Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হামলার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা সময়ের ব্যাপার সংসদে-প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০০ এএম, ২১ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী জঙ্গি ও এই ঘটনার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা সময়ের ব্যাপারমাত্র। গুলশান সন্ত্রাসী হামলার মদদদাতা, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতা এবং পর্দার আড়ালে যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে গোলাম দস্তগীর গাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্দার অন্তরালে থেকে দেশি-বিদেশি মদদদাতা, পরামর্শদাতা, পরিকল্পনাকারী ও যারা অস্ত্র-অর্থ দিচ্ছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে। এই জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় আমরা বিদেশি সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। যেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে আছে তাই জঙ্গি অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া কঠিন না। তাদের খুঁজে বের করা সময়ের ব্যাপারমাত্র।
তিনি বলেন, গুলশানের জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্ত চলছে। কয়েকজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। কয়েকজন সন্দেহভাজন অপরাধীর ভিডিও চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। যারা এই অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারবেন তারা যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। তারপরও বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতি করে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গুলশানে হামলার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা কঠিন হবে না।
১৫ বছরে ১ কোটি কর্মসংস্থান হবে
গোলাম দস্তগীর গাজীর এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন শিল্প ও সেবাখাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অ্যাক্ট ২০১০ প্রণয়ন এবং বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেছি। ইতোমধ্যে ৭৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। সরকার ও ব্যক্তি খাতের সম্মিলনে অবকাঠামো খাতসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করার জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) অথরিটি করা হয়েছে। এ সকল খাতে বিনিয়োগ করার জন্য পিপিপি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।
এ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ শিল্পখাতের জন্য ৫-১০ বছর কর দেয়ার সুবিধা, শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে শূন্য শুল্ক হারে যন্ত্রপাতি আমদানি ও বন্ড সুবিধার আওতায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধা, দ্বৈত কর দেয়ার সুবিধা (বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পাদিত দ্বি-পাক্ষিক কর প্রত্যাহার চুক্তির আলোকে), ত্বরান্বিত অবচয় সুবিধা প্রদান, রয়্যালিটি, কারিগরি সহায়তা, ইউরোপসহ অধিকাংশ উন্নত দেশে ডিউটি ও কোটা ফ্রি প্রবেশ সুবিধা, শতভাগ বিদেশি মালিকানার সুবিধা প্রদান, শতভাগ মূলধন ও মুনাফা প্রত্যাবাসন সুবিধা প্রদান, বিদেশ কর্মীদের কর্মানুমতি প্রদান, ইউডি, আইআরসি এবং বন্ড নবায়ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
২ লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী দুই বছর ৮ মাসের মধ্যে দেশের ২ লাখ ৮০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। মাঠ প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেশে মোট ২ লাখ ৮০ হাজার গৃহহীন পরিবার রয়েছে। যাদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী ২ বছর ৮ মাসের মধ্যে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লাখ ১০ হাজার, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ হাজার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত গৃহায়ন তহবিলের মাধ্যমে ২০ হাজার গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার পরিবার, ব্যারাক হাউজের মাধ্যমে ১৮ হাজার ৫শ’ পরিবার, বহুতল ভবনের মাধ্যমে ২০ হাজার পরিবার, ৩ পার্বত্য জেলায় বিশেষ প্রকল্প হিসাবে বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণ করে ১ হাজার ৫০০ পরিবার, কক্সবাজার জেলায় ১৪০টি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ৪ হাজার ৪০৯টি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
৭ম পঞ্চবার্ষিকী বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে
সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পূর্বের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার তুলনায় চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি কিছুটা ভিন্নতর। পূর্বে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রকল্পের তালিকা প্রদান করতঃ বিনিয়োগধর্মী পরিকল্পনা করা হতো। বর্তমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি একটি দিক-নির্দেশনামূলক দলিল, যেখানে অভিষ্টলক্ষ্য ও তা অর্জনে কৌশলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়গুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবে। ইতোমধ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক প্রথম অর্থবছর সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, আইসিটি, পরিবেশ ইত্যাদি খাতে বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিতকরণ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাবরেটরির সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় জিডিপি’র শতকরা শূন্য দশমিক ৬ ভাগ থেকে শতকরা ১ ভাগে বৃদ্ধিকরণ, অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশু-মৃত্যুর হার (১ হাজার জীবিত জন্মে) ৪১ থেকে ৩৭ জনে নামিয়ে আনা, মাতৃ-মৃত্যুর হার (১ লাখ জীবিত জন্মে) ১৭০ থেকে ১০৫ জনে নামিয়ে আনা এর অন্যতম লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, হাম ও অন্যান্য সংক্রামক রোগে আক্রান্ত না হবার পর (বার মাসের কম বয়সী শিশু) শতভাগ নিশ্চিতকরণ, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা সন্তান জন্মের হার বর্তমানের শতকরা ৪২ দশমিক ১ ভাগ থেকে শতকরা ৬৫ ভাগে উন্নীতকরণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বর্তমানের শতকরা ৬২ ভাগ থেকে শতকরা ৭৫ ভাগে উন্নীত করা হবে।
শান্তিরক্ষা মিশনের সদস্যগণ দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে
এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশসহ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের সুনাম বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে একটি খসড়া জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ৪০টি দেশে মোট ৫৫টি মিশনে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপির ১ লাখ ৪৫ হাজার ২২৯ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। পুলিশের ১ হাজার ১২৭ জন এবং সশস্ত্র বাহিনীর ৭ হাজার ৩৫০ জন শান্তিরক্ষী বর্তমানে মোতায়েন রয়েছে। ১ হাজার ২১৯ জন নারী সদস্য শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে এবং ১৯৮ জন বর্তমানে মোতায়েন রয়েছে।
রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৩ প্রকল্প চলমান
ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও যাত্রী সেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধিসহ রেলওয়ের উন্নয়নে ৮৬ হাজার ৩০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৪৩টি প্রকল্প চলমান।
তিনি জানান, বিগত ৭ বছরে সর্বমোট ৪৬টি লোকোমোটিভ, ২৪৬টি ট্যাংক ওয়াগন, ২২০টি কন্টেইনারবাহী ফ্ল্যাট ওয়াগন, ৯৭টি যাত্রীবাহী কোচ ক্রয় করা হয়েছে এবং ২৬০টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আরো ১০০টি লোকোমোটিভব এবং ৭৭৩টি যাত্রীবাহী কোচ ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর
যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে। সফলভাবে উৎক্ষেপিত হলে নির্দিষ্ট অরবিটার স্লট ১১৯ দশমিক ১০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পৌঁছাতে ২ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
তিনি বলেন, সফল উৎক্ষেপণের পর স্যাটেলাইটের ইন-অরবিট টেস্ট (আইওটি) সম্পন্ন করতে আনুমানিক ৩ মাস সময় লাগবে। সম্পূর্ণ টেস্টিং মিশনিং শেষে আগামী ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পূর্ণাঙ্গভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করা যায়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধু-২ ও বঙ্গবন্ধু-৩ নামক আরও দুটি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে দেশের স্থল ও জলসীমায় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের নিশ্চয়তা, স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবা প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। তার মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি দেশের বাইরে ব্যবহার করা হবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এসব ট্রান্সপন্ডার লিজের মাধ্যমে বৈদেশিক মদ্রা আয় করা হবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবার পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ (ডিরেক্ট টু হোম) ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে ই-সেবা নিশ্চিত করাসহ স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনেও অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয়সহ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পণ্যে ভেজাল দিয়ে দেশের সুনাম নষ্ট করবেন না : প্রধানমন্ত্রী
মুনাফা করতে গিয়ে পণ্যে ভেজাল দিয়ে ‘দেশের ক্ষতি ও নিজের বিপর্যয়’ ডেকে না আনার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে একসময় রফতানির চিংড়ির মধ্যে লোহা ঢুকিয়ে দেওয়ার উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করব, যে কোনো পণ্য রফতানি করি না কেন, গুণগত মান যেন ঠিকঠাক থাকে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। সবাইকে আমার অনুরোধ, সামান্য মুনাফা করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি করা এবং নিজের বিপর্যয় যেন টেনে না আনি, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। রফতানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারÑউভয় ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি মনে রাখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের যে পরিমাণ সমুদ্রসীমা-নদ-নদী-খাল-বিল-হাওর রয়েছে, তাতে যতœবান হলে মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ নয়, প্রথম হতে পারে বাংলাদেশ। এ জন্য মৎস্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও রফতানিতে ব্যবসায়ীদের গুণগত মান ঠিক রাখতে হবে।
সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গভীর সমুদ্রে সম্পদ আহরণের উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সম্পদ আহরণের উদ্যোগ না নিলে এগুলো বেহাত হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা যদি ৫ বছরের মধ্যে এই সম্পদ আহরণ না করি তাহলে এগুলো হাতছাড়া হওয়ার ভয় আছে। কাজেই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে যেমন খনিজ সম্পদ পাওয়া যাবে আবার খাদ্য সম্পদও প্রচুর আছে। যারাই আসুক আমরা তাদের সম্পদ আহরণের সুযোগ দিতে চাই। অন্তত আমরা সমুদ্র সম্পদ আহরণ শুরু করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্রসীমা আইন করে গিয়েছিলেন এবং তারই ভিত্তিতে আমরা এই সমস্যার সমাধান করে সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি।
তিনি বলেন, এখন এই সমুদ্রসীমাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এখানে বহুমুখী সম্পদ রয়েছে। এখানে যেমন খনিজ সম্পদও পাওয়া যাবে আবার খাদ্য সম্পদও প্রচুর আছে। সেগুলো এখন প্রয়োজন আহরণ করা এবং ব্যবহার করা। অর্থাৎ ‘ব্লু ইকোনমি’র উপর আমরা জোর দিয়েছি। তার সরকার ইতোমধ্যে সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ জরিপ-গবেষণা সম্পন্ন করার জন্য ‘আর ভি মিন সন্ধ্যানী’ নামে একটি জরিপ জাহাজ ক্রয়ের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। অনেকেই বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করবেন কিন্তু কাউকেই আমরা ঠিক তেমন আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখছি না। অথচ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান তারা জানেন যে, আমরা যে অঞ্চলটা পেয়েছি সেখানে বিশাল মৎস্য ভা-ার রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা মৎস্যসম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃষিজ আয়ের প্রায় ২৪ ভাগ আসে এ খাত থেকে। জিডিপিতে মৎস্যসম্পদের অবদান প্রায় ৪ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের ৬০ ভাগ জোগান দেয় মৎস্য খাত। তিনি আরও বলেন, এসব কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই দেশের মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। আমরা যেখানেই যাই, যত কিছুই খাই, শেষ পর্যন্ত মাছ-ভাত না খেলে আত্মতৃপ্তি আসে না। সুতরাং, আমরা যারা মাছ খাই, তারা নিজেরা খাব, যারা খেতে পারে না, তাদেরও খাওয়ার ব্যবস্থা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, নদীগুলোকে ড্রেজিং করতে হবে। এতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা রোধ হবে। এ ছাড়া বন্যাপ্রবণতা হ্রাসের পাশাপাশি নদীতে পানি ধরে রাখা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, গবেষণাসহ মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদ নেতৃবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, এনজিও কর্মকর্তা, বিদেশী কূটনেতিক, উন্নয়ন সহযোগী দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং মৎস্য, পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করেন। মৎস্যসম্পদ উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় অভাবনীয় সাফল্যের জন্য ৬টি শ্রেণিতে ২০ জন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান-সংস্থাকে জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ২০১৬ প্রদান করা হয়। ৫টি স্বর্ণ এবং ১৫টি রোপ্য পদক প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্রসীমা আইন করে গিয়েছিলেন এবং তারই ভিত্তিতে আমরা এই সমস্যার সমাধান করে সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। অনেকেই বলেন, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করবেন, কিন্তু কাউকেই আমরা ঠিক তেমন আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখছি না। অথচ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চান তারা জানেন যে, আমরা যে অঞ্চলটা পেয়েছি সেখানে বিশাল মৎস্য ভা-ার রয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল, ৪টা কোম্পানি এসেছে। যারাই আসুক আমরা তাদের দিতে চাই।



 

Show all comments
  • আজমল ২১ জুলাই, ২০১৬, ৩:৫৬ পিএম says : 0
    দ্রুত খুঁজে বের করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হামলার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা সময়ের ব্যাপার সংসদে-প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ