Inqilab Logo

সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ কেন্দ্রিক রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

করোনা মহামারীতেও ১৯ দিনে এসেছে ৯,৩০০ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। করোনার প্রভাবে রেমিট্যান্স আহরণের প্রধান দেশগুলোতে গত তিন মাস ধরে অচলাবস্থা। ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি এখন বিদেশে কাজ করছেন। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশেই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে। গতবছর এই প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন। কিন্তু করোনার এই সংকটকালীন সময়ে তারাও নানা সংকটে আছেন। অনেকের বেতন কমে গেছে। অনেকের কাজ নেই। অনেক দেশে লকডাউন। রেমিট্যান্স হাউস বন্ধ। অনেককে দেশে ফিরতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তবে এরপরেও প্রবাসীরা দেশে পরিবারের জন্য টাকা পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ করে দেননি। বরং ধারদেনা করে হলেও এখনো চেষ্টা করছেন টাকা পাঠাতে। আর সামনে ঈদের কারণে মে মাসে প্রবাসী আয় বাড়তির দিকে। আর তাই করোনার সংকটময় সময়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রবাসীদের কষ্টের অর্থ রেমিট্যান্স। শত সংকটেও ঈদ সামনে রেখে দেশে আত্মীয়-স্বজনদের জন্য টাকা পাঠানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি মে মাসের প্রথম ১৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৯ কোটি ১০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)। যা গত মাস এপ্রিলের চেয়ে বেশি। এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই সময়ে মে’র প্রথম ১৯ দিনে পাঠিয়েছিল ১০৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

সূত্র মতে, বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা চাইলেও দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেননি। যার কারণে গত দুই মাস রেমিট্যান্সের প্রভাব কমেছে। তবে আস্তে আস্তে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। অনেক দেশে স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করছে। প্রতি বছরই ঈদ কেন্দ্রিক দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ে। আর তাই মহামারি করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটময় মুহুর্তেও রেমিট্যান্স পালে হাওয়া লেগেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার প্রার্দুভাবের সময়ে আগের মাস এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। যা গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে পাঠানো রেমিট্যান্স আগের বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৩৫ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। এপ্রিলের আগের মাস মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

এদিকে রেমিট্যান্সে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ২ শতাংশ প্রণোদনা সহজে যেন পান সেই জন্য বেশ কিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রণোদনায় কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগত না। এর আওতা বাড়িয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্সে বিনা শর্তে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। এতদিন প্রণোদনা পেতে হলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রাপক ওঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন তা বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে।

জানা গেছে, এতদিন দেড় লাখ টাকার নিচে পাঠানো অর্থের বিপরীতে রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কোনো কাগজপত্র লাগত না। তবে দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছর হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সংস্থার ঋণের কারণে রফতানি মন্দার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩২০ কোটি বা ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

 



 

Show all comments
  • Rubel Ahmed Durjoy ২২ মে, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    Tar por o flight mile na?
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল রাহী ২২ মে, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    এই করোনা দুর্যোগে রেমিটেন্সের বিশাল ভূমিকা আছে অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখতে।
    Total Reply(0) Reply
  • চাদের আলো ২২ মে, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    প্রভাসী ভাইদের অসংখ্য ধন্যবাদ। দেশের ক্রান্তিকালে তাদের বড় অবদান েএটা।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ২২ মে, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
    খুশির সংবাদ। এখনই রেমিটেন্সই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেমিট্যান্স

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ