পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি বাড়ির আশপাশে বা পেছনের জঙ্গলে বড় অযত্ম আর অবহেলায় জন্ম নেয়। অথচ জাতীয় এই ফলটির প্রতি একটু নজর দিলে এ থেকে বছরে কোটি কোটি ডলার আয় হতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো পুষ্টিকর এই ফলটিকে গোশতের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে।
পশ্চিমা ভোক্তারা সমাদর করে কাঁঠালের নাম দিয়েছেন ‘ভেজিটেবল মিট’। প্রতিবেশি দেশ ভারত এই ভেজিটেবল মিট ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি করে প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি ডলার আয় করছে। এ বিষয়ে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বলছে, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তার অভাবে কাঁঠালকে মানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করে সুপার ফুড হিসাবে বিদেশে রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী দুই এক বছরের মধ্যে সুপার ফুড হিসাবে বিদেশে কাঁঠাল রফতানি সম্ভব হবে।
সারা বিশ্বে বছরে ৩৭ লাখ টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। ভারতে সবচেয়ে বেশি ১৮ লাখ টন কাঁঠাল হয়। বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। বছরে ১০ লাখ টন উৎপন্ন হয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে অন্যতম সেরা এই ফলের আমদানি খুব দ্রুত হারে বাড়াচ্ছে চীন। জাপান, মালয়েশিয়ার মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কাঁঠাল আমদানির দিকে ঝুঁকছে। তবে হতাশার বিষয় হলো বাংলাদেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে সবজি ও ফল রফতানি।
সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ ফল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রফতানি হয়। মোট রফতানির ৭২ শতাংশ হয় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। আর মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় সউদী আরবে। অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় যুক্তরাজ্যে। বিশ্বে ফল রফতানির দুই ধরনের বাজার আছে। এগুলো হচ্ছে ইথেনিক ও সুপার বাজার।
বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশিরা বসবাস করেন, তারাই ফল ও শাকসবজির বড় ক্রেতা। এ বাজারকে বলা হয় ইথেনিক। বাংলাদেশের ফল ও সবজির বাজার মূলত ইথেনিকভিত্তিক। আর বিদেশি ক্রেতাদের বাজারকে বলা হয় সুপার। তবে বাংলাদেশের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ গুণগত মান ঠিক রেখে সুপার বাজারে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
গাজীপুর উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্রের (ফল বিভাগ) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের সুপার বাজারে কাঁঠাল রফতানির লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। সারা বছরই যাতে কাঁঠাল উৎপাদন হয় এ জন্য তিন জাতের কাঁঠাল নিয়ে কাজ চলছে। এগুলো বারি-১ কাঁঠাল, বারি-২ কাঁঠাল ও বারি-৩ কাঁঠাল। বারি-১ মৌসুমি কাঁঠাল। এটা মূলত মে থেকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত হবে। বারি-২ অমৌসুমী কাঁঠাল। এটা জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত হবে। আর বারি-৩ মূলত বারমাসি কাঁঠাল। এ ছাড়া কাঁচা কাঁঠাল সুপার ফুড হিসাবে প্রক্রিয়াজাত করার উন্নত প্রযুক্তির যে অভাব ছিল তাও দূর করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী এক দুই বছরের মধ্যে সুপার বাজারে আমরা কাঁঠাল রফতানি করতে পারবো। গত অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য ইথেনিক বাজারে বাংলাদেশ ১ হাজার ৩১২ টন কাঁঠাল রপ্তানি করে।
কাঁঠাল রফতানি বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পাকা ও কাঁচা উভয় রকমের কাঁঠাল রফতানি করা সম্ভব। বর্তমান বিশ্বে কাঁঠালের বাজার অনেক বিস্তৃত। আমেরিকা, ইউরোপের অনেক দেশেই কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করে কাঁচা কাঁঠাল সুপার ফুড হিসাবে রফতানি করে প্রতিবছর কোটি ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।
মার্কিন ভোক্তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই অনাদরে ছিলো কাঁটা কাঁটা মোটা চামড়ায় আবৃত কাঁঠালের গুনাগুণ। কিন্তু, গোশতের পরিবর্তে ফল ও শস্যভিত্তিক সুপারফুডের আসক্তি এই পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। তাইতো কেরালা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে লসএঞ্জেলস এবং লন্ডনের বিখ্যাত নিরামিষ খাবার পরিবেশনকারী রেঁস্তোরাগুলোতে যাচ্ছে ট্রাক ভর্তি কাঁঠালের চালান। আর্ন্তজাতিক সুপার ফুডের বাজারে ভারতে কেরালা থেকে গত বছর প্রায় ৫শ’ টন কাঁঠাল রফতানি করা হয়। চলতি বছর এই রফতানি ৮শ’ টন ছাড়িয়ে যাবে। কেরালা থেকে ফলটির সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। এতে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ নিতান্ত কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। পুষ্টিবিজ্ঞানিদের মতে, এর পুষ্টিগুণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কাঁঠাল রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। তাই খাবার হিসেবে ভাত বা রুটির চেয়ে কাঁঠাল ভালো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।