Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বত্রই মানুষের ভিড়

রাজধানীর সড়ক-বিপণিবিতান-কাঁচাবাজার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

রমজান মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবে পাল্টে গেছে জীবন ব্যবস্থা। অফিস-আদালত, স্কুল-কজেল-মাদরাসা বন্ধ। গণপরিবহনও বন্ধ রয়েছে দেড় মাস ধরে। মসজিদের নামাজ হয় সীমিত আকারে। তারাবির নামাজও মসজিদে ১২ জনের বেশি মুসল্লি আদায় করতে পারেন না। এই যখন অবস্থা তখন ১০ মে কিছু বিপণিবিতান ও মার্কেট খুলেছে। কাঁচাবাজার আগে থেকেই খোলা। অঘোষিত লকডাউনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য সরকার সর্বত্মক চেষ্টা করছে। কিন্তু খুব কম মানুষই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন।

করোনাভাইরাসে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২০২ জন। এটা রেকর্ড শনাক্ত। অন্যদিকে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। এ নিয়ে মৃত্যু মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৮। মোট শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৬৫ জন। সীমিত পরিসরে পরীক্ষার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও শারীরিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। রাজধানীর হাট-বাজার ও সড়কে মানুষের ভিড়। গণপরিবহন বন্ধ অথচ প্রতিটি সিগন্যালেও যানবাহনের চাপ। প্রতিদিন হাজার হাজার প্রাইভেট কার নামছে সড়কে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছেন লোকজন। পুরোদমে পুরনো চেহারায় ফিরছে রাজধানী। এতে করোনা ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করতে না পারার কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভাবতে কষ্ট হয় করোনাঝুঁকি জানার পরও মানুষ অবিবেচকের মতো আড্ডা দেয়, দলবেঁধে চলেন, কারণে-অকারণে রাস্তায় নামেন। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যানজটের সৃষ্টি হয়। রিকশা, সিএনজি, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনিট্রাক, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়িতে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। একদিকের গাড়ি বন্ধ রেখে অন্যদিকের গাড়ি যাতায়াতের সুযোগ করে দেয় ট্রাফিক পুলিশ।
রাজধানীর উত্তর দিকের প্রবেশ মুখ আব্দুল্লাহপুরে দেখা যায় যানজট। হাউজ বিল্ডিং, বনানী ও বিজয় সরণি, মহাখালি, মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, সায়েদাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সিগন্যালে যানজট। গণপরিবহন ছাড়া সবধরনের যানবাহন চলছে। রিকশা, সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে শারীরিক দূরত্ব মানছেন না কেউ। ভ্যান, রিকশা, সিএনজিতে গাদাগাদি করেই যাতায়াত করছেন মানুষ।
যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদে দেখা যায় প্রচন্ড যানজট। কাঁচাবাজার ও সড়ক মিলে একাকার হয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা আর সড়কের পাশের কাঁচাবাজার মিলে একাকার। মাছের আড়ৎ ও পাইকারি কাঁচাবাজার কার্যত রাস্তায় এসে ঠেকেছে। মানুষের ভিড়ে সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরের কথা, হাঁটাই দায় যে কারো।
টিকাটুলি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চলাচল বাড়ছে। প্রচুর গাড়ি থাকায় যানজটও তৈরি হয়েছে। অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মিনিট্রাকসহ সবধরনের যানবাহনই চলছে। শনির আখরা, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান পয়েন্টে যাত্রী পরিবহনের জন্য অনেক মোটরসাইকেল অপেক্ষা করছে। শুধু এসব এলাকা নয়, পুরো রাজধানীরই একই চিত্র। শনিরআখড়ায় আরএস, আয়েশা মোশাররফ, ইস্টার্ণ প্লাজা, ঢাকা টাওয়ার, আবেদীন টাওয়ারের মার্কেটগুলো খুলেছে। মার্কেটগুলোতে প্রবেশের হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা দেখা গেলেও দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই।
রাজধানীর কাওরানবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বনানী কাঁচাবাজার ও নতুন বাজারে কাথাও শারীরিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। ক্রেতারা যেমন মানছেন না, তেমনই বিক্রেতারাও। শারীরিক দূরত্ব মানার কোনো সুযোগই নেই মার্কেটগুলোয়। ঈদের জন্য যে সব মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতান খুলেছে, সেগুলোতে বাইরে থেকে সামাজিক দূরত্ব মানা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে দেখা গেলেও ভেতরে কিছুই মানা হচ্ছে না। মার্কেটগুলোতে কার্যত স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি সরগরম হয়ে ওঠে। পাড়ার দোকানপাট ও শপিংমলে মানুষ আসছে ঈদেও কেনাকাটা করতে। জনশ্রোতের চিত্র দেখলে মনে হবে, দেশে কোনো করোনাভাইরাসের ভয় নেই। মানুষ যেভাবে গাদাগাদি করে ছুটে চলছে, তাতে কারো মধ্যে কোনো চিন্তাই নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রমজান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ