Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘরে থাকবার সময় নেই জেগে উঠুন

দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাজার আয়োজন করছে
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার পর সরকার খালেদা জিয়াসহ দলের নেতা-কর্মীদের ‘ট্রাইব্যুনাল’-এর মাধ্যমে দ্রুত সাজা দেয়ার আয়োজন করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার বিকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলোর এই রায় দেয়া চলছে শেষ পর্যায়। এরপর এক এক করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাই শুধু নয়, গ্রাম পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মামলাগুলো এই ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসবে। তিনটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। একটা ঢাকায়, একটা চট্টগ্রামে, একটা রাজশাহীতে। সেখানে য্বুদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ, গ্রাম পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ অতি দ্রুত এই মামলাগুলোকে শেষ করার জন্য তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নেতা-কর্মীদের ‘ঘরে বসে না থেকে জেগে উঠার’ আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, এখন আমাদের বসে ঘরে থাকবার সময় নেই। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখন দলকে সংগঠিত করতে হবে।
পরস্পর পরস্পরের মধ্যে ছোট-খাটো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভেদাভেদ আছে, তা ভুলে গিয়ে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এবং সমগ্র জাতির ঐক্য সৃষ্টি করে আমাদের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই ভয়াবহ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবেÑ এটা হলো আমাদের একমাত্র কাজ।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে অর্থ পাচার মামলায় হাইকোর্টে তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
অর্থ পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদ- ও ২০ কোটি টাকার অর্থদ- দেয় হাই কোর্ট।
সেই সঙ্গে তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাত বছরের কারাদ-ও বহাল রাখা হয়েছে। তবে তাকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ৪০ কোটি টাকা অর্থদ- পরিবর্তন করে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা এ মামলার রায়ে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেককে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। আর গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেওয়া হয়েছিল সাত বছর কারাদ- এবং ৪০ কোটি টাকা জরিমানা।
জজ আদালতে অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেয়া রায় হাইকোর্ট বাতিল করে সাজা দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানের এই রায়ে আমরা ভীত নই, আমরা হতাশ হয়েছি, আমরা ক্ষুব্ধ। এই রায় এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, তারা (সরকার) আমাদের বুকের মধ্যে হাত দিয়েছে। এরপর তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সমস্ত নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন। আমরা কেউই বাদ যাবো না। আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ বাদ যাচ্ছে না। তাদের হাত-পা-চোখ চলে গেছে।
এভাবে তারা (সরকার) বহুদলীয় রাজনীতিকে ধ্বংস করবার জন্য, প্রধান বিরোধী দলকে ধ্বংস করার সকল নীল নকশা তারা তৈরি করেছে, সেই নকশা তারা এখন বাস্তবায়িত করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গ তিনি বলেন, তিনি (তারেক রহমান) শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র নন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় যে দল, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির দর্শন তার একজন ধারক ও পতাকাধারী।
মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রশ্ন রেখে বলেন, কেনো এর রায়? উদ্দেশ্য একটাইÑ শুধুমাত্র তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়া, নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। আমরা বলতে চাই, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে আমরা তারেক রহমানকে মুক্ত করে আনবো ইনশাল্লাহ।
সরকার দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেয়ার কাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের কু-মতলব হচ্ছে- দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেয়া, জাতীয়তাবাদী দর্শন নিশ্চিহ্ন করে দেয়া ও বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করা।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় ‘জাতীয় ঐক্যে’ সৃষ্টিতে সরকারের অনাগ্রহের সমালোচনা বিএনপি মহাসচিব বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গ্রিবাদ প্রতিরোধে সারা জাতি যখন আতঙ্কে। যখন বেগম খালেদা জিয়ার সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন, তখনই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের যে বক্তব্যে, সেই বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকার জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাস করে না। তারাই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতসহ কয়েকটি দেশের সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত আজকে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। শুধু ভারত নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বেশ করে বলেছেন যে সমগ্র বিশ্ব আমার সঙ্গে আছে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে, থাকবে। এখন একটা স্বৈরাচারী, একনায়েক যে দেশটাকে ধ্বংস করে দিতে কাজ করছে, তাদের সঙ্গে বিশ্ববাসী শেষ মুহূর্তে থাকবে না।
আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগিতা চাই কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো রকম হস্তক্ষেপ এদেশের মানুষ সহ্য করবে না। যেকোনো বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বৈভৌমত্ব জনগণ রক্ষা করবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিএনপির ভবিষ্যৎ কা-ারী তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থলোপাট, জঙ্গিবাদ-জঙ্গিবাদের উত্থানসহ তাদের পাহাড় প্রমাণ ব্যর্থতার কথা যাতে আমরা যাতে না বলি সেজন্য সরকার আমাদের নেতাকে সাজা দেয়ার এই কৌশল নিয়েছে। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।
নিম্ন আদালতে তারেক রহমানকে খালাসের রায় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এমপি শেখ ফজলুল করীম সেলিমের বক্তব্যের সমালোচনা করে সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২২ জুলাই শেখ সেলিম বলেছেন, নিম্ন আদালতের বিচারককে তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে রায় প্রভাবিত করা হয়েছে। এরকম বক্তব্য দিয়ে আজকে আদালতকে অপমান করা হচ্ছে। আজকে তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আদালতকে প্রভাবিত করছে এটা প্রমাণ করলো। এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। সেজন্য বিএনপির নেতা-কর্মীর সবাইকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিচ্ছে, কারাগারে নিচ্ছে, নির্যাতন করছে, গুম করছে। যে কারণে শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে, সেই কারণে তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, আবুুল খায়ের ভূঁইয়া, শহীদউদ্দিন এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

Show all comments
  • DAK DIYE JAI ২৫ জুলাই, ২০১৬, ৩:১৮ এএম says : 0
    BNP tumra nakee tel diya gumaw. Aar kisudin por Khaleda Zia ke o jele dukabe Awami leauge. Tohon tumra bose sudo aangul chusbe. Tai na? .......... dol BNP.
    Total Reply(0) Reply
  • Sajib ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১:৪৪ পিএম says : 0
    যেকোনো বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বৈভৌমত্ব জনগণ রক্ষা করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সিরাজ ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১:৪৭ পিএম says : 0
    বিএনপির উচিত জনগনকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘরে থাকবার সময় নেই জেগে উঠুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ