পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে সবকিছুই এখন অনলাইনের প্রতি ঝুকছে। সকল কাজেই বাড়ছে প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত সব ক্ষেত্রেই এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ঘরেই বসেই এখন অনলাইন ব্যবহার করে সচল হয়ে উঠেছে করোনায় থমকে যাওয়া পৃথিবী। তবে তথ্য-উপাত্ত, গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, নতুন নতুন তত্ত্ব-পদ্ধতি উপহার দেয়া, ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে সে অনুযায়ি পরামর্শ দেয়া যাদের দায়িত্ব সেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই এক্ষেত্রে পিছিয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন অনলাইন প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে, পরীক্ষা, ভর্তি এমনকি ভাইভা নেয়ারও উদ্যোগ নিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তখন হতাশ করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদিও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাসের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং কয়েকটি জানিয়ে দিয়েছে তাদের মাধ্যমে এটি সম্ভব না।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, দেশের যে কোন সঙ্কট উত্তরণে নেতৃত্ব দেয়ার কথা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে। যদিও এখন এবং আগামী দিন হচ্ছে প্রযুক্তির। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল, এখনো সময় আছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছা করে শতভাগ না হলেও ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনলাইনের আওতায় আনতে পারবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
প্রবীণ একজন শিক্ষাবিদ বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অত্যন্ত বেহাল দশা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেই মানের গবেষণা নেই। দেশ আগামী ২০ বা ৫০ বছর পর কোথায় যাবে? কোন কোন নতুন বিষয় যুক্ত হবে, কিংবা নতুন প্রযুক্তি কি আসবে? সেই কেন্দ্রিক কোন গবেষণা নেই। অন্যরা জ্ঞান সৃষ্টি করছে আর আমরা সেটা অনুসরণ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তো এটা না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরপরই প্রাথমিক থেকে অন্যান্য স্তরগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে শিফট হচ্ছে তখন ব্যতিক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই এখনো অনলাইনে অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে চিন্তাই করছে না। তারা বলছে- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখন অনলাইনে ক্লাসের পরিবেশ ও প্রস্তুতি কোনটাই তাদের নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধের ক্ষতি পোষাতে সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি কমিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে।
গ্রীণ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক লায়লা ফেরদৌস বলেন, বিশ্বের ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, তারা সবসময়ের মতো দূর শিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা স্মার্টফোনটি শুধু সামাজিক যোগাযোগ হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। দূরদুরান্তে বসেও স্মার্টফোন ব্যবহার করে সব বিষয়ের ক্লাস করা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু সমস্যা থাকে, তবে অনলাইনে ক্লাস নেয়া অসম্ভব নয়। উদ্যোগ নিলে ইচ্ছা থাকলেই এটি করা যায়। কারণ এখন গোটা বিশ্ব, শিক্ষা ব্যবস্থা সবকিছুই অনলাইনের দিকেই ঝুঁকছে। এটি শুধু করোনাকালেই চলবে বা করোনা শেষ হয়ে গেলে শেষ হয়ে যাবে তা নয়, প্রযুক্তির এই প্রভাব রয়ে যবে। এজন্য আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে কয়েকটি প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুধু বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাইরে থাকছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেয়া মূল সমস্যার সমাধান নয়, তবে সঙ্কটকালে কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো। যদিও অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইনে ক্লাস করার প্রযুক্তি নাই। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অতি জরুরি একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। সঙ্কটে সরকার বিভাবে শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবে সে সম্পর্কে পরামর্শ নেয়া দরকার।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অনলাইন ক্লাস পরিচালনার জন্য জুম,স্কাইপ ছাড়াও আরও কিছু অ্যাপস আছে, এতে দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্লাস বা কনফারেন্স করা সম্ভব। এই অ্যাপসগুলোর সুবিধা হলো অনুষ্ঠিত ক্লাস রেকর্ড করে রাখা যায়, যা পরবর্তীতে কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস না করতে পারলে সে রেকর্ডকৃত ক্লাসটি দেখেও শেখার সুযোগ থাকে যা অফলাইন ক্লাসে সম্ভব নয়। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল ফর্ম, গুগল ক্লাসরুমসহ আরও বেশিকিছু থার্ডপার্টি অ্যাপস আছে যা দিয়ে আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়, এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থী ওই অ্যাপসটি বন্ধ করলে বা একই সময়ে অন্য কোনো এপস চালু করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তর না করতে পারলে তাদের পরীক্ষাটি বাতিল বলে গণ্য হয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও যেনো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালায় সেজন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ইউজিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, কমিশনের পক্ষ থেকে নীতিমালা জারি করা হচ্ছে। এই নীতিমালা জারি করা হলে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। মহামারীর মধ্যে আরও কতদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয় তা কেউ বলতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সবকিছু তো আর থামিয়ে রাখা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম সচল করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, নীতিমালা হলে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই প্রযোজ্য হবে। কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিকে এ সংক্রান্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেহেতু অনলাইনের প্রয়োজনয়ীতা সবাই ফিল করছে, ভবিষ্যতে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে যেন একটা নির্দেশনা দিতে পারি সেজন্য এটি করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনলাইন ক্লাসে তাঁদের অংশগ্রহণের সক্ষমতা নেই। একই ধরনের অবস্থানে আছে জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ইউজিসি অনলাইন ক্লাসের নির্দেশনা দিলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে অনলাইন ক্লাস সম্ভবপর নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের যে আর্থসামাজিক অবস্থা এতে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই মুহুর্তে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য তৈরি হবে। তবে শিক্ষকরা চাইলে কিছু রিডিং ম্যাটেরিয়াল রেকর্ড করে ইউটিউবে দিতে পারেন যা দেখে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতে পারে।
তবে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি এম রুস্তম আলী বলেন, প্রথমে দু-একটি বিভাগে অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও এখন প্রায় বিভাগেই তা শুরু হয়েছে। তবে সব শিক্ষার্থীর সুবিধা নেই। এ জন্য ক্লাসগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করা করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে সুবিধা নিতে পারে। অনলাইনে শুধু ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট হচ্ছে।
অনলাইনে ক্লাসের প্রস্তুতি চলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় থেকেই প্রযুক্তি বান্ধব করে তুলি। আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে থাকি। কোন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে সমস্যার সম্মুখীন হলে নিজ নিজ বিভাগের প্রধান ও ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ করে। এছাড়া অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অ্যাটেনডেন্সের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ হতে দেখা হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশীদ বলেন, আমরা কলেজগুলোকে বলেছি যাদের সুযোগ আছে তারা যেনো অনলাইনে ক্লাস নেয়। একইভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যাদের সুযোগ আছে তাদেরও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।