Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাইব্যুনালে তাহের-ননীর মৃত্যুদন্ড

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার রাজাকার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী। ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে অথবামৃত্যু পর্যন্ত গুলি চালিয়ে তাদের দ- কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আসামি তাহের ও ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে চারটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের দায়ে দুজনের মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় অভিযোগে হত্যা, নির্যাতন, লুট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় আমৃত্যু কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ অভিযোগে হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে গণহত্যার ঘটনায় দুই আসামির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণ :
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল নেত্রকোণার ওই দুই রাজাকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনালের এই মন্তব্য এসেছে বলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। প্রসিকিউটর মালুম বলেন, ইতোমধ্যে ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, রায়ে সেই যুক্তি খ-ন করে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়েছে, ত্রিশ লাখ শহীদ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্কের অবকাশ নাই। এই ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মদানেই স্বাধীন বাংলাদেশ।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে বাঙালি জাতি ও মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস ধরে যে যুদ্ধ করেছে, তা ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন, লাখ লাখ নারী তার সর্বোচ্চ সম্মান বিসর্জন দিয়েছেন, প্রায় এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন, লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচু্যুত হয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস নিঃসন্দেহে জাতির পবিত্র আবেগ ও মুক্তিযুদ্ধের অহংকারের সঙ্গে মিশে আছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নী। আসামিপক্ষে ছিলেন আবদুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এটি ২২তম মামলার রায়।
বিচার কার্যক্রম :
নেত্রকোণার মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে ননী ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করলে পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালে আসে। ২০১৩ সালের ৬ জুন এ দুই আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর দেওয়া হয় ৬৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন। ওই বছর ১২ আগস্ট দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোণার পুলিশ। পরদিন তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পাঠানো হয় কারাগারে। ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২ মার্চ ছয় অভিযোগে তাহের ও ননীর বিচার শুরু হয়। গত ১০ জানুয়ারি বিচার কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাইব্যুনালে তাহের-ননীর মৃত্যুদন্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ