Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পানিবদ্ধতা রাস্তাঘাটে উন্নতি নেই বিলবোর্ড আবর্জনা অপসারণে চমক

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেয়র নাছিরের এক বছর
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ‘মহানগরী বিলবোর্ডের জঞ্জালমুক্ত হয়েছে, খোলা আকাশ দেখতে পাচ্ছি, ময়লা-আবর্জনাও ভালোভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে যে রকম উন্নয়ন আশা করেছিলাম তা হয়নি, রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি মেলেনি।’
এভাবেই মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের এক বছরের মূল্যায়ন করলেন বন্দরনগরী আগ্রাবাদের বাসিন্দা হাজি মনসুর আহমদ। নতুন মেয়র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন কি পারেননি, এসব আলোচনায় সরব এখন চট্টগ্রাম। এক বছরে তার সাফল্য-ব্যর্থতার নানা দিক আলোচিত হচ্ছে সর্বত্রই। কেউ বলছেন, সরকারি দলের মেয়র হিসাবে প্রথম বছরেই তিনি চমক দেখাতে পারতেন, কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কারো কারো মতে সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট নয়, এখনও ৪ বছর সময় আছে। আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। গত বছরের এই দিনে তিনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী বন্দর নগরীর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলমকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আ জ ম নাছির উদ্দিন। ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শপথ নিলেও বিদায়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেন ২৬ জুলাই। আওয়ামী লীগ তথা সরকারি দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভোটের আগে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
চসিকের হিসাবে গত এক বছরে সরকারের কাছে চাহিদা ছিল ৯৭২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ২২৯ কোটি টাকা, যা প্রত্যাশার মাত্র ২৩ শতাংশ। বরাদ্দ কম হওয়ায় অনেক কাজ করা যায়নি। দায়িত্ব পালনে মহানগরীর প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতাকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার অঙ্গিকার ছিল মেয়রের। এই সমস্যা সমাধানে প্রথমবারের মতো ৬টি প্রকল্পে চসিকের চাহিদা ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে একটি প্রকল্পে মিলেছে মাত্র পৌনে চার কোটি টাকা। ফলে প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতারও কেন গতি হয়নি। বরং নতুন নতুন এলাকায় পানিবদ্ধতা হচ্ছে, জোয়ার-ভাটায় ভাসছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা।
মেয়র অবশ্য মনে করেন প্রত্যাশার চেয়ে কম হলেও সরকারি বরাদ্দ আগের তুলনায় বেড়েছে। তিনি আশাবাদী চট্টগ্রামের উন্নয়নে যা যা করা দরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সবটুকুই করবেন। চট্টগ্রামবাসীকে তিনি হতাশ করবেন না। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিলবোর্ড উচ্ছেদ ও সিটি করপোরেশনে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফেরানোকেই প্রধান সাফল্য হিসেবে দেখছেন মেয়র।
সাধারণ মানুষ বলছে, নগরীকে বিলবোর্ডের জঞ্জালমুক্ত করাই মেয়রের বড় সাফল্য। বিলবোর্ডে ঢেকে গিয়েছিল পাহাড় আর সাগরে ঘেরা মহানগীর সৌন্দর্য। যত্রতত্র গড়ে ওঠা বিলবোর্ড জননিরাপত্তার জন্যও ছিল হুমকি। এসব বিলবোর্ডের ব্যবসার নেপথ্যে ছিল সরকারি দলের রাঘব-বোয়ালেরা। লাভজনক এই ব্যবসা ধরে রাখতে তারা কম চেষ্টা করেননি। তবে কারো কাছে নতি স্বীকার না করে কঠোর অবস্থান নিয়ে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে মেয়র নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেয়রের এই ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সাধারণ মানুষ বলছে, এই মেয়রের সময় রাস্তাঘাটের যে দৈন্যদশা তা অতীতে কোনো মেয়রের সময় দেখা যায়নি। প্রতি বর্ষাতেই রাস্তা-ঘাটের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠে।
নগরীর প্রধান সমস্যা পানিবদ্ধতা নিরসনে কোন অগ্রগতি হয়নি। খাল-নালা সংস্কার হলেও পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। এক ঘন্টার টানা বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি। গুদাম, আড়ত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যাচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর ছাড়িয়ে জোয়ারে ভাসছে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জসহ বাকলিয়া, চান্দগাঁওয়ের বিশাল এলাকা। গত এক বছরের পানিবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন মেয়রের উপর কিছুটা হতাশ। তবে তাদের প্রত্যাশা মেয়র তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে আরও বেশি আন্তরিক হবেন।
মেয়রের আরও একটি সাফল্য নগরবাসীর চোখে পড়েছে, তা হলো দ্রুত ময়লা আর্বজনা অপসারণ। মেয়র তার দায়িত্বগ্রহণের কিছুদিন পর দিনের বদলে রাতে ময়লা আবর্জনা অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করেন।
দায়িত্বগ্রহনের প্রথম দিন মেয়র বলেছিলেন, কপোরেশনের সকল কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন তিনি। আর এ জন্য সবার আগে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। এক্ষেত্রে এক বছরে মেয়রের বেশকিছু উদ্যোগ নগরবাসীর প্রশংসা পেয়েছে। কপোরেশনে বেশকিছু রদবদল হয়েছে, অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোনসহ সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সাথে সমন্বয় সভা করে নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগও নিয়েছেন মেয়র। এতে সেবা সংস্থাগুলোর কাজে গতি আসছে, তার সুফল পাচ্ছে নগরবাসী। নগরীতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক অবদান রাখতে চসিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার মান দিনে দিনে বাড়ছে।
চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, এক বছরে মেয়র অনেক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তবে বরাদ্দ কম হওয়ায় বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। চসিক সূত্রে জানা গেছে, খাল খনন ও নগরীর সড়ক সংস্কারে গৃহীত ৫২৬ কোটি ৮৪ লক্ষ ৬ হাজার টাকার দুটি প্রকল্পের বিপরীতে গত এক বছরে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ১২ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে আলোচিত নগরীর বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খননে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
এছাড়া ১৯৯ কোটি ৯৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ‘ডেভেলপমেন্ট অব চিটাগাং রোড বাই ইউজিং এ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া অব চিটাগাং’ প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যদিও এ প্রকল্পটির বিপরীতে মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছিল মাত্র ১ লাখ টাকা। পরবর্তীতে খাল খনন প্রকল্পের বিপরীতে ছাড়কৃত অর্থের সাথে সমন্বয় করে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছিল। এছাড়া গত এক বছরে চসিকের ৫টি প্রকৌশল বিভাগ থেকে একাধিক প্রকল্প প্রণয়ন করা হলেও সেইসব প্রল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন মেলে নি এখনো।
গতবছরের ২৮জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে মেয়র আ জ ম নাছির ১১২ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছিলেন। গত এক বছরে সেই বিশেষ বরাদ্দ মেলেনি। ঢাকা সিটির দুই মেয়রকে উন্নয়ন কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলেও এমন কোনো বরাদ্দ পাননি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানিবদ্ধতা রাস্তাঘাটে উন্নতি নেই বিলবোর্ড আবর্জনা অপসারণে চমক
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ