পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতীয় সৈন্যরা ৮ জুলাই কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী হিজবুল মুজাহিদিন গ্রুপের ক্যারিশমাটিক নেতা ২২ বছরের তরুণ বুরহান ওয়ানিকে হত্যা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জনগণের প্রতিক্রিয়া হয় স্বতঃস্ফূর্ত ও নজিরবিহীন। হাজার হাজার ক্রুদ্ধ তরুণ গোটা কাশ্মীর ব্যাপী তাদের স্ব-স্ব শহর ও গ্রামগুলোর রাস্তায় নেমে আসে। তারা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর ইট-পাথর নিক্ষেপ করে এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর এপি।
কারফিউ জারি রেখে ও সব যোগাযোগ বন্ধ করেও কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরের ক্রুদ্ধ তরুণদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ। সরকারী বাহিনী বিক্ষোভ দমন করতে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণ ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করে। এতে ৪৮ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২ হাজার বেসামরিক লোক ও দেড় হাজার পুলিশ ও সৈন্য আহত হয়েছে। বহু কাশ্মীরী তরুণ ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে তাদের চোখের দৃষ্টি হারাতে বসেছে। ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের এ অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মধ্যে এর মূল নিহিত। সে সময় কাশ্মীরকে দু’টি স্বাধীন দেশ ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনো একটিতে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু মুসলিম প্রধান কাশ্মীরের অজনপ্রিয় হিন্দু শাসক মহারাজা হরি সিং স্বাধীন থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এদিকে কাশ্মীরে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানের সশস্ত্র উপজাতীয়রা সেখানে প্রবেশ করলে হরি সিং ভারতের সাহায্য প্রার্থনা করেন। কাশ্মীর ভারতে যোগ দেবে শর্তে ভারত সামরিক সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। হরি সিং তাতেই রাজি হন, তবে তিনি বলেন যে ভারত ইউনিয়নের মধ্যে কাশ্মীরকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ভারতের হাতে কাশ্মীরের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও টেলিযোগাযোগ তুলে দেয়া হয়
এ চুক্তির পর ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে। তারা পাকিস্তানি উপজাতীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। দু’দেশের মধ্যে শুরু হয় প্রথম লড়াই। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৮ সালে যুদ্ধবিরতি হয়। কাশ্মীর দু’দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। রাজধানী শ্রীনগরসহ প্রধান অংশটি ভারতের দখলে থাকে। গৌণ অংশটি থাকে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে। দু’ অংশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় নিয়ন্ত্রণ রেখা। ভারত অঙ্গীকার করে যে ভবিষ্যতে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছানুযায়ী কাশ্মীরের ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু সে গণভোট আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে দেখা যায় যে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে হিন্দু রাজা কাশ্মীরের শাসনভার হিন্দু ভারতের হাতে তুলে দেন। ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের চুক্তি লংঘন করায় ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরীদের অসন্তোষ শুরু হয়। একের পর এক কাশ্মীরের স্থানীয় সরকারের পতন হতে থাকে। ভারতের নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে কাশ্মীরীদের প্রতিবাদ কঠোর রূপগ্রহণ করে।
পাকিস্তান জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে কাশ্মীর সমস্যা উত্থাপন অব্যাহত রাখে। অন্যদিকে ভারত কাশ্মীরকে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করে। বলে কাশ্মীরের আইনপ্রণেতারা নয়াদিল্লীর অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করেছেন।
এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তাতে ভূখ-গত পরিবর্তন ঘটেনি। তাদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়, তাতে অচলাবস্থা কাটেনি।
মধ্য’৮০-তে কাশ্মীরের ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক গ্রুপগুলো ঐক্যবদ্ধ হয় এবং বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেয়। মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট দ্রুত কাশ্মীরের ভারতপন্থী রাজনৈতিক মহলের বিরুদ্ধে বিরা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে ১৯৮৭ সালের নির্বাচনে ফ্রন্ট হেরে যায়। ব্যাপক কারচুপি করে তাদের হারিয়ে দেয়া হয় বলে বিশ্বাস।
এর পরিণতি হয় নেতিবাচক। ফ্রন্টের কিছু তরুণ সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পৌঁছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে বিদ্রোহের পূর্ণ বিস্ফোরণ ঘটে। ভারত ইতিমধ্যেই বিপুল সামরিকীকৃত কাশ্মীরে আরো সৈন্য প্রেরণ করে। জবাবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরী অস্ত্র ও গ্রেনেড সজ্জিত হয়ে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করে। তখন থেকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কাশ্মীরে এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার লোক নিহত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা অনেক হ্রাস পেলেও আজাদি বা স্বাধীনতার মন্ত্র কাশ্মীরীদের হৃদয়ে খোদিত হয়ে গেছে। গত দশকে কাশ্মীরীরা সশস্ত্র বিদ্রোহের বদলে নিরস্ত্র প্রতিবাদের পথ বেছে নিয়েছে। হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামছে। মাঝে মধ্যেই তারা বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় ভারতীয় সৈন্যদের উপর পাথর নিক্ষেপ করছে। আর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গুলি চালিয়ে হত্যা করে তাদের দমনের চেষ্টা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।