Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ব্যাধি যেন না ঢুকতে পারে

অভিভাবক ও প্রিন্সিপালদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদ নামের ব্যাধি যাতে ঢুকতে না পারে, এ বিষয়ে অভিভাবকসহ কলেজ প্রিন্সিপালদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসায় জঙ্গিবাদ ঢুকবে আর আমরা হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকব, তা হয় না। সমগ্র জাতি একসঙ্গে মিলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেব।’ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সব কলেজ প্রিন্সিপালের সঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। কারা এসব কর্মকা-ে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি বলেন, যারা ‘নামেমাত্র’ শিক্ষক অথচ ‘কুশিক্ষক বা কুলাঙ্গার’, যারা শিক্ষার্থীদের ‘বিপথে’ পরিচালনা করেছে; তাদের ‘টিকতে’ দেয়া হবে না। শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাও সচেতন থাকুন, আপনাদের শিক্ষার্থীরা যেন এ ব্যাধিতে না জড়ায়।’ শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাও খেয়াল রাখবেন, শিক্ষকদের ভেতর যেন কোনো কুশিক্ষক, কুলাঙ্গার ঢুকে না পড়ে।’ আপনার যারা আছেন, তারা প্রত্যেকে নিজেরদের প্রতিষ্ঠানের নেতা। আপনাদের দায়িত্ব নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। প্রতিরোধে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা। কলেজ পর্যায়ে জঙ্গিবাদের ব্যাধি ঢুকতে দেবেন না। কোনো শিক্ষার্থী যাতে জঙ্গিবাদের ছোবলে বিপথগামী না হয়, একজন শিক্ষার্থীও যেন মূল শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেহাত হয়ে না যায়, সেদিকে আপনাদের সচেতন থাকতে হবে।’
জঙ্গিদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নাহিদ বলেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠা তাদের উদ্দেশ্য নয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা যদি ইসলামের পথেই থাকত, তাহলে গুলশানের হামলার দিন তারাবির নামাজের সময় নামাজ না পড়ে তারা মানুষ হত্যায় লিপ্ত থাকত না। তিনি বলেন, ‘হাজার বছরের ইসলামী ঐতিহ্যের সঙ্গে কথিত ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যে হামলা চালানো হচ্ছে তার কোনো মিল নেই। ইসলামে মানুষ হত্যা মহাপাপ অথচ তারা ইচ্ছেমতো মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে ইসলামের নামে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। আজকে আমাদের মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়েছেন। সোচ্চার হয়েছেন জনগণ। এ ধরনের হামলা আর তারা হতে দেবেন না।’
জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ জঙ্গিবাদ ইরাক সিরিয়ায় যত ইসলামী ঐতিহ্য ছিল সব ধ্বংস করে দিয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এমনকি উন্নত দেশও জঙ্গিবাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। জঙ্গিবাদ কোনো দেশীয় সমস্যা নয় এটা বৈশ্বিক সমস্যা।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও এ জঙ্গিবাদের সঙ্গে কোনো পরিচয়ই আমাদের ছিল না। নতুন একটি সঙ্কটের মুখোমুখি আমরা, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়গুলো মনিটরিং করছেন এবং এ সঙ্কট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েছেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা করা হত। কারণ সেখানে দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করে। বিগত হামলাগুলো থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি, সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাচ্ছে। এর সাথে নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘যাদের নাম এসেছে সে সব প্রতিষ্ঠানকে আমরা সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তারা আমাদের নির্দেশনা মানেননি। আবারও তাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। আমরা সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের বাইরেও শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের নজর রাখতে হবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। জাতির গৌরবময় তথ্য অর্জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলে ধরতে পারবে, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজের দেশ নিয়ে গর্ব করতে পারে।’ শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘১০ দিন অনুপস্থিত থাকলেই শিক্ষার্থীকে জঙ্গি ভাবার কিছু নেই। আগে তার পরিবারের খোঁজ নেবেন। হয়তো সে অসুস্থও থাকতে পারে। তার পরিবার যদি বলে সে নিখোঁজ, তারপর আপনারা নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন।’ এ সময় তিনি জঙ্গিবাদ দমনে পারিবারিক, সামাজিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি বলয় তৈরি করার আহ্বান জানান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যায়ের ভিসি হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব এ এস মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, পাবলিক বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যলয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. দিল আফরোজাসহ প্রায় এক হাজার ২০০ কলেজের প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপালসহ শিক্ষকগণ।








 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদের ব্যাধি যেন না ঢুকতে পারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ