Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দু’দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে : হাসিনা, নিজেকে একা ভাববেন না : মোদি

ভিডিও কনফারেন্সে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধন

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৬ পিএম, ২১ জুলাই, ২০১৬

ভারত-বাংলা সম্পর্ক চিরকালের : মমতা
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সবসময় নয়াদিল্লিকে তার পাশে পাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের বিকাশ বিষয়ে মোদি বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কা-ারি। ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরো ওপরে যাবে এবং দুই দেশের মধ্যে উন্নতি বৃদ্ধি হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে  মোকাবিলা করা হয়েছে, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  নেতৃত্বের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পাশে ভারত আগেও ছিল, এখনো আছে। যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় ভারত সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।
এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে তা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চেকপোস্টের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার বাণিজ্য আরো বাড়বে।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেনাপোল ও পেট্রাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের উদ্বোধন করেন।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে  চেকপোস্টের উদ্বোধন করা হয়। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশে ২টি চেকপোস্টের উদ্বোধন করেন। ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও তার কার্যালয়  থেকে যোগ দেন।
শুরুতে কয়েক লাইন বাংলা বলে সবাইকে অভিনন্দন জানান নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভাইবোনদের আমার নমস্কার। আজ থেকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান আরো সহজ হবে, আমরা আরো কাছাকাছি এলাম।
এরপর মোদি হিন্দিতে কথা শুরু করে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। পবিত্র মাসে ঢাকা-কিশোরগঞ্জে হামলা, মন্দিরে, পুরোহিত, সাধারণ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলারও নিন্দা জানান তিনি। হামলায় হতাহত নিরীহ মানুষের সঙ্গে পুরো ভারতের মানুষের সমবেদনা রয়েছে বলেও জানান নরেন্দ্র মোদি।
মোদি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ পরীক্ষার সময় পুরো ভারত আপনার সঙ্গেই আছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে যেভাবে ধৈর্যের সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাতে আমি মন থেকে আপনাকে অনেক অভিনন্দন জানাই। আপনার নেতৃত্ব পুরো অঞ্চলের জন্য একটি উদাহরণস্বরূপ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের এই লড়াইয়ে আপনি নিজেকে কখনো একা ভাববেন না, ভারতের পূর্ণ সমর্থন আপনার সাথে আছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এটাও আশ্বাস দিতে চাই যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপনার এই যে লড়াই তাতে ভারত আপনাকে সব ধরনের সহায়তা দিতে সব সময় প্রস্তুত। মাননীয়, আমরা এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখান শুধু আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোই এক নয়, আমাদের বিকাশের পথও একসঙ্গে জড়িত। সেই সাথে আমাদের সমান সম্ভাবনাও রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি ভারতের বিকাশ আমাদের সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই একসাথে উন্নতির পথে যাত্রা করছে। এ কারণে আজ পেট্রাপোল ও বেনাপোল বন্দরের ইন্টিগ্রেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন। এটা দুই দেশের সার্বিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ দরজা। দুই দেশের যৌথ বাণিজ্যের ৫০ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে হয়।
বেনাপোল-পেট্রাপোল পুরো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বলে উল্লেখ করেন মোদি। শুধু এখানে নয়, এর আগে আগরতলায়ও ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। মোদি বলেন, এ ছাড়া আরো আটটি এ ধরনের  চেকপোস্ট তৈরি করা হবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি মনে করি আর্থিক বিকাশ ও কানেক্টিভিটি একে অন্যের সাথে জড়িত। এই বন্দর শুধু বাণিজ্যকে নয় বরং আমাদের দুই দেশের মানুষের মধ্যেও সম্পর্কের বিকাশ ঘটাবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিকাশে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। এই বন্দর দুই দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হবে বলে মনে করেন তিনি। মোদি বলেন, বাংলাদেশের পাশে ভারত আগেও ছিল, এখনো আছে। যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় ভারত সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যে কার্যক্রম আমরা করব, তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানে ও ঈদের দিন শোলাকিয়ায় যেসব সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে এর তীব্র নিন্দা জানাই। সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে নিজ নিজ এলাকায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। দেখতে হবে কারা এ সন্ত্রাসী কা-ের সঙ্গে জড়িত। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাব।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশের অর্থনীতি যখন শক্তিশালী হচ্ছে, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এ ধরনের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। আমরা এটা মেনে নেব না। কাজেই এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে (বাংলাদেশে) ঘটনা ঘটিয়ে ওখানে (ভারত) গিয়ে পালাবে, ওখানে ঘটনা ঘটিয়ে এ পাড়ে এসে পালাবে এটা কিন্তু আর চলবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সবসময় সহযোগিতা থাকবে কোনো দেশই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেবো না।   
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দুই দেশের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। তিনি বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে হলে প্রতিবেশী  দেশগুলোর সাথে একটা সদ্ভাব থাকা একান্ত প্রয়োজন।
আগামীতে বাংলাদেশ-ভারত আরো গভীর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে মজবুত ভিত্তি রচনা করবে বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুই দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত ভিত্তি পাবে। কারণ এ দুই দেশের সম্পর্ক মানুষে-মানুষে। এটি সেই ১৯৭১ সাল থেকেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সড়ক-রেল চালু হয়েছে। সার্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা আরো এগিয়ে যাবো। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান সবসময় চির স্মরণীয় বলেও মত দেন শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, আমাদের সরকার মনে করে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তারা সবসময় পাশে থাকবেন। দুই দেশের জনগণের জন্যই শক্তিশালী  যোগাযোগ দরকার ছিল। তা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা আরো সুসম্পর্কে যাবে। এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে; এটিও আমাদের বাণিজ্য উন্নতির অন্যতম দিক।
ভিডিও কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার বক্তব্যে বলেন, আজকে একটি ঐতিহাসিক দিন। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক বন্দর নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। রেলওয়ে চালু করায় একাত্মতা আরো ভালো বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঈদ মোবারক জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা খুব ভালো থাকবেন। আমাদের ভারত ও বাংলা সম্পর্ক চিরকালের, চিরদিনের, চিরনবীন। চিরদিনই সবাই সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই। নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। চার শ’র ওপর ট্রাক যাতায়াত করবে। এছাড়া চ্যাংড়াবান্দা, হিলি আছে। আমরা আরো কিছু চেকপোস্ট করেছি। ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটানের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য ও সম্পর্ক উন্নতি হবে। আমাদের একটা ভৌগোলিক সীমানা আছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এক। ফলে সম্পর্কোন্নয়ন দরকার, অবকাঠামো দরকার।
মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সবসময় বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসে। আরো ভালো সম্পর্ক হোক চাই। আমরা অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করব। ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য দুই দেশের শেয়ারিং খুব দরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দু’দেশের অর্থনীতি আরো মজবুত হবে : হাসিনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ