পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
এস.কে সাত্তার.ঝিনাইগাতী (শেরপুর) : মৎস্য সপ্তাহ চলাকালেও ঝিনাইগাতীতে অবাধে চলছে পোনামাছ নিধনের মহোৎসব। অথচ উপজেলা মৎস্য বিভাগের এ দিকে নেই কোন দৃষ্টি। এ বিভাগটির যাবতীয় কার্যক্রম যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকায় এবং মৎস্য বিভাগের চরম দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির কারণে ঝিনাইগাতী ক্রমেই হয়ে পড়ছে মৎস্যশূন্য। ঝিনাইগাতীর বিলগুলো থেকে প্রতিদিন অবাধে পোনা মাছ ধরে এনে তা প্রকাশ্যেই উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। যেন দেখার নেই কেউ। যদিও পোনামাছ ধরা এবং বিক্রি মৎস্য আইনে সম্পূর্ন বেআইনী, কিন্তু এই আইনের কেউ কোন তোয়াক্কা করছে না। এ সব পোনামাছ ধরতে বিভিন্ন প্রকার নেটজাল, কারেন্টজাল দিয়ে অবাধে পোনামাছ ধরে বিক্রয় করা হচ্ছে মৎস্য বিভাগের নাকের ডগায়।
জানা যায়, ঝিনাইগাতীর বিল এবং নদী-নালা, খাল-বিলে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রুই, কাতল, চিতল, বোয়াল, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ে। নয় ইঞ্চির নিচে এ জাতীয় পোনামাছ ধরা বা বিক্রয় শুধু নিষিদ্ধই নয়, দ-নীয় অপরাধ। কিন্তু বিলপাড়ের মানুষ জানে না যে তারা এ সব মাছ ধরে বেআইনী কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে এবং মৎস্যজীবীরা জানান, সংশ্লিষ্ট অফিস (মৎস্য অফিস) ম্যানেজ করেই তারা এই পোনামাছের ব্যবসা করে আসছেন। জানা যায়, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত বিল থেকে কোন ধরনের পোনামাছ আহরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকলেও কি যেন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এখানে সেই আইন কার্যকর নেই। অপরদিকে, শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলায় দেশীয় প্রজাতির মাছের এখন চলছে তীব্র আকাল। ফলে বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ প্রবাদ বাক্যটি ভবিষ্যত হয়তোবা আর ৫/১০ বছর পর বিশ্বাসই করতে চাইবেনা ভবিষ্যত প্রজন্ম। অথচ আজ থেকে মাত্র ১০/১২ বছর পূর্বেও এখানকার নদী-নালা-খাল-বিল, নিচু ধানী ক্ষেত এবং জলাশয়ে বিনা চাষেই প্র্রাকৃতিক দেশীয় ছোট-বড় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু নির্বিচারে ধানী ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ, ফি-বছর পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে আসা নূড়ি-বালী ও কাঁদা এসে আস্তে আস্তে খাল-বিল-নদী-নালা-ডোবা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়া এবং ব্যাপক লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অনেক খাল-বিল-ছড়া-নালা-ডোবা এবং জলাশয় ভরাট করে বাড়ী-ঘর নির্মাণ এক শ্রেণীর জেলে ডিম ওয়ালা ও মা’মাছ ধরা এবং চাষযোগ্য জমিতে বাড়ী-ঘর নির্মাণ করার কারণে আবাসস্থলের অভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া দেশের মৎস্য গবেষণাগারেও দেশীয় মাছের ওপর কোন গবেষণার ব্যবস্থা নেই। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, দেশীয় প্রজাতির মাছের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে মৎস্য গবেষণাগারে গবেষণা অত্যন্ত জরুরী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে এখানে বিনাচাষে প্রাকৃতিক ভাবেই প্রচুর কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, শৈল, গজার, বোয়াল, খৈলশা, টাকি, পুঁটি, চেলা, মলা, বাতাই, টেংরা, গোলশা, পোঠা, বাইম, প্রভৃতি মাছ খাল-বিল-নদী-নালা-ডোবা, নিচু ধানী জমি এবং প্লাবিত জলাভূমিতে ডিম ছাড়তো। কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই এসব মাছ বড় হতো। তখন নিচু জমিতে আমন ধান রোপণের পূর্বে ‘মই’ দেয়ার সময় এবং হাট-বাজারে ঢোল পিটিয়ে বিলে মাছ ধরার দিনক্ষণ জানানো হতো নির্দিষ্ট তারিখে। তারিখ অনুযায়ী হাজার হাজার মানুষ নামতো বিলে মাছ ধরতে। যাকে স্থানীয় ভাষায় বো-য়াইত বলা হয়। মাছ পাওয়াও যেত প্রচুর। আজ আর সেই মাছ মারার ধুমও নেই, বো-য়াইতও নেই! ফলে গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ আজ পড়েছে মহাবিপদে। তারা আজ আর যেন মাছে-ভাতে বাঙ্গালী নয়, তারা যেন আজ ভাতে-লবণ-মরিচে বাঙ্গালী! খবর নিয়ে জানা যায়, এক শ্রেণীর লোভী কৃষক অজ্ঞতাবশত কৃষিক্ষেতে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার করায় এবং জেলেরা অবাধে বেআইনী কারেন্ট জাল ব্যবহার করায় দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এখনও অবশ্য হঠাৎ হাট-বাজারে কিছু কিছু দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও দাম এতই চড়া যে, দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ সে সব মাছের আশ-পাশেও ভিড়তে পারে না। ফলে দেশীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ ছোট মাছ এখন ইলিশের চেয়েও দামি হয়ে পড়েছে। বোয়াল, শোল, গজার এবং ভেদা মাছতো এখন আর চোখেই পড়েনা। পুকুরে চাষ করা কিছু কিছু শিং- মাগুর এবং কৈ পাওয়া গেলেও সে মাছের স্বাদ পাওয়াতো যায়ইনা তাও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।