংখ্যা তিনটি। মন্ত্রিসভায় প্রতি তিন মাস পর পর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।