Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেশন জটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

ছাত্রলীগের অবরোধ অচল চবি ব্যাপক গোলাগুলি

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাকিরুল হক তরু, চবি থেকে : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতদের অবরোধে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় দিনের মতো অচল ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। অবরোধের কারণে কোনো শাটল ও ডেমু ট্রেন ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এতে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। তবে শিক্ষক বাসসমূহ যথারীতি চলাচল করে। অবরোধে অচলাবস্থার কারণে নির্ধারিত কিছু পরীক্ষা হলেও বেশিরভাগ ক্লাস হয়নি। দিনভর ক্যাম্পাসজুড়ে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে চরম উত্তেজনা অব্যাহত থাকে। বুধবার রাতে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় আবাসিক শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। এই ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছে বলে জানা যায়। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুই দিন সরকারি ছুটি শেষে রোববার থেকে ফের অবরোধ চলবে বলে জানান ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান বিপুল। তিনি বলেন, ওই দিন থেকে অবরোধ আরও কঠোরভাবে পালন করা হবে। এদিকে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের অবরোধের মুখে অচলাবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, অবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের সেশন জটের মুখোমুখি হতে হবে।
অবরোধের সমর্থনে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা নগরীতে ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা ক্যাম্পাসে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। সকালে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সাহাবুদ্দিন বলেন, বুধবার সকাল থেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবরোধের কারণে গতকালও কোনো ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় যেতে পারেনি।
এদিকে বুধবার গভীর রাতে চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিত ও পদপাওয়া নেতাদের মধ্যে তুমুল সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। এসময় দুই পক্ষই ব্যাপক গুলি ছুঁড়ে। এতে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল ও কটেজে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীদের সঙ্গে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়াদের সংঘর্ষ হয় বলে হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান। তিনি বলেন, রাতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষই ফাঁকা গুলি করেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনার পর ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বুধবার ঝাউতলা স্টেশনে অবরোধকারীদের ছোড়া পাথরে দুই রেলকর্মী আহত হওয়ার পর বন্ধ থাকা শাটল ট্রেন বৃহস্পতিবারও চালু হয়নি। এদিনও সকালে অবরোধকারীদের পক্ষে মিছিল হয়েছে ক্যাম্পাসে। এর আগে নগরীর ঝাউতলা স্টেশনে ট্রেন আটকে শাটলের চালককে ধরে নিয়ে যায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত পদবঞ্চিতরা। পরে বেশকিছুক্ষণ পর পুলিশসহ অন্যান্য চালকেরা শাটলের চালককে উদ্ধার করে।
এরপর ট্রেনটি ষোলশহর স্টেশনের অদূরে বন গবেষণাগার এলাকায় পৌঁছালে আবারও ট্রেন অবরোধের চেষ্টা করে পদবঞ্চিতরা। এসময় তারা ট্রেন থামাতে ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের থামাতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় ট্রেনটি পুনরায় ষোলশহর স্টেশনে ফিরে যায়।
মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই দিন আগে গত রোববার চবি ছাত্রলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পরদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। দুই দিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করার পর বুধবার অবরোধের ডাক দেয় তারা। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই টিপুকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বি সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদী কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা সাত মাসে চার দফা সংঘর্ষে জড়ানোয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। গত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
মিষ্টি খেলেন ভিসি
অপরদিকে অচলাবস্থার মধ্যেই ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে ছাত্রলীগ। নতুন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর টিপু ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী সুজনের নেতৃত্বে এই আনন্দ মিছিল হয়। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বর, শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এসময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে। নতুন কমিটির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এডিশনাল এসপি মোস্তাফিজুর রহমান, হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি লুৎফর রহমান, হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইলসহ অন্যরা। সাক্ষাৎ শেষে ছাত্রলীগ নেতারা ভিসিকে মিষ্টিমুখ করান।


















 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সেশন জটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ