Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযোদ্ধা শিরীন বানু মিতির চির বিদায়

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাহনাজ পলি

মুক্তিযোদ্ধা ও নারী নেত্রী শিরীন বানু মিতিল (৬৫) গত বুধবার মধ্যরাতে হƒদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ গৌরবোজ্জ্বল কর্মময় জীবন ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সাহসী কর্মকা-ে তার অবদান অবিস্মরণীয়। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। শিরীন বানু মিতিল ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনায় খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ও মা সেলিনা বানু দম্পতির ঘরে জন্ম নেন। মা পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি ছিলেন, বাবা ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়ায় ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন। স্কুলজীবনেই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন শিরীন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭০-৭৩ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদিকা ছিলেন।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদারদের আক্রমণ শুরু হলে ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। সেই যুদ্ধে তিনি বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষ বেশে অংশ নেন। পরদিন পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ পাক সেনার সঙ্গে জনতার তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ পাক সেনা নিহত এবং দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৯ এপ্রিল নগরবাড়ীতে যুদ্ধের সময় পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর ভারতের স্টেটসম্যান পত্রিকায় তার ছবিসহ পুরুষবেশে যুদ্ধ করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সেই বেশে আর যুদ্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাতে তিনি দমেননি, পাবনা শহর পাকিস্তানি সেনারা দখলে নিলে ২০ এপ্রিল তিনি সীমানা পেরিয়ে ভারতে যান। সেখানে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত নারীদের একমাত্র প্রশিক্ষণ শিবির ‘গোবরা ক্যাম্পে’ যোগ দেন। পরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে পরিচালিত ৯ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে সে সময়ের সোভিয়েত রাশিয়ায় পড়তে যান। সেখানকার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি অব রাশিয়ায় পড়া শেষে ১৯৮০ সালে দেশে ফেরেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালে মাসুদুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন।
এই মহীয়সী নারীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ গত শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেয়া হয়। তার দীর্ঘজীবনের সতীর্থ বন্ধু, স্বজনরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানাতে আসা নেতারা শিরীন বানু মিতিলের দীর্ঘ গৌরবোজ্জ্বল কর্মময় জীবন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সাহসী কর্মকা-ের স্মৃতিচারণ করেন। পাঠ্যপুস্তকে তার জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশী কবীর, নারীনেত্রী শিরিন আকতার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী সাঈদা খানমসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নারী আন্দোলনের নেতাকর্মী ও মিতিলের স্বজনরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুক্তিযোদ্ধা শিরীন বানু মিতির চির বিদায়
আরও পড়ুন