Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমছে না জ্বালানি তেলের দাম

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি উঠেছে সর্বমহলে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই চাচ্ছেন তেলের দাম কমানো হোক। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে তেলের দাম বৃদ্ধি করে। ওই সময় বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে মূল্য সমন্বয় করা হবে। বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১২২ ডলার থেকে নেমে ৩০ ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখেছে। এরপরও দাম সমন্বয় করা হচ্ছে না। পরিবহন, শিল্প, কৃষি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। চড়া বাজারে সমন্বয় করা তেলের দামের সাথে বৃদ্ধি পাওয়া জীবনাযাত্রার ব্যয় আর নামিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় তেলের দাম সমন্বয় করা যায় কি না তা জানাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে। এ নিয়ে বিপিসি’র পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে গতকাল (মঙ্গলবার) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ইনকিলাবকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম আপাতত কমানো হচ্ছে না।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রেক্ষাপটে দেশে দাম সমন্বয়ের দাবি এসেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নামতে নামতে ব্যারেলপ্রতি ১১০ ডলার থেকে মাত্র ৩০ ডলারে ঠেকেছে। এখনই দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার সময়। তিনি বলেন, সরকার যেহেতু ব্যবসা করে না, সেহেতু দ্রুত এই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছি।
জ্বালানি সমস্যাকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করে সংগঠনের পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান অবস্থায় দেশে বিনিয়োগ হবে না। কারণ বিনিয়োগের প্রধান সমস্যা জ্বালানি। নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। আর গ্যাস যেখানে আছে সেখানে জমির দাম আকাশচুম্বী। অপরদিকে জ্বালানি তেলের দামও কমছে না। তিনি বলেন, সরকার যদি গ্যাস দিতে না পারে তাহলে গ্যাসের দামে জ্বালানি তেল দিক। তিনি বলেন, গ্যাস দিয়ে পণ্য তৈরি করতে ১০ টাকা খরচ হলে জ্বালানি তেলে একই পণ্য তৈরি করতে ১৫ টাকা বা তার বেশি লাগবে। তাহলে জেনে-বুঝে কে এই বিষ খাবে? তার মতে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে, এখনই দেশের বাজারে কমানোর সুযোগ।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ১২২ ডলারে ওঠার পর বাংলাদেশেও এর দাম বাড়ানো হয়। সেই হারে বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এরই সূত্র ধরে গত ৬ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী নিজেই এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি দেশে জ্বালানি তেলের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চান। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এটা স্বীকার করতেই হবে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। মনে হচ্ছে তেলের দরপতনটি কিছুদিনের জন্য স্থায়ী হবে। এখন বাজারদর নিয়ে চিন্তা করার যথোপযুক্ত সময়। দাম কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে অর্থমন্ত্রী জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে বলেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আলোচনা হতে পারে।
এরই আলোকে দেশের জ্বালানি তেলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বিপিসি। এ ব্যাপারে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে বিপিসি’র এ প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে কী আছে এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানো হচ্ছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা যাবে না। তবে দাম সমন্বয়ের বিষয়টি এতে রয়েছে। তিনি এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সহসাই তেলের দাম সমন্বয়ের কথা সরকার ভাবছে না।
বিপিসি জানায়, বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করায় গত ১৯ বছরে বিপিসি’র ২৯ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এবং বাংলাদেশে দাম সমন্বয় না করায় দুই বছর ধরে লাভ করছে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা। গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বিপিসি ৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। আর চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) সাত হাজার কোটি টাকা লাভের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যেই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিপিসি’র মুনাফা হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে বিপিসি তেলভেদে প্রতি লিটারে ১৩ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। যার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা হয়। জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে, যা মোট আমদানিকৃত তেলের ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ২৫ শতাংশ, কৃষি খাতে ১৯ শতাংশ, শিল্প খাতে ৪ শতাংশ এবং গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ ব্যবহার হয়।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম না কমার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে বিপিসি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, তেলের দাম সরকারের নির্বাহী আদেশে বাড়ানো-কমানো হয়, এ বিষয়ে বিপিসি’র কিছু করার নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার বিষয়টি সরকার ওয়াকিবহাল আছে। সরকার তেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর জন্য যখন যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবেই কাজ করা হবে। এই কর্মকর্তার মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদনকারী দেশগুলো সমস্যায় পড়েছে ঠিক, তবে বাংলাদেশের মতো আমদানিকারক দেশগুলো স্বস্তিতেই আছে। বিপিসি অতীতের সব লোকসান কাটিয়ে মুনাফার মুখ দেখতে শুরু করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কমছে না জ্বালানি তেলের দাম

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ