ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মাহমুদ ইলাহী মন্ডল
তেরেসা মে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পরপরই নতুন কনজারভেটিভ নেত্রী তেরেসা মে রাণী এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীত্বের নিয়োগ পান। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্রেক্সিটপন্থী তিনজন ঝানু রাজনীতিককে পেছনে ফেলে তেরেসা মে খুব দ্রুত ক্ষমতার শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে যান। লৌহমানবী বলে খ্যাত প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচারের পর ব্রিটেন দ্বিতীয়বারের মতো আরেকজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী পেল। তার মধ্যে অনেকটা মার্গারেট থেচারেরই প্রতিবিম্ব দেখা যায়। প্র¤œ উঠেছে, এই কনজারভেটিভ নেত্রী যেভাবে দ্রুত ক্ষমতায় আরোহণ করলেন তিনি কি তত দ্রুতই তার সামনে আসা ব্রিটেনের একের পর এক সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবেন? সম্ভবত না। কারণ ব্রিটেনের সামনে এখন দীর্ঘ অমসৃণ পথ। এ কথা সত্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পর ব্রিটেনের রাজনীতি প্রচ- ধাক্কা খেয়েছে। রীতিমত ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়েছে। একই দলের মধ্যে কেউ ব্রেক্সিটপন্থী,আবার কেউবা বিপক্ষে। ব্রিটিশ রাজনীতি এ রকম ধাক্কা সম্ভবত এর আগে আর কখনো খায়নি। মাঝখান থেকে ক্যামেরনকে গদিটা ছাড়তে হলো। কিন্তু সব কিছুর পর জঞ্জালটা এবার সরাতে হবে তেরেসা মেকেই। ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটা সমাপ্ত করা, তাদের সাথে সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ, ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সেই সাথে অর্থনীতিকে ধরে রাখা তেরেসার সামনে সত্যিই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে বাইরে থেকে আসা অভিবাসন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে তেরেসাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্রিটেন এখন একাকী কিভাবে চলবে, কিভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে, তেরেসা মেকে সেই সিদ্ধান্তটি আগে নিতে হবে। কারণ পররাষ্ট্রনীতি একটি দেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ায় প্রধান স্তম্ভ। তেরেসা মে যত দ্রুত সেই জট খুলতে পারবেন তার জন্য ততই মঙ্গল।
ব্রিটেনের জনগণ অনেক দেরি হলেও একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত গণভোটে তারা আর রাখঢাক না করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সুস্পষ্ট রায়টি দিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে ব্রিটেন, ব্রিটেনই। তারা এক সময় সমগ্র ওয়ার্ল্ডই শাসন করেছেন এবং তারা কারো আন্ডারে থাকতে রাজি না। যদিও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনেক হেনস্থা হতে হয়েছে আর সে জন্যই এমন একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে ব্রিটিশ জনগণকে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। মূলত সেজন্যই ব্রিটেনের এই বেরিয়ে আসা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো বটেই সারা বিশ্বেই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। ব্রিটেনের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে, ব্রিটেন ভেঙ্গে পড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলেই কি তাই?
প্রশ্ন হলো, ব্রিটেন এই সিদ্ধান্ত নিল কেন? আমরা জানি ২৮ সদস্যবিশিষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েক দশক আগে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯৯৩ সালে আমি একটি জাতীয় দৈনিক ‘মাসট্রিখট চুক্তি : অখ- ইউরোপের স্বপ্ন’ নামে একটি লেখা লিখেছিলাম। ঐ লেখায় ইইউয়ের দেশগুলোর একটি অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা চালু, দেশগুলোর বাণিজ্যিক সমঝোতা এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিশদ বলেছিরাম। সেখানে প্র¤œ ছিল, ভবিষ্যতে এই জোটটি যে স্বপ্ন দেখা শুরু করে যাত্রা করেছে সেই স্বপ্নটা বাস্তবায়িত হবে কিনা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসে দেখা যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজ পর্যন্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা দাঁড় করতে পারেনি। পারস্পরিক অবিশ্বাস, সমঝোতার অভাব এবং সেই সাথে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এক প্রকার ধনী-গরীব বৈষম্য প্রবলভাবে মাথাচাড়া দেয়ায় যে স্বপ্ন একদা তারা দেখেছিল আজ তাদের সেই স্বপ্নে চিড় ধরেছে। এখানে ব্রিটেন কোনো ফ্যাক্টর নায়। ফ্যাক্টর ইইউ নিজেই। এইতো কিছুদিন আগেও গ্রিসকে নিয়ে অনেক তোলপাড়, অনেক নাটক হলো। শেষ পর্যন্ত ঋণ দিয়েই গ্রিসকে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা ঠেকানো হলো। নয়তো গ্রিসই হতো ইইউ থেকে বেরিয়ে আসা প্রথম দেশ। আসল ব্যাপারটি হলো অন্যখানে। আর সেটি হলো ফ্রান্স এবং জার্মানী। এই দুটি দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বটা নিয়েছে। যেটা অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভালো চোখে দেখছে না। এই দুটি দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ধনী হওয়ার সুবাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বটা নিয়েছে। অর্থাৎ দুজনে যা বলবে তাই হবে। বাকি ২৬টি দেশ তা-ই মেনে চলবে বা চলতে বাধ্য হবে। ফ্রান্স ও জার্মানীর এই যে মনোভাব মূলত এই মনোভাবই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আজকের দুরবস্থার জন্য দায়ী। ব্রিটেনের জনগণ তাদের এই কর্তৃত্বই বা মানবে কেন? একথা সত্য ব্রিটেন আজ অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়াতেই ফ্রান্স কিংবা জার্মানীর সাথে যেমন পেরে উঠছিল না তেমনি ওই জোট থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতেও তাদের এই দীর্ঘ সময় লেগেছে। আর ব্রেক্সিট গণভোটে জনগণ একেবারে ছক্কা মেরে দিয়েছে। সেখানে কেউ কিছু বলার থাকবে না বা কেউ বাধাও দিতে পারবে না। গত নির্বাচনে ব্রিটিশ জনগণ ক্যামেরনকে ভোট দিয়ে যে ভুলটা করেছিল যার গচ্ছা গত এক বছরে তাদের দিতে হয়েছে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়েই যে ব্রিটেনের সাম্প্রতিক রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছিল সেখানে লেবার পার্টিই হোক আর কানজারভেটিভ পার্টিই হোক সেটা বড় কথা হয়। আসল কথা ব্রিটেনের জনগণের অধিকার। আর সেজন্যেই তারা কারো সাথে আপোষ করেনি। পরিশেষে ছোট্ট একটি কথা। আর তা হলো, প্রতিটি রাষ্ট্রই যেমন তার অর্থনীতি নিয়ে ভাবে- ব্রিটেনও তাই ভাববে। এখানে ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও তার সম্পর্কের অবনতিরও তেমন কিছুই নেই। নিজ দেশের চিন্তা ব্রিটিশ জনগণই করবে। তবে ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অন্য কোনো দেশও বেরিয়ে যায় কিনা কিংবা নিজ নিজ দেশে ব্রিটেনের মতো গণভোটের ব্যবস্থা করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। সব শেষে আসি আবার তেরেসার বিষয়ে। তার সামনে এখন অপেক্ষা করছে দীর্ঘ পথ যা তাকে পাড়ি দিতে হবে।
লেখক: কবি ও সাবেক কর্মী, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি), ঢাকা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।