পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : কন্টেইনারের বেসামাল জট সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। আমদানি পণ্যবাহী ও খালি কন্টেইনার জাহাজ থেকে যে হারে নেমেছে সেই তুলনায় খালাস ও ডেলিভারী পরিবহন অনেকটাই কম। এতে করে ক্রমাগত কন্টেইনার পণ্যের জট সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে কন্টেইনার জটের আকার। আর জটের ফলে কোটি কোটি টাকা ডেমারেজ বা মাসুল ও লোকসান গুণতে হচ্ছে আমদানি-রফতানিকারক, ব্যবসায়ীদের। তবে হরেক নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যদিয়ে সেই লোকসানের জন্য চরম খেসারত দিতে হয় ভোক্তা সাধারণকেই। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল পৌঁছানোর নিশ্চয়তা না থাকায় দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে কন্টেইনারের জট যদি অব্যাহত থাকে তাহলে দেশের প্রধান এ বন্দরে জাহাজ জটেরও সৃষ্টি হতে পারে এমন শংকা বন্দর ব্যবহারকারীদের। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কন্টেইনার ধারণক্ষমতার চেয়ে কিছুটা বেড়ে গেলেও তা এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বন্দরে জাহাজজটের কোন কারণ বা আশংকা নেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানত ৩টি কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে কন্টেইনারসহ খোলা সাধারণ পণ্যের (ব্রেক বাল্ক কার্গো) গুরুতর পর্যায়ে জট সৃষ্টি হয়েছে। এক. গত প্রায় দেড় মাস যাবত দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ থেমে থেমে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর ৩নং সতর্কতা সংকেত প্রদান। দুই. এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের ছুটিসহ এর আগে-পরে বন্দরে স্বাভাবিক কাজেকর্মে ভাটা পড়া। এবং তিন. বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য অপরিহার্য ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের সংকট।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে প্রায় ৩৭ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট আকারের ইউনিট কন্টেইনার হিসাবে) কন্টেইনার জমে গেছে। আর বন্দরে কন্টেইনারের বর্তমান স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৩২ হাজার টিইইউএস। বন্দরে বর্তমানে কাজ চলছে ২০টি জাহাজে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরও প্রায় ২৩টি জাহাজ আমদানি পণ্যসামগ্রী নিয়ে ভিড়ার কথা রয়েছে। রফতানিমুখী পণ্য পরিবহনের কথা ১২টি জাহাজের। চলমান জটের কারণে বন্দরের সবক’টি ইয়ার্ডে স্তুপীকৃত হয়ে আছে আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই ও খালি কন্টেইনার। সেই সাথে স্থল কন্টেইনার ডিপোসমূহে (আইসিডি) বিপুল পরিমাণ কন্টেইনারের মজুদ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন অফডক অভিমুখী যেখানে ৫শ’ টিইইউএস কন্টেইনার থাকাটা স্বাভাবিক সেখানে গতকাল অবধি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কন্টেইনার জমে গেছে। আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা কন্টেইনার খালাস ও ছাড় করিয়ে নিতে পারছেন কম হারে। চলমান কন্টেইনার জটের জন্য তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দুষছেন। জট সমস্যা নিরসন তথা কন্টেইনার খালাস, ডেলিভারী পরিবহনের হার বা গতি বৃদ্ধির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দর-কাস্টমস ও বন্দর-শিপিং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও সমস্যা-সংকট, সীমাবদ্ধতার কারণে বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম থমকে গেছে। যার জন্য ডেমারেজ দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে রয়েছেÑ ঈদের টানা ছুটি ছাড়াও ঈদের ‘আমেজে’র অজুহাতে এখন পর্যন্ত বন্দর কার্যক্রমে ব্যাপক ভাটা, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনলাইনে পণ্যের শুল্কায়নের ক্ষেত্রে এসাইকুডা (প্লাস প্লাস) ওয়ার্ল্ড সার্ভারের গুরুতর ও ঘন ঘন ত্রুটির কারণে ধীরগতি, বন্দর ও অফডকসমূহের জন্য অপরিহার্য কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ব্যাপক সংকট বা ঘাটতি।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ওইসব সমস্যা-সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে কন্টেইনার খালাস ব্যাহত হলেও এরজন্য বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের মোটা অংকের ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে। ফিডার জাহাজযোগে বন্দরে খালাসের পর ২০ ফুটি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মাসুলবিহীন সময়সীমা বা ফ্রি টাইম ৪ দিন অতিবাহিত হলে প্রথম ৭ দিন প্রতিটি কন্টেইনারের জন্য দৈনিক ৬ ডলার হারে, পরবর্তী ১৩ দিন দৈনিক ১২ ডলার হারে, এরপর ডেলিভারীর সময় অবধি দৈনিক ২৪ ডলার হারে ডেমারেজ বা মাসুল গুণতে হচ্ছে। একই হারে ৪০ ফুটি কন্টেইনারের বিপরীতে উক্ত হিসাবের দ্বিগুণ হারে ডেমারেজ গুণতে হয়। এভাবে দৈনিক কোটি কোটি টাকা ডেমারেজ দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকদের। যার বিরূপ প্রভাব পড়ে দেশের সাধারণ ভোক্তাদের উপরই। বন্দরের পাশাপাশি বেসরকারি আইসিডিসমূহেও (অফডক) পণ্যজট অব্যাহত রয়েছে। অফডকে কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে। ফলে কন্টেইনার জট বেসামাল আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আমদানি ও রফতানিকারক, শিপার্স, ব্যবসায়ী, কনসাইনি তথা বন্দর ব্যবহারকারীরাও বেশ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কন্টেইনার জট নিরসনে ইতোমধ্যে বিভিন্নমুখী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষত, ঈদের টানা ছুটিতে এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বন্দরে কন্টেইনারসহ পণ্য খালাস, ডেলিভারী পরিবহন অনেকাংশে কমে যায়। তাছাড়া ঈদের বন্ধকে ঘিরে বন্দর সচল থাকলেও আমদানিকারক, ব্যবসায়ী, কনসাইনিরা পণ্য খালাস বা ছাড় করতে না আসার কারণে কন্টেইনারসহ পণ্যসামগ্রী জমে গেছে। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য ডেলিভারী নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধ করছে ও তাগাদাও দিচ্ছে। এরফলে বন্দরে কন্টেইনার মজুদ ধীরে ধীরে কমে আসবে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীমহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বন্দর প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য অপরিহার্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের সংকট নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামী ১ বা ২ মাসের মধ্যে ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হবে। গত প্রায় এক যুগে বন্দরে ভারী সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়নি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে। যান্ত্রিক সরঞ্জাম কেনা হলে বন্দরের দক্ষতা ও গতিশীলতা আরও বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে শিগগিরই পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম (ইকুইপমেন্টস) সংগ্রহের যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এতে বন্দরের মুনাফালব্ধ নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করে মোট ১১শ’ ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। আর কেনা হবে ৬১ ধরনের অত্যাধুনিক ভারী যন্ত্রপাতি। এরমধ্যে ১০টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন ছাড়াও রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি (আরটিজি) ক্রেন, স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, রীচ স্ট্র্যাকার, কন্টেইনার মোভার, রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহ করা হবে। যার সবগুলোই কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যন্ত্রপাতি। এতে করে বাড়বে বন্দরের সক্ষমতা। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরে বার্ষিক ২৯ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২১ লাখ ৮৯ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। বন্দরে প্রতি বছর ১২ থেকে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। দেশের আমদানি-রফতানি প্রবাহের ৯০ শতাংশই সম্পন্ন হয় প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ রাজস্ব আহরণ করা হয় বছরে ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।