পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জঙ্গি ইস্যুতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা প্রধান টার্গেট অনেকেই মেস ছেড়ে আত্মীয়ের বাসায় : কেউ কেউ ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন
বিশেষ সংবাদদাতা : জঙ্গিদের খোঁজে রাজধানীর বিভিন্ন মেসে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। তল্লাশির নামে পুলিশ সাধারণ কর্মজীবী ও ছাত্রদের অহেতুক হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ আতঙ্কে অনেকে মেস ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। মেসগুলোর মধ্যে মাদরাসার শিক্ষার্র্থী থাকলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। একজন ভুক্তভোগী মাদরাসা ছাত্র বলেন, পুলিশের আইজি সাহেবও বলছেন, মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না। অথচ পুলিশের ভাবখানা এমন যেন সব দোষ মাদরাসা ছাত্রদের। তাদের কাছেই মিলবে জঙ্গির সন্ধান।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনার পর পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার মেসে মেসে অভিযান চালাচ্ছে। মেস মেম্বারদেরকে গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে নানা প্রশ্ন করা হচ্ছে। কারা কারা মেসে থাকে, তারা কী কাজ করে, কখন বাইরে যায়, কখন ফেরে, নতুন কে কে এসেছে ইত্যাদি প্রশ্ন করা হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ এলাকার এক চাকরিজীবী জানান, কয়েকদিন আগে পুলিশ তাদের মেসে আসে। গভীর রাতে সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়। এরপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পুলিশ নানা প্রশ্ন করতে থাকে। ওই চাকরিজীবী বলেন, আমার কাছে পুলিশ জানতে চেয়েছিল, আপনি কী করেন? উত্তরে আমি বলি, আমি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। একথা শুনে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি কোম্পানি তো ঢাকায় কেন? ঢাকার বাইরে চাকরি করলে ক্ষতি কি? আরেকজনের কাছে পুলিশ জানতে চায়, তার গ্রামের বাড়ি কোথায়। উত্তরে তিনি বলেন, নোয়াখালী? এ কথা শুনে একজন পুলিশ বলে, নোয়াখালী মানে বিএনপি নাকি জামায়াত? তখন ওই ব্যক্তি বলেন, আমার এমপি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মোহাম্মদপুর এলাকার একজন মেস মেম্বার জানান, তাদের মেসে পুলিশ গিয়ে কে কোন রুমে ঘুমায় তা দেখতে চায়। এরপর কার বাড়ি কোথায়, কে কবে থেকে মেসে থাকে, কে কখন ফেরে, কখন বের হয়Ñনানা প্রশ্ন করে। একপর্যায়ে পুলিশ মেসে অবস্থানকারীদের কাছে জানতে চায়, তারা নাম-ঠিকানা সম্বলিত ফরমটি পূরণ করেছে কি না। উত্তরে অধিকাংশই জানায়, তারা অনেক আগেই বাড়িওয়ালার দেয়া ফরম পূরণ করে দিয়েছে। দু-চারজন আছে যাদের ফরম পূরণ করা হয়নি। সেই দুই-চারজনকে খুঁজে বের করে পুলিশ বিভিন্নভাবে প্রশ্ন করতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ সবার কাছে নতুন করে জীবনবৃত্তান্ত চায়। একজন ভুক্তভোগী জানান, পুলিশের তল্লাশির নামে এসব হয়রানিতে অনেকেই মেস ছেড়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। যাদের ঢাকায় না থেকে উপায় নেই তারা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উঠছেন। অনেক শিক্ষার্থী এখন ‘সময় খারাপ’ ভেবে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। ফকিরেরপুল এলাকার একজন মেসের বাসিন্দা জানান, পুলিশের হয়রানি থেকে বয়স্করাও রেহাই পাচ্ছে না। চাকরিজীবী পরিচয় দেয়ার পরেও পুলিশ নানাভাবে বয়স্কদের হয়রানি করছে। সরকারি একজন চাকরিজীবী বলেন, ২২ বছর ধরে মেসে থাকি। এ রকম অবস্থা কথনও দেখিনি। পুলিশের সন্দেহ হলে তল্লাশি করবে করুক। কিন্তু তাই বলে, গণহারে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে হয়রানি করবে, এটা তো ঠিক নয়।
রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকায় মাদরাসার সংখ্যা বেশি। বেশিরভাগ মাদরাসার নিজস্ব কোনো হোস্টেল না থাকায় এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মেসে থাকতে হয়। কয়েকজন ভুক্তভোগী জানায়, ঈদের তিন দিন আগে থেকে মেসগুলোতে পুলিশের তল্লাশি চলছে। মেসগুলোতে মাদরাসার শিক্ষার্থী পেলেই পুলিশ বাঁকা চোখে দেখে। নানা প্রশ্নের পাশাপাশি তাদের বিছানাপত্র, বই, পুস্তক, টেবিল, ট্রাঙ্ক তল্লাশি করে। একজন ভুক্তভোগী ছাত্র বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছে। শুধু মেসে নয়, রাস্তায় চলতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মাদরাসাগুলোতে নজরদারি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। কখন পুলিশ আসে সে আতঙ্কে মাদরাসার ছাত্রদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আমাদের অভিভাবকরা খুবই টেনশনে আছেন। যাত্রাবাড়ী কুতুবখালি এলাকায় বসবাসরত এক মাদরাসা ছাত্র বলেন, পুলিশের আইজি, মন্ত্রীসহ অনেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি বলছেন, মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় না। গুলশানে হামলার ঘটনার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে। তারপরেও আমাদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। সন্দেহ থাকলে পুলিশ তল্লাশি করুক। কিন্তু তল্লাশির নামে হয়রানি করবে কেন? এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব মো. আয়াতউল্লাহ আকতার বলেন, আজকে যারা মেস মেম্বারদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন, তারা কেউই গ্রাম থেকে বিল্ডিং নিয়ে ঢাকায় আসেননি। তারাও একসময় মেসেই থাকতেন। এটা মাথায় রেখে তারা যেন মেসগুলো তল্লাশি করে। মেস মেম্বার মানে খারাপ বা সন্ত্রাসী, তা ভাবা উচিত নয়। আয়াতউল্লাহ বলেন, পুলিশ মেসগুলোতে তল্লাশি করতেই পারে। কিন্তু তল্লাশির নামে সবাইকে হয়রানি করা উচিত নয়। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ যে কারো কাছ থেকে তথ্য চাইতে পারে। পুলিশ অহেতুক নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করবে না। নিরীহ মানুষের পুলিশকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।