পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লন্ডনের কাছে কেন্ট কাউন্টির একটি আবাসিক এলাকায় ২৮ বছর ধরে চলছে মিঠু চৌধুরির বাংলাদেশি কারি রেস্তোরাঁ- মোগল ডাইনাস্টি। তিনি ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি। করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর কাস্টমারের সংখ্যা দ্রুত এত কমতে থাকে যে সরকারি নির্দেশনার আগে থেকেই তাকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে হয়।
এ বিষয়ে চরম হতাশা নিয়ে মিঠু বলেন, ‘আমার ৩৪ বছরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় এমন সঙ্কট আমি আগে কখনো দেখিনি।’ এখন টেক-অ্যাওয়ে অর্থাৎ অনলাইন এবং টেলিফোনে খাবারের অর্ডার নিয়ে মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়ে রেস্তোরাঁটি চালু রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি জানান, বিক্রি কমে গেছে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ। তার ১৬ জন কর্মীর মধ্যে সাতজন নিয়ে কাজ করছেন। বাকি নয়জন বাড়িতে বসে আছেন। তিনি আরও জানান, কারি রেস্তেরাঁ শিল্পে সাপ্লায়ারদের সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা এক জরিপে তারা দেখেছেন, গত ৬ সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০ বাংলাদেশি কারি রেস্টুরেন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘সদস্যদের কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বলেছেন, ব্যবসা বন্ধ রেখে ভাড়া গোনা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে ভবন মালিকের হাতে চাবি দিয়ে এসেছেন।’
কম-বেশি এমন চিত্র এখন ব্রিটেন জুড়ে শতশত বাংলাদেশি মালিকানাধীন কারি রেস্তোরাঁয়। লন্ডনের ব্রিক লেন এলাকাটি ব্রিটেনের কারি ক্যাপিটাল নামে পরিচিত। সেখানকার সার সার বাংলাদেশি খাবারের রেস্তোরাঁগুলোর প্রায় সব কয়টিতেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তালা। দুই-একটি গত কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যায় টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছে।
ব্রিক লেনের স্বনামধন্য বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ সিটি স্পাইসের মালিক আব্দুল আহাদ জানালেন, তার ১২০ সিটের রেস্তোরাঁ টানা আট সপ্তাহ ধরে বন্ধ। তার মতই তার ১২ জন কর্মীর সবাই ঘরে বসে। তিনি বলেন, ‘একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে একটি জীবন পার হয়ে যায়। সেই ব্যবসার এমন অবস্থা সহ্য করা কঠিন। সহসা যদি রেস্তোরাঁ খোলা সম্ভবও হয়, তাহলে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছর লাগবে।’ রেস্তোরাঁ খুললেও ব্যবসা আর আগের মত চলবে কিনা তা নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়েছে আব্দুল আহাদের। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমার ৮০ শতাংশ কাস্টমার বিদেশি পর্যটক এবং লন্ডনে ব্যবসার সূত্রে আসা লোকজন। কতদিনে পর্যটকরা ফিরবেন আর সিটি (লন্ডনের ব্যবসা কেন্দ্র) কতদিনে চাঙ্গা হবে বলা খুবই মুশকিল। সুতরাং রেস্টুরেস্ট খুললেও আমি হয়ত সেই কাস্টমার পাবো না।’
মালিকদের আরেকটি আশঙ্কা হচ্ছে - এক-দেড় মাসের মধ্যে রেস্তোরাঁ খুলতে পারলেও সামাজিক দূরত্বের শর্তের কারণে কতজন কাস্টমার তারা ঢোকাতে পারবেন তা নিয়ে। আব্দুল আহাদ মনে করছেন, ১২০ সিটের জায়গায় বড়জোর ৫০ থেকে ৬০ কাস্টমার ঢোকানো যাবে। ব্রিটেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্মিংহামের পাশে সলিহল এলাকায় ৩৩ বছর ধরে চলছে কারি রেস্তোরাঁ - রাজনগর। এটিও প্রায় দুমাস বন্ধ। টিকে থাকতে সম্প্রতি শুরু করা হয়েছে টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস। এর কর্ণধার এমজি মাওলা বলছেন, ‘বার্মিংহাম এবং আশপাশের এলাকায় তার এই টপ-এন্ড রেস্তেরাঁ খুবই পরিচিত। একাধিকবার তিনি ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিকদের হরদম আনাগোনা এই রেস্তোরাঁয়। ২০ বছর ধরে মিশিলিনের তালিকায় ছিল রাজনগর।’ কিন্তু টিকে থাকার জন্য গত সপ্তাহ থেকে টেক-অ্যাওয়ে চালু করেছেন তিনি। বিশ জন স্টাফের ১০ জনকে নিয়ে এখন টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছে রাজনগর।
কিন্তু বার্মিংহাম শহরের কেন্দ্রে, আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কাছে তার বারাজি নামে যে আরেকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে সেটি পুরোপুরি বন্ধ। ঐ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আব্দুস শহিদ বলছেন, তাদের এখানে আসেন পর্যটক আর করপোরেট কাস্টমার। তিনি বলেন, ‘শহর এখন ভ‚তুড়ে। পর্যটক নেই। কনফারেন্স নেই। পাশের হোটেলগুলো খালি। এখানে টেকঅ্যাওয়ে খুললেও চলবে না।’ তিনি এবং বারাজির আরো ২০ জন কর্মী ঘরে বসে। সরকার বেতনের ৮০ শতাংশ দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার ওপর ভরসা করেই উদ্বেগের মধ্যে তাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে।
গোলাম মওলা বলছেন, রেস্তোরাঁ খুলে দেয়ার পরও তা চলবে কিনা তা নির্ভর করছে সরকার যে সব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা হাতে আসে কিনা তার ওপর। তিনি বলেন, ‘আমার দুটো রেস্টেুরেন্টই সবসময় লাভজনক। দুটো ব্যাংকের কাছে লোন চেয়েছিলাম। একটি দিয়েছে, অন্যটি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমি তো স্টাফের বেতন কমাতে পারবো না? ভাড়া বছরে ৮০ হাজার পাউন্ড, তা কি কমবে? ট্যাক্স কি কমবে? যে কাস্টমার আগে পেতাম তারা কি সবাই আসবেন?’
লন্ডনের পাশে এসেক্স কাউন্টিতে এভিলি নামে ছোটো একটি গ্রামে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ‘টেস্ট অব এভিলি’ নামে ৬২টি সিটের একটি মাঝারি আকারের কারি রেস্তোরাঁ চালান ওয়াহিদুর রহমান। রেস্তোরাঁ বন্ধ কিন্তু তিনিও টেক-অ্যাওয়ে সার্ভিস শুরু করেছেন। তিনি জানান, ‘টেক-অ্যাওয়েতে লাভ হয় না। কাস্টমার ভেতরে ঢুকে টেবিলে না বসলে বিক্রি বাড়ে না। তবুও শুধু গ্রামের কাস্টমার ধরে রাখতে টেক-অ্যাওয়ে চালাতে হচ্ছে।’ আট জন স্টাফের চার জনকে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্যাটারারাস আ্যসোসিয়েশনের মিঠু চৌধুরি বলছেন, সরকারের উঁচু পর্যায়ে তাদের সমিতির যে কথাবার্তা হচ্ছে, তা থেকে তারা ধারণা পেয়েছেন যে জুন মাসের মাঝামাঝি হয়তো রেস্তোরাঁ-বার খুলতে পারে। তিনি বলছেন, ২১ শে মে’র দিকে হয়তো এ ব্যাপারে একটি ঘোষণা আসতে পারে, কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা সহ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হতে পারে। ব্রিটেনের হাজার হাজার উদ্বিগ্ন কারি রেস্তোরাঁ মালিক এখন এসব প্রশ্নেরই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।