Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের বেপরোয়া বিএসএফ

প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ২৩ জুলাই, ২০১৬

চলতি মাসে ৫ বাংলাদেশীকে হত্যা : গত ৭ মাসে নিহতের সংখ্যা ২১
১০ বছরে সীমান্তে প্রাণহানি ৬৮৪ : গুলি বন্ধের প্রতিশ্রুতি যেন ফাঁকা বুলি
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি বন্ধের কথিত প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও প্রতিনিয়ত নিরস্ত্র বাংলাদেশীদেরকে গুলি করে হত্যা করছে বাহিনীটি। উল্টো দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে বিএসএফ। চলতি জুলাই মাসেই ৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বাহিনীটির সদস্যরা। এর মধ্যে চারজনই গুলিতে নিহত। অন্য একজনকে পাথর মেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। চলতি বছরের সাত মাসেরও কম সময়ে সীমান্তে মোট ২১টি হত্যাকা- এবং ১৮টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গত দশ বছরে হত্যার সংখ্যা ৬৮৪। সর্বশেষ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত ভোররাতে বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ।
পুটখালী সীমান্তে বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা
আমাদের বেনাপোল অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় পুটখালী সীমান্তে শহিদুল ইসলাম ওরফে ফনি (৩২) নামে বাংলাদেশী এক গরু ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। নিহত শহিদুল ইসলাম পুটখালী গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে। ২৩ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফুর রহমান জানান, শুক্রবার দিবাগত ভোর সাড়ে চারটার দিকে একদল গরু ব্যবসায়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আংরাইল ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে শহিদ মারা যান। পরে বিএসএফ সদস্যরা তার লাশ সীমান্তবর্তী ইছামতি নদীতে ভাসিয়ে দেয়। শহিদের সাথে থাকা অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে গতকাল সকালে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।
জুলাই মাসেই পাঁচ হত্যা
গতকালের ঘটনার আগে চলতি মাসেই বাংলাদেশ সীমান্তে আরো চারটি হত্যাকা- ঘটিয়েছে বিএসএফ। গত শুক্রবার (২২ জুলাই) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চক কানাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীটির গুলিতে এক গরুর ব্যবসায়ী নিহত হন। স্থানীয় পুলিশ ও নিহতের পরিবার এ তথ্য জানায়। নিহত আবুল কালাম আজাদ (৩০) গোদাগাড়ীর সীমান্তবর্তী চক কানাপাড়া এলাকার কদম আলীর ছেলে। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে বলা হয়েছে, আবুল কালাম মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ জানান, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ।
তারও দুইদিন আগে গত বুধবার (২০ জুলাই) আরেকটি হত্যার ঘটনা ঘটে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সীমান্তে। এলাকাবাসীর দাবি এটিও বিএসএফ ঘটিয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার জলপাইতলী সীমান্ত থেকে বুধবার রাতে বাংলাদেশী ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ। তার নাম মো. সাইফুল ইসলাম (২৭)। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা তাকে পিটিয়ে মেরেছে। সাইফুল ইসলাম জলপাইতলী সীমান্তঘেঁষা বানাহার গ্রামের মো. মকলেছার রহমানের ছেলে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই মোশাররফ হোসেন (৩৫) বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় গত বৃহস্পতিবার সকালে মামলা করেছেন।
গত ১৪ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তের একটি ব্রিজের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) রাশেদুল ইসলাম (২৭) নামে এক বাংলাদেশীকে হত্যা করে। উপজেলার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০৬৬/১এফ নং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলারের কাছে ভন্দুরচর সীমান্তের কালোর ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত রাশেদুল উপজেলার রৌমারী সদর ইউনিয়নের পূর্ব ইজলামারী এলাকার নয়ারচর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে।
গত ১০ জুলাই নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকিলাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে গোলাপ হোসেন (৩২) নামে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হন। নিহত গোলাপ স্থানীয় সীমান্তবর্তী চ-িপুর গ্রামের খয়রুলের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সকালে গোলাপ সীমান্তের ২৬৫ মেইন পিলারের কাছে গেলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
১৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বাড়াদী সীমান্তে গিয়াসউদ্দিন (৩২) নামের এক কৃষককে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ধরে নিয়ে রাইফেলের বাঁট দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। নির্যাতনের ঘটনার পর বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাকে ফেরত এনে দর্শনার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গিয়াসউদ্দিন উপজেলার বাড়াদী গ্রামের আব্দুল মজিদেও ছেলে।
সাত মাসে ২১ হত্যা, ১৮ অপহরণ
জুলাই মাসে পাঁচজনসহ ২০১৬ সালে এ পর্যন্ত মোট ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওয়েব সাইটে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্ত হত্যার একটি পরিসংখ্যান দেয়া আছে। সেখানে বিগত ৬ মাসে ১৬ জনের নিহতের তথ্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হামলার ঘটনায় ১৭ জন বাংলাদেশীকে আহত এবং ১৮ জনকে সীমান্ত থেকে অপহরণ করেছে ভারতীয় বাহিনী।
১০ বছরে ৬৮৪ হত্যাকা-
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত বিগত ১০ বছরে ৬৮৪ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা। অবশ্য গত ২৯ মে জাতীয় সংসদে এক সদস্যের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, এ সময়ের মধ্যে বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা ৫৯১ জন। এসব হত্যাকা-ের মধ্যে কিশোরী ফেলানির মতো আলোচিত হত্যাকা-ও রয়েছে।
গুলি বন্ধের প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলি
বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সর্বোচ্চ সংযত আচরণ করবেÑ ভারতের দিক থেকে এমন আশ্বাস বহুবার দেয়া হলেও সেটি তেমন একটা কাজে আসেনি। ২০১৪ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সীমান্ত হত্যার ইস্যুটি তুলে ধরা হয়। এর আগেও একাধিকবার আগেও বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবির পিলখানাস্থ সদর দফতরে আয়োজিত ‘সীমান্ত সম্মেলন’-এ সীমান্ত হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছিল বিজিবি। এসব বৈঠকে সীমান্তে গুলি ও হত্যা বন্ধে যৌথ পদক্ষেপ নেয়া প্রতিশ্রুতি ভারতের পক্ষ থেকে দেয়া হলেও এরপরে শতাধিক বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তে সব আইন ও অধিকার লঙ্ঘন করছে বিএসএফ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠকদের মতে, বিএসএফের কারণেই হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনো দেশের নাগরিক অনুনোমোদিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কথা এবং সেই মোতাবেক ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম রয়েছে।
তবে এই সমঝোতা এবং চুক্তি লঙ্ঘন করে বিএসএফ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে ও অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Siam ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১:৪৪ পিএম says : 0
    Bondura aktu freindly fire kore.kichu mone korben na pls.
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Faroque ২৪ জুলাই, ২০১৬, ২:০০ পিএম says : 0
    Government never see that India killing police killing. all are same
    Total Reply(0) Reply
  • Shahed Parvez ২৪ জুলাই, ২০১৬, ২:০০ পিএম says : 0
    রক্তের সম্পর্ক রক্ত দিয়ে শোধ !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফের বেপরোয়া বিএসএফ

২৪ জুলাই, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ