Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের প্রতি ইব্রাহিম খালেদের আহ্বান আর্মি-পুলিশে শুদ্ধি অভিযান চালান

প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ভেজাল আছে বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, আর্মি ও পুলিশে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, গোয়েন্দা ও পুলিশে ভেজাল আছে। সে জন্য জঙ্গিদের জন্য যে গোয়েন্দা ও পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে, সেখানে কেউ অসৎ এবং ভেজাল হতে পারবে না। যারা থাকবেন তাদের বাংলাদেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত হতে হবে। এ জন্য শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ আয়োজিত বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠকে একাধিক বক্তা জঙ্গি দমন অভিযানে সাফল্য পেতে প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাতে সরকারকে পরামর্শ দেন। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গি দমনে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়ার জন্যই আয়োজন করা হয় এ গোলটেবিল বৈঠক। ‘সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও বিপথগামী তারুণ্য ঃ প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি প্রবন্ধে হতাশা থেকে সমাজের উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। বলেন, এক শ্রেণির মাদ্রাসা ও দরিদ্র পরিবার থেকে যারা জঙ্গি হয়, তারা হয়তো সে পথে যায় ইহজাগতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে উজ্জ্বল আখেরাত সম্পর্কে মন্ত্রণার কারণে। আর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ধনিক শ্রেণির যুবকরা যায় সম্ভবত অন্য এক ধরনের হতাশার কারণে; যা ওই শ্রেণির মানুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান শিথিল পারিবারিক বন্ধন ও অসৎ সঙ্গ থেকে উৎসরিত।
বৈঠকে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খাঁন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক একেএম নূর-উন-নবী, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি একেএমএ হামিদ, সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক হান্নানা বেগম ও তৌহিদ রেজা নূর প্রমুখ আলোচনয় অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনায় ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদেও একজন ভেজাল কীভাবে লুকিয়ে ছিল! এত বড় পদে এরকম একজন ভেজাল যদি থাকতে পারে, তাহলে পুলিশ-টুলিশে তো ভর্তি। এরপর তুরস্কের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত টেনে এনে শুদ্ধি অভিযানের পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ অনুগত বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত কৃষি ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটা বিপ্লব করতে চান, হয়ত উদ্দেশ ভালো না। কিন্তু প্রশাসন থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে দিচ্ছে। আমি সেই সাজেশন্স দিচ্ছি না। তবে আমাদেরকেও একটা পথ বের করতে হবে। পুলিশ, সিভিল সার্ভিস, আর্মি থেকে এরকম হাজার মানুষকে বের করে দিতে হবে। দরকার হলে পেনশন দিয়ে বাড়িতে রাখেন। খেয়ে-পরে বাঁচুক। তারপরও চাকরিতে থাকবে না। সরকার কি এই কাজটি করতে পারবে এ প্রশ্ন রাখছি। দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দবন্ধ ‘জাতীয় ঐক্যে’র দাবির তীব্র সমালোচনা করেন ইব্রাহীম খালেদ। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া জাতীয় ঐক্য হবে না বলে যারা দাবি করছেন, তাদের তিরস্কার করে তিনি বলেন, আমাদের কিছু সুধীজন, একটি মহল বারবার বলছেন, বিএনপি-জামায়াত নাকি ৪০ ভাগ ভোটের অধিকারী। সেই জন্য তাদেরকে বাদ দিয়ে নাকি জাতীয় ঐক্য হবে না। বাঙালি জাতির হাজার বছরের সবচেয়ে কঠিন জাতীয় ঐক্য একাত্তরে হয়েছিল। এর পূর্বের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট কাস্টিং ভোটের ৭০ ভাগ পেয়েছিল। বাকি ৩০ ভাগ ভোট মুসলিম লীগ ও জামায়াত পেয়েছিল। তখন তো আমরা শুনিনি, দ্বিতীয় বৃহত্তম দলকে সঙ্গে না নিলে জাতীয় ঐক্য হবে না। এই দুই দলকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য করতে চাইলে কি মুক্তিযুদ্ধ হতো? একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল মন্তব্য করে এখন কেন বিএনপি-জামায়াতকে লাগবে সে প্রশ্নও তোলেন ইব্রাহীম খালেদ। তিনি বলেন, তখন আওয়ামী লীগও না, এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য হয়েছিল। তাহলে আজ জাতীয় ঐক্যে বিএনপিকে লাগবে কেন? জামায়াতকে কেন প্রয়োজন হবে?
‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অভাবে সন্ত্রাস হচ্ছে’ বিএনপিপন্থীদের এই বক্তব্যের জবাবে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সন্ত্রাস ফ্রান্সে হয়েছে, বারবার হচ্ছে। সেখানে কি গণতন্ত্র নেই? মানবাধিকার নেই? গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূল জায়গা তো ফ্রান্স। জার্মানি, বেলজিয়াম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাস হচ্ছে। এই সব জায়গায় কি গণতন্ত্র নেই? তাহলে সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রের নেতিবাচক সম্পর্ক খোঁজা হচ্ছে কেন? উল্টোদিকে একদলীয় শাসনের চীন, ভোটাভুটির পর প্রায় একনায়কতন্ত্রের মতো করে চলা সিঙ্গাপুর, একটু অন্য ধরনের দেশ ইরান, যেখানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নাই বলে আমেরিকা অভিযোগ করে, সেখানে তো সন্ত্রাস হয় না। বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আনার ‘কৌশল’ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে বলে দাবি করেন ইব্রাহীম খালেদ। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন জাতীয় ঐক্যে বিএনপি-জামায়াতকে রাখার বিরোধিতা করে বলেন, আজকে আমরা যখন দেখি, রাজনীতির নামে অনেক খেলা চলে। আমরা দেখি সরকারি রাজনীতি, বিরোধী রাজনীতি, অন্যান্য ছোট দল, শুধু ঐক্যের কথা বলে। কিন্তু কেউ বলে না, এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি; জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমি এইভাবে কাজ করব। আপনি আপনার কর্মসূচি জানান। জঙ্গিবাদের উত্থান রোধে আপনার ভূমিকা নাগরিক সমাজকে, মানুষকে জানান। তাহলে হয়তো আমরা একটা পদক্ষেপের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাব। মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, জঙ্গিবাদ রাজনীতির সস্তা হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। আজ শিক্ষকরা জঙ্গিবাদ বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে। এ কে এম এ হামিদ বলেন, ‘৭১-এর চেতনা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে। গ্রামে গ্রামে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি গঠনে করেই ভয়াবহ এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।



 

Show all comments
  • Rob Sarder ২৪ জুলাই, ২০১৬, ৫:০১ এএম says : 1
    I do believe Only Ibrahim Khaled can talk in such way.I also do believe that NObody in BD can talk like this.Because all are fraud(so called Intelectuals).Stop the TV talk show.Government has to learn and do needful what Ibrahim Khaled told...................
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ২৪ জুলাই, ২০১৬, ২:১৩ পিএম says : 1
    স্যার আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারের প্রতি ইব্রাহিম খালেদের আহ্বান আর্মি-পুলিশে শুদ্ধি অভিযান চালান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ