Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইনুর বক্তব্য নিয়ে সংসদে হৈ-চৈ ক্ষমা চাইলেন তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : টিআর-কাবিখার বরাদ্দে এমপিদের চুরি নিয়ে মন্তব্য করায় সংসদ অধিবেশনে তোপের মুখে পড়েন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল সোমবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর এ নিয়ে সংসদে তুমুল হৈ-চৈ হট্টগোল শুরু করেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সুযোগ নিয়ে তারা ওই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। জবাবে মন্ত্রী তার বক্তব্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ করেন। এতেও এমপিরা শান্ত না হলে তথ্যমন্ত্রী তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে অধিবেশনের শুরু থেকে উত্তেজনা চলছিল। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে ফ্লোর চাইলেও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পরে সময় দেওয়ার কথা জানান। মাগরিবের নামাজের বিরতির সময় এ নিয়ে স্পিকারের দপ্তরের নানা দেন-দরবার চলে। যে কারণে ২০ মিনিটের নামাজের বিরতি দেওয়া হলেও অধিবেশন শুরু হয় প্রায় এক ঘণ্টা পর।
চলমান কার্যক্রম শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলার সুযোগ দেন। শুরুতেই বক্তব্য রাখেন, সরকারি দলের এমপি সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরে জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। এরপর অনেকে ফ্লোর চাইলে স্পিকার তাদের না দিয়ে তথ্যমন্ত্রীকে ফ্লোর দেন।
এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করেন। এর পরেও এমপিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি সংসদ সদস্যদের তীব্র ক্ষোভ ও হৈ-চৈ-এর মধ্যে ফ্লোর নিয়ে বলেন, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে সেটি অনভিপ্রেত ছিল। সেজন্য আমি সকল সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। এরপরও সংসদ সদস্যরা না থামলে তিনি আবারো বলেন, ওই বক্তব্যের জন্য আমি ক্ষমা চাইছি।
এর আগে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সকল এমপিদের কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। তথ্যমন্ত্রীর এলাকায় টিআর ও খাবিখার কী কী কাজ হয়েছে তা তদন্তেরও দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সংসদের সাড়ে তিনশ’ সংসদ সদস্যই চোর, আর একমাত্র সাধু হচ্ছেন আমাদের তথ্যমন্ত্রী। সারা দেশে এতো উন্নয়ন কী বাতাসে হচ্ছে? তথ্যমন্ত্রী কী ম্যাসেজ জাতিকে দিতে চাচ্ছেন? হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যে ক্ষমার অযোগ্য। এই সংসদের প্রতিটি সদস্যকে তথ্যমন্ত্রী অপমান করেছেন। এই সংসদে দাঁড়িয়ে উনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, তথ্যমন্ত্রী সবাইকে চোর বানাতে পারেন না। উনি যা বলেছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রীরা কেউ-ই সেই অপবাদ থেকে বাদ পড়েন না। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, দুদকসহ তথ্যমন্ত্রী সবাই মিলে আমার এলাকা তদন্ত করুন। এক টাকার অনিয়ম হলে আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করবো। তবে তথ্যমন্ত্রীর এলাকারও তদন্ত করা উচিত। তথ্যমন্ত্রী সবারই ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন, উনার বিবেকের তাড়নায় তথ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।
তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের মুখে ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী প্রথমে তাঁর বক্তব্যে প্রত্যাহার এবং দুঃখ প্রকাশ করলেও এমপিদের শান্ত করতে ব্যর্থ হন। এ সময় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ আসনের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানান। এরপরও সংসদ সদস্যরা একযোগে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে স্পিকার বলেন, তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখা দিয়েছেন এবং প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। এরপরও আপনারা কী চান তা আমাকে বুঝতে হবে। এ সময় জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশ ক’জন সংসদ সদস্য মাইক ছাড়াই চিৎকার করে বলতে থাকেন- মাননীয় স্পিকার, তথ্যমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আমরা শান্ত হব না। তাকে ক্ষমা চাইতেই হবে।
এরপর দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যের জন্য এমপিদের সামনে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ সময় বলেন, গত রোববার দুপুরে রাজধানীতে পল্লী কর্মসংস্থান সহায়তা ফাউন্ডেশনের একটি আলোচনা সভায় টিআর ও কাবিখা নিয়ে আমার একটি মন্তব্যে নিয়ে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এই মন্তব্যে কেউ মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এ ব্যাপারে রোববার রাতেই আমি একটি বিবৃতি দিয়েছি। আসলে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে টিআর ও কাবিখা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরতে গিয়ে আমি সম্প্রতি সময়ে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু দুর্নীতির কথা বলেছি। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করে কিছু বলিনি।
এ সময় সংসদ সদস্যরা ‘নো নো, আপনি বলেছেন’ বলে প্রতিবাদ করতে থাকলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে আমার বক্তব্যে আংশিকভাবে প্রচার হয়েছে, পুরোটা প্রচার হয়নি। তবে আমি একজন এমপি হয়ে অন্য সব এমপিকে আন্তরিকভাবে সম্মান করি এবং তা অব্যাহত আছে। তাই আমার বক্তব্যে জনপ্রতিনিধিরা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাকে দুঃখিত। আমি ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে আমার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য এসেছে, সেজন্য আমি ক্ষমা চাইছি, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইনুর বক্তব্য নিয়ে সংসদে হৈ-চৈ ক্ষমা চাইলেন তথ্যমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ