Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরায় রমরমা জুয়ার আসর

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ২২ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের সহযোগিতায় চলছে রমরমা জুয়ার আসর। আবাসিক হোটেল, বিভিন্ন মেস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থানের খালি জায়গায় ছোট ছোট ঘর তৈরী করে সেখানে বসানো হয়েছে জুয়ার বোর্ড। উত্তরা-পশ্চিম থানা, উত্তরা-পূর্ব থানা, উত্তরখান, দক্ষিণখান এবং তুরাগ থানা এলাকায় মাসের পর মাস প্রকাশ্যেই এসব জুয়া খেলার আসর বসেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ রহস্যজনক কারণে পুলিশ দেখেও না দেখার বান করছে। এছাড়া উত্তরা ৬ নং সেক্টরে পূর্ব পাশে রেল লাইনের পাশে মেলার নামে প্রকাশ্যেই পুলিশ প্রহরায় চলছে জুয়ার আসর। ধনী পরিবারের সন্তান ও যুবক থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররাই হচ্ছে এসব জুয়ারীদের মূল টার্গেট। জুয়াড়িরা তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জুয়া খেলতে গিয়ে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানেরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ জুয়া খেলা, আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কর্মকা-, মাদক ব্যবসা বন্ধের পরিবর্তে এসব অপরাধে সহযোগি হিসাবে কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তরা ৭নং ও ১১ নং সেক্টরের কল্যাণ সমিতির একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ জঙ্গি দমনের নামে কারণে-অকারণে বাসায় বাসায় দিনে-রাতে হানা দিচ্ছে। অথচ এলাকার কিছু আবাসিক হোটেলে যেসব অসামাজিক কর্মকা- হচ্ছে তা দেখে না দেখার বান করে আছে। মাদক ব্যবসা ও রমরমা জুয়ার আসর বসছে পুলিশের সহযোগিতায়। এ ব্যাপারে অভিযোগ করে কাজ হচ্ছে না। এলাকার স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেরা এসব আবাসিক হোটেল ও জুয়ার আসরে অবাধে যাচ্ছে। তারা বিপথগামী হচ্ছে। জুয়া খেলতে গিয়ে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা-পশ্চিম থানা এলাকায় ৭নং সেক্টরের বিজিবি মার্কেটের পেছনে ৩৫ নম্বর রোডের আবাসিক হোটেল ব্রিটিশ হোমসসহ কয়েকটি স্পটে, উত্তরা ১৩ নং সেক্টরের আবাসিক হোটেল উত্তরা ইন এবং ওই এলাকার সোনারগাঁও জনপদ সড়কের খালি জায়গায় বিভিন্ন স্থানে, ফুটপাতে ছোট ছোট ঘরে দিনে-রাতে চলছে জুয়ার আসর। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, থানার ওসি, পুলিশের টহল পার্টি এবং স্থানীয় সরকার দলীয় কিছু নেতাদের সহযোগিতায় এসব জুয়ার আসর চলছে। এসব জুয়ার আসর থেকে থানার ওসিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা এবং টহল পার্টি ও স্থানীয় নেতাদের ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয় জুয়ার আসর থেকে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় ৭ মাস আগে উত্তরা-পশ্চিম থানাধীন ৭ নং সেক্টরে আবাসিক হোটেল ব্রিটিশ হোমস থেকে ৫৪ জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উত্তরা জোনের এসি সোহেল রানার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাদের জুয়ার আসর থেকে গ্রেফতার করে। এর পর কিছু দিন জুয়া খেলা বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে হোটেল কর্তৃপক্ষ নগদ মোটা অংকের টাকা দিয়ে থানার ওসিকে ম্যানেজ করেন এবং প্রতিদিন টাকা দেয়ার চুক্তিতে জুয়ার আসর বসাতে দেয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুধু জুয়ার আসর নয়, ওই এলাকায় অধিকাংশ হোটেলেই অসামাজিক কার্যক্রম চলছে। মাদক, নারী দেহ ব্যবসা এবং জুয়া খেলার রমরম আসর বসে থানার ওসির সহযোগিতায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলী হোসেন বলেন, উত্তরা এলাকায় অনেক বিদেশী বসবাস করেন। পুলিশ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত। কোথাও জুয়া খেলা বা অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, কোথায়, কোন কোন স্থানে জুয়ার আসর বসে তা আমার জানা নেই।
এ দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৬ নং সেক্টরস্থ আজমপুর রেলক্রসিং এর পাশের রেলওয়ের ফাঁকা জায়গায় প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। প্রকাশ্যে জুয়ার আসর চালালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। স্থানীয়রা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, এসব জুয়াড়ীরা উত্তরা দক্ষিণখান থানাধীন কোটবাড়ি রেলগেট, চালাবন ভাই ভাই মার্কেট, আশিয়ান সিটি মাঠ, গাওয়াইর মাদ্রাসা রোড, ফায়দাবাদ প্রাইমারী স্কুলের সাথের মাঠ, উত্তরখান থানাধীন কংকট মাঠ, বালুর মাঠ, উত্তরা পূর্ব থানাধীন পাবলিক কলেজের পিছনে, ৪ নং সেক্টরের ১৮ ও নং রোডের রেললাইনের পাশে ও তুরাগ থানাধীন দৌড় বেড়িবাঁধ, বাইদাপট্টি এলাকায় দিনে রাতে পুলিশ প্রহরায় বসছে জুয়ার আসর।
সরজমিন দেখা গেছে, রেলওয়ের উচ্ছেদকৃত খালি জায়গা দখল করে ১০টি জুয়ার বোর্ড ও কয়েকটি নামে মাত্র কসমেটিক্সের দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানেও দেদারছে জুয়ার আসর বসে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন সরকার ও তার ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা রুবেলই ক্ষমতার দাপটে চলছে এ জুয়ার আসর। তাছাড়াও রয়েছে অটোস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ মোকলেস ও ছাত্রলীগ নেতা মোশারফ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর মিয়াকে অগ্রিম ১ লাখ টাকা এবং দৈনিক ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয় জুয়ার আসর থেকে। থানার প্রতিটি ডিউটিরত টহল টিমকে দিতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া স্থানীয় সরকার দলীয় কিছু নেতাকে জুয়ার আসর থেকে টাকা দিতে হয়। এসব জুয়া আসরের পরিচালনায় রয়েছে জুয়ারি রমজান, আলম, শ্রমির, শামিমসহ স্থানীয় যুব লীগ ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, যারা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন, তারাই টাকার বিনিময়ে উচ্ছেদকৃত জায়গায় ক্ষমতার দাপটে প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে জুয়ার আসর। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে রয়েছে পুলিশ। কেউ কিছু বলতে গেলেই এক দিকে যেমন ধর-পাকড়াওয়ের শিকার হতে হয়, তেমনি অন্যদিকে মিথ্যা মামলারও হুমকি দেয়া হয়। পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করারও অভিয়োগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ ব্যাপারে একাধিকবার স্থানীয় থানা পুলিশকে জানালেও এর কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। উল্টে ঝামেলা পোহাতে হয় স্থানী অভিযোগকারীদের।
এ বিষয়ে উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা পূর্ব বিমানবন্দর) কাফি জানান, জুয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) জানান, আমি উত্তরা পূর্ব থানার ওসিকে বলে দিচ্ছি, আপনেও তাকে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিধান ত্রিপুরার বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।



 

Show all comments
  • তুষার ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    রিপোর্টারকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উত্তরায় রমরমা জুয়ার আসর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ