Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলে গ্রাহকদের আস্থা হারাচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুই ফোন কোম্পানি

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গ্রাহক সংখ্যা তলানিতে, পরিস্থিতি উত্তরণে পদক্ষেপ নেই
নাছিম উল আলম : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় দুুটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা। বিটিসিএল ও টেলিটক ক্রমেই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে বলেও অভিযোগ এর গ্রাহকদের।
এর মধ্যে টেলিটক ন্যূনতম সেবা প্রদান দূরের কথা, তাদের কথিত সেবা ক্রমেই প্রতারণার পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। আর বিটিসিএল লাগাতার গ্রাহক হারিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলে। দীর্ঘদিনের পুরনো যন্ত্রপাতিসহ যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নেটওয়ার্ক সমস্যায় সরকারি সেলফোন কোম্পানি টেলিটকের গ্রাহকরা চরম বিড়ম্বনায় ক্রমেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় ল্যান্ডফোন কোম্পানি বিটিসিএলের যুগোপযোগী সেবা প্রদানের অভাবসহ নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতায় গ্রাহকসংখ্যা ক্রমেই তলানিতে ঠেকছে। গত কয়েক বছরে বরিশাল অঞ্চলে সরকারি এ ল্যান্ডফোন কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়ে ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশে ঠেকেছে। ফলে নিকট অতীতের লাভজনক এ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
বিশাল সম্ভবনাসহ গ্রাহকদের আশায় নির্ভর করে ২০০৫ সালে দেশে প্রথম সরকারি সেলফোন কোম্পানি টেলিটক প্রতিষ্ঠার সময় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবগুলো জেলা ও বেশিরভাগ উপজেলা সদরগুলোতে নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীকালে তার প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণসহ বিদ্যমান নেটওয়ার্কসমূহ সংরক্ষণ এবং আধুনিকায়ন স্থবির হয়ে পরে। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে টেলিটকের দুর্বল ও বিপন্ন নেটওয়ার্ক ইতোমধ্যে চরম দুর্ভোগে ফেলছে গ্রাহকদের। এমনকি দেশের অনেক এলাকার বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে বরিশাল অঞ্চলে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করায় ইতোমধ্যে তা ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে চরম বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে সাম্প্রতিককালে দক্ষিণাঞ্চলে গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখতে পারছে না সরকারি এ সেলফোন কোম্পানিটি।
এখনো দক্ষিণাঞ্চলের শুধু জেলা সদরেই ৩-জি সেবা সীমিত টেলিটকের। বরিশালসহ বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় এ পর্যন্ত টেলিটকের প্রায় সাড়ে ৩শ বিটিএস স্থাপন করা হলেও এর মধ্যে ৩-জি নেটওয়ার্কের সুবিধা রয়েছে মাত্র ৪৭টিতে। আর এ সাড়ে ৩শ বিটিএসের প্রায় সবগুলোর যন্ত্রপাতিই অনেক পুরনো ও বাতিল পর্যায়ে। এসব পুরনো যন্ত্রপাতি সামান্য সমস্যাতেই গ্রাহকদের দুর্ভোগে ফেলছে। বেশিরভাগ বিটিএসের ব্যাটারি কর্মক্ষমতা হারানোয় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সাথেই পুরো নেটওয়ার্কই বন্ধ হয়ে টেলিযোগাযোগ বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের মতে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দু লাখের ওপরে। তবে এখনো এ অঞ্চলের কয়েকটি উপজেলা সদরেও টেলিটকের নেটওয়ার্ক পৌঁছেনি। গ্রামাঞ্চলের প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু খোদ বরিশাল বিভাগীয় সদরেই টেলিটকের ২-জি এবং ৩-জি নেটওয়ার্কের সমস্যা প্রকট। একপেশে কল ড্রপ হওয়া নিয়মিত বিষয়। বেশিরভাগ সময়ই গ্রাহকদের অভিযোগ ও পরমর্শকে আমলে না নেয়ারও অভিযোগও রয়েছে টেলিটক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নগরীর অনেক বিটিএসের পাশে দাঁড়িয়েও সিগন্যাল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে টেলিটক গ্রাহকদের।
আর মাসের পর মাস এ বিড়ম্বনা অব্যাহত থাকলেও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেরও তেমন কোনো লক্ষণ নেই।
তবে এসব বিষয় নিয়ে বরিশাল অঞ্চলের টেলিটকের ব্যবস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, সমস্যা কিছু আছে তা ঠিক। কিন্তু তা খুব বড় করে দেখানোর কিছু নেই। পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা চলছে। বরিশাল অঞ্চলের সমস্যা ও গ্রাহকদের আরো ভালো সেবা দেয়ার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান তিনি।
এদিকে রাষ্ট্রীয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলের গ্রাহকসংখ্যা গত কয়েক বছরে দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় প্রায় ৪২ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় এ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানটির এক্সেঞ্জগুলোতে বর্তমানে সংযোগ ১৫ হাজারেরও নিচে। গ্রাহকদের আস্থা হারোনোর পাশাপাশি নানা অব্যবস্থাপনায় গত কয়েক বছরে বিটিসিএল দুই-তৃতীয়াংশ গ্রাহক হারিয়েছে। পাশাপাশি সেলফোনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে বিটিসিএল আজ পর্যন্ত তার গ্রাহকদের জন্য ওয়ারলেস ফোনের ব্যবস্থা না করতে পারায় নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ অব্যাহত রাখতে পারছে না।
বরিশাল মহানগরীর সাড়ে ১২হাজার ধারন ক্ষমতার ৩টি টেলিফোন এক্সেঞ্জে এখন গ্রাহকসংখ্যা ৫ হাজারে হ্রাস পেলেও সচল টেলিফোনের সংখ্যা আরো অনেক কম। অনেক টেলিফোনই মাসের পর মাস বিকল থাকলেও তার খোঁজ রাখেন না কেউ। সম্প্রতিককালে দেশব্যাপী ভূগর্ভস্থ অপিটক্যাল ফাইবার কাটা পড়ার প্রতিযোগিতায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের ইন্টারেনটসহ পুরো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাই ঘন ঘন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কারণেও বিটিসিএলের প্রতি এ অঞ্চলের সাধারণ গ্রাহকরা আর কোনো আস্থা রাখতে পারছেন না।
অপরদিকে বরিশাল ও পটুয়াখালী টেলিকম বিভাগসহ বরিশালের কেরিয়ার অ্যান্ড ওয়ারলেস ডিভিশন এবং উপজেলা টেলিকম ডিভিশনগুলোতে নি¤œপর্যায় থেকে উচ্চপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশলীদের অনেক পদ শূন্য বছরের পর বছর। বিটিসিএল গঠিত হওয়ার পরে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও কোম্পানিটির সার্বিক অবনতি ক্রমেই এর অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলছে বলেও অভিযোগ ওয়াকিবহাল মহলের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণাঞ্চলে গ্রাহকদের আস্থা হারাচ্ছে রাষ্ট্রীয় দুই ফোন কোম্পানি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ