Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেডে প্রস্রাব, ছিল না পরিষ্কার চাদরও

প্রত্যক্ষদর্শী রোগীর বর্ণনায় ঢামেক হাসপাতাল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

গত কিছুদিন থেকে কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকায় নমুনা টেস্ট করেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চলে যাই। সেখানে ভর্তির পরে আমাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। গিয়ে দেখি কোনো বেড ফাঁকা নেই। নার্সকে বিষয়টি জানানো পরে তিনি বললেন কিছুক্ষণ পর বেড ফাঁকা হবে। একটু পরে দেখি বেড ফাঁকা হয়। দুই বেডের রোগী মারা গেলে সেখানে আমাকে থাকতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে দেখি আমাকে যে বেডে থাকতে বলা হয় সেখানে প্রস্রাব করা। দুইজন বয়ষ্ক মানুষ সেই বেডে ছিলেন। নার্স জানালেন আজকের মধ্যে কোনো চাদর দেয়া হবে না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন একটি দৈনিক পত্রিকার একজন সাংবাদিক।

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের আশঙ্কায় উপসর্গ দেখে তিনি নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় নমুনা পরীক্ষার পরে বাসায় না থেকে উপসর্গ থাকায় ও অসুস্থ হওয়ার এই সাংবাদিক শনিবার সকালেই চলে যান সরাসরি ঢামেকে। সেখানে ভর্তির কাজ শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল সাড়ে তিনটা বাজে। ভর্তি শেষে তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে বলা হয়। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ওয়ার্ডে যেতে বলা হয়।

তিনি বলেন, ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি সব সিটেই রোগী আছে। তাই নার্সকে জিজ্ঞেস করি কোথায় থাকব। তখন তিনি আমাকে একটি ওয়ার্ড দেখিয়ে দেন। আমি সেখানে দেখি কোনো বেড ফাঁকা নেই। নার্সকে জিজ্ঞেস করার পরেই তিনি বলেন, একটু অপেক্ষা করেন, বেড ফাঁকা হবে। আমি তাই অপেক্ষা করতে থাকি। এর একটু পরেই দুইজন রোগী মারা গেলে সেখানে বেড ফাঁকা হয়। নার্স তখন আমাকে বললেন সেই বেডে গিয়ে ওঠার জন্য। সেখানে গিয়ে দেখি আমাকে যে বেডে থাকতে বলা হয় সেখানে প্রস্রাব করা। দুইজন বয়ষ্ক মানুষ সেই বেডে ছিলেন। অন্য বেডের অবস্থাও প্রায় একই রকম।

তিনি আরো বলেন, চাদর পাল্টানোর কথা বললে নার্সরা আমাকে জানান আজকে আর কিছু করার নেই। চাদর না আসা পর্যন্ত আর দেয়া যাবে না। এভাবেই আজকে থাকতে হবে। লাশগুলো নিয়ে যাওয়ার পরে কোনো জীবাণূনাশক ছেটাতেও দেখিনি আমি। আর সেখানেই থাকতে বলা হচ্ছিল আমাকে। তাই আমি সেখান থেকে চলে আসি। তিনি বলেন, আমি এখন বাসায় আছি। হাসপাতালে যে অবস্থা দেখেছি তাতে অবশ্য সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেশি মনে হচ্ছিল। আপাতত তাই বাসাতেই নিজেকে আইসোলেশনে রাখছি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু যেহেতু হাসপাতালে গিয়েছিলাম তাই এখন আরও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

গণমাধ্যম কর্মীর এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম কে এম নাছির উদ্দীন বলেন, এ বিষয়টি আমি জেনেছি। এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করছি। এরপরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে উনি বাসায় চলে যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ওনার যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে সেটা তো সমাধান করা যেত। চাদর না পেলে সেখানে লোক আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেও অ্যারেঞ্জ করা যেত। উল্লেখ্য, এর আগে ৭ মে জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় দৈনিক ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসলাম রহমানের। সেদিন মৃত্যুর পরেও তার লাশ হাসপাতালে অবহেলায় ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।



 

Show all comments
  • ইলিয়াস ১০ মে, ২০২০, ১০:২৬ পিএম says : 0
    দায়িত্বশীলের দায়ীত্বজ্ঞানহীন কথা। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লেজে গোবরে অবস্থা দেখলে জানতে ইচ্ছে করে যে, এদেশটা আসলে চলে কেমন?
    Total Reply(0) Reply
  • মহি উদ্দিন ১১ মে, ২০২০, ৯:৪৯ এএম says : 0
    সব হাসপাতালে রোগীরা অবহেলার স্বীকার
    Total Reply(0) Reply
  • এক পথিক ১১ মে, ২০২০, ৯:৫৬ এএম says : 0
    "চাদর না পেলে সেখানে লোক আছে তাদের সঙ্গে কথা বলেও অ্যারেঞ্জ করা যেত।" - বিগ্রেডিয়ার সাহেব কোন লোকের কথা বললেন বুঝতে পারলাম না। নার্সকে বাদ দিয়ে রোগীরা কি হাসপাতাল চষে বেড়াবে পরিচ্ছন্ন বেড পাবার জন্য?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১১ মে, ২০২০, ১০:৫৫ পিএম says : 0
    আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন ঢাকায় হলীফেমেলী হাসপাতাল (পরিচালিত হত মিশনারিদের মাধ্যমে) এর পরই ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। সেসময় থেকেই এর প্রধান হিসাবে সেনাবাহিনী থেকেই পদস্ত ডাক্তাররা এই হাসপাতাল পরিচালনা করতো। আমি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যখন এই হাসপাতালেই মুক্তিযোদ্ধাদের হাসপাতাল ছিল তখন আমি প্রায় দিনই এখানে আসতাম আমার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে। সেসময়ে ঢামেক দেখেছি কত যত্ন করে আমাদের চিকিৎসা করা হতো আর এখন এর অবস্থা যা শুনি মনে হয় এটা একটা রুগীদের আস্তাবল। এখানে রুগীদের এনে জমা করা হয় এরপর দালালেরা এদেরকে পটিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায় আর চিকিৎসার নামে রুগীদের গলা কাটে। এটা একটা রুগীদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, এখানকার ডাক্তার, নার্স সবাই প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালের মালিকদের দালাল হিসাবে কাজ করে। এখনে চিকিৎসার জন্যে কোন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া মুশকিল (বাংলাদেশের সকল সরকারি ডাক্তার ও নার্সেরা এখন দালাল হয়েগেছে) এটাই সত্য তাই না?? আসুন আমরা সবাই মিলে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ্‌ যেন বাংলাদেশের সরকারি ডাক্তার ও নার্সদেরকে সত্য কথা বলার ও সততার সাথে চলার যোগ্যতা দান করেন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বেডে-প্রস্রাব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ