Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের প্রবাসীরা সঙ্কটেও পাশে

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতিতসহ সামগ্রিকভাবে সিলেটের প্রবাসীদের ভ‚মিকা অপরিসীম। এক কথায় প্রবাসে তারাই দেশের নিঃস্বার্থ অ্যাম্বাসেডর। সিলেটের উন্নয়ন অগ্রগতিতে তারাই অনন্য শক্তি। বৈশ্বিক করোনায় তারাই আগে হয়েছেন আক্রান্ত। আত্মীয়স্বজন-পাড়া প্রতিবেশির কথা ভুলে যায়নি তারা। অর্থ ও মানবিকতা নিয়ে দূরে বসেই পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সেই প্রবাসীদের প্রতি অবজ্ঞা অসৌজন্যতা অপ্রত্যাশিত মনোভাব দেখিয়েছি। হীন মানসিকতায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন তারা।

বাস্তবিক এ অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখনই সময় প্রবাসীদের সাথে আত্মীক ও মানসিক সর্ম্পক উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ। সিলেট বিভাগ উন্নয়ন ফেরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট চৌধুরী আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, কি করিনি আমরা, চলমান বৈশি^ক করোনায় আমাদের প্রবাসীদের সাথে অবজ্ঞা, অসৌজন্যতা করা হচ্ছে। দেশে আসতে হলে তারা পূর্ব প্রস্ততি নিয়ে দেশে আসেন। এক বছর বা ৬ মাস পূর্বে বিমানে টিকেট বুকিং দেয়। দেশের স্বজনদের জন্য প্রয়োজনীয় উপহার ক্রয় করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিেিত দেশে আসা প্রবাসীদের প্রতি তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে অবজ্ঞা দেখিয়েছি। বিমানবন্দরে আসার পর থেকেই তাদের প্রতি দেখানো হয়েছে বিরূপ মনোভাব। সামাজিক মাধ্যমেসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচার হয়েছে হীন মানসিক আচরণ। অথচ এ সময় তাদের অবস্থান ও রুচির প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভালো মানের হোটল ভাড়া করে হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করলে তারা সন্তুষ্ট হতে পারতেন। এতে করে তাদের প্রবাসী প্রজন্ম দেশের মানুষের প্রতি নতুন করে ইতিবাচক ধারনা লালন করতো।

পঞ্চাশের দশক থেকে প্রবাসমুখী সিলেটিরা। ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকাসহ বিশে^র কোথাও না কোথাও রয়েছেন তারা। পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা, বিয়ে-শাদি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন অগ্রগতিসহ আধুনিক উন্নত জীবনযাপনে রয়েছে সেই প্রবাসীদের অর্থ-জ্ঞানের বিনিয়োগ। অবিরাম ধারাবাহিকতায় তা চলছে। একজনের হাত ধরে প্রবাসমুখী হচ্ছেন অন্যজন। বলা যেতে পারে নিরব এক আর্থিক ও সর্ম্পক বিপ্লব। সেই বিপ্লবে কেবল সমৃদ্ধ ও সুসংহত দেশ তথা সিলেটিরা। কেবলমাত্র আর্থিক বিবেচনায় নিলে প্রবাসীরা দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা। সেই ধারনায় করোনা মাহামারির মধ্যেও ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত বছরের চেয়ে এবার আয় কম হলেও ঈদে বা মে মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ ১২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। তবে আগের বছরের মে মাসের চেয়ে আয় কমেছে ১৪ শতাংশ। তবে সামনের দিনে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত মে মাসে আয় এসেছে ১৫০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর ২০১৯ সালের মে মাসে আয় এসেছিল ১৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ হিসাবে আয় কমেছে ১৪ শতাংশ। তবে পুরো অর্থবছরের হিসাবে আগের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ দেশে লকডাউন চলছে। এর ফলে প্রবাসী অনেকের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে সেসব দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এতে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গিয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এতে বিপর্যয় আসতে যাচ্ছে। প্রদত্ত এ তথ্যে কেবল করোনা পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্স নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা। কিন্তু এর ভেতর দৃঢ়ভাবে বিদ্ধ হয়ে গেছে দেশের সাথে প্রবাসীদের আগামী দিনের সর্ম্পক রক্ষার প্রশ্ন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের সাথে পারস্পরিক স্বার্থগত সর্ম্পকের উত্তরণ ঘটাতে হবে। তাদের অর্থের প্রতি শুধু চোখ না রেখে, তাদের মেধা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, অর্জনকে মর্যাদা দেয়াসহ তাদের সাথে সুসর্ম্পক রক্ষার উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন অনেকে।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, টাকা ছাড়া কি দেশের জন্য প্রবাসীদের আর কিছু দেয়ার নেই? প্রবাসীদের বাস্তব নির্ভর মেধা জ্ঞান দেশের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। সেই দিকে কারো কোন খেয়াল নেই। তারপরও প্রবাসীরা নাড়ির টানে দেশের সাথে সর্ম্পক রাখতে চায়, কিন্তু প্রবাসী প্রজন্মকে নিয়ে ভাবতে হবে এখনই। করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের প্রতি যে উদাসীনতা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করা হয়েছে তার কাম্য ছিল না। এরপরও প্রবাসীরা করোনা সঙ্কটে মুক্ত হস্তে দান করছেন দেশের তথা সিলেটে বসবসারত পরিবার স্বজনসহ অসহায় মানুষদের।

হিউম্যান রাইটস মনিটরিং অর্গানাইজেশনের সিলেট বিভাগীয় সভাপতি আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, মানসিক আচরণগত দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে করোনা পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের সাথে। সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রবাসীদের সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, বিরূপ মনোভাব দেখানোর মাধ্যমে নিজেরাই মর্যাদাহীন হয়ে ভবিষ্যত সর্ম্পক সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছি। অথচ তারা মানসিক কষ্ট নিয়েও দেশের মানুষের অসহায়ত্ব ভুলে যান নি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবাসী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ