Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিপাকে গার্মেন্টস ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : দুটি বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাতকে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওই ঘটনার পর ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। এ খাতে কমর্রত বেশ কিছু বিদেশী নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক ক্রেতা সাময়িকভাবে আসতে চাইছেন না। অনেকে তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করতে বলছেন। এই কারণে সামনের মৌসুমে ক্রয়াদেশ প্রাপ্তিতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
জানা যায়, সারা বছরের ৬০ শতাংশ পোশাকই গ্রীষ্মকালীন ক্রয়াদেশ থেকে পাওয়া যায়। আগামী মাস থেকেই স্প্রিং ও সামার মৌসুমের পোশাকের ক্রয়াদেশ আসবে। এ বিষয়ে বিজিবিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগস্টের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে আস্থার জায়গা তৈরি না হলে ক্রয়াদেশ কমার আশঙ্কা আছে। যদি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্রয়াদেশও কম আসে, তাহলে লোকসান হবে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার।
গতকাল বাংলাদেশে এক সপ্তাহের জন্য আসার কথা ছিল জাপানি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সাতজনের একটি প্রতিনিধিদল। তবে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটিকে বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি দেয়নি। দেশের কয়েকটি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে ক্রয়াদেশ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। একইভাবে তুরস্ক ও ফ্রান্সের তিনটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ভ্রমণ স্থগিত করেছেন। এর আগে জাপানি ফ্যাশন ব্রান্ড ইউনিকলো তাদের কর্মীদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করে। সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম এ দেশ থেকে তাদের ব্যবসা সংকোচনের চিন্তাভাবনা করছে। অনেক বিদেশী ক্রেতাও নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এই সব কারণে বিদেশেী পোশাক বাজার হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা করেছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বিদেশী বায়াররা বাংলাদেশের বদলে দিল্লি, ব্যাংকক ও হংকংয়ে সভা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ। তবে এর মধ্যে মার্কিন ২৮ প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা জোট ‘আল্যায়েন্স’ বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ক্রেতা জোট ‘অ্যাকর্ড’ বাংলাদেশে কর্মরত ইউরোপীয় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টির কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ষষ্ঠ বৃহত্তম বাজার ইতালি। সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও দেশটিতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের। একই সঙ্গে পোশাকশিল্পে বিনিয়োগও রয়েছে দেশটির উদ্যোক্তাদের। কিন্তু সম্প্রতি গুলশানের রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৯ ইতালীয় নাগরিক হত্যার ঘটনায় হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশটির বাজার। কেননা ওই ৯ জনের মধ্যে ছয়জনই হচ্ছেন গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ ঘটনায় ইতালীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকের মধ্যে বাংলাদেশী পণ্যের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের মধ্যে দুই হাজার ৮০৯ কোটি ৪১ লাখ (২৮.০৯ বিলিয়ন) ডলার এসেছে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। এ হিসাবে ৮২ দশমিক ০৪ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ১২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। আর সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস-এই ১১ মাসেই রফতানি হয়েছে ১২৩ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। দেশটিতে প্রতিবছরই রফতানি বাড়ছে এবং মোট রফতানির প্রায় পাঁচ শতাংশ যাচ্ছে ইতালিতে। এছাড়া ইতালির অনেক উদ্যোক্তা কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতে। সব মিলে ইতালীয়দের কাছে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ স্থানই ছিল। কিন্তু গুলশান হামলায় ৯ নাগরিক হত্যায় শঙ্কিত ইতালীয় ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গুলশান হামলার কারণে ইতালির বাজারে পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কেননা ওই হামলায় যে ৯ জন ইতালীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। যারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পোশাক আমদানি করতেন এবং ঢাকায় তাদের বায়িং হাউস রয়েছে। জঙ্গি হামলার কারণে এই রফতানি ধাক্কা খাবে। ব্যবসায়ীরা আরো দাবি করেন, পোশাক খাতে সংঙ্কট নতুন কিছু নয়। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাত যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলো সেই থেকে সবার সহযোগিতায় বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা অন্যত্র চলে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল, সেই অবস্থা থেকেও পোশাকখাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন নেতারা বলেছে, পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এখন থেকেই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সস্পৃক্ত করতে হবে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হলে স্বাভাবিক থাকবে তৈরি পোশাক রফতানি। সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়ছে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে বিদেশীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপাকে গার্মেন্টস ব্যবসা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ