পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিন, মাস, বছর, যুগ ও কালের আবর্তন ঘিরেই এই সাধের পৃৃথিবী আপন গতিতে শেষ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে। পরিণতি কার না আছে? এটাই যদি জিজ্ঞাসা হয়, তাহলে এই পৃথিবীরও শেষ পরিণাম আছে, এ কথাটি সহজেই বলা যায়। একদিন পৃথিবী নামক সাজানো বাগানটি ধ্বংস হয়ে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এই পৃথিবীর বুকে মানুষের আগমন ঘটেছে বলেই সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কালচক্রের সূত্রপাত হয়েছে। এই পৃথিবী মানুষের বসবাসের উপযোগি করতে কতকাল সময় লেগেছে তার হিসাব কারো জানা নেই। সকল মানুষ জানে আদি মানব হযরত আদম (আ.) ও আদি মানবী হযরত হাওয়া (আ.)ই পৃথিবীর আদি নর এবং নারী। তাদের সন্তান-সন্তুতির দ্বারাই পৃথিবী জোড়া মানব বসতি বিস্তৃত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকগণ বলেছেন যে, এই পৃথিবীতে মানব জাতির বিস্তিৃতিকে তিন যামানায় বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়। যথা: (ক) প্রাচীন যামানা বা যুগ (খ) মধ্যবর্তী যামানা বা যুগ এবং (গ) শেষ যামানা বা যুগ। প্রাচীন যামানা বলতে ওই সময়কে বুঝায়, যা হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীতে পদার্পণ করার পর হতে হযরত নূহ (আ.) পর্যন্ত। আর মধ্যবর্তী যামানা হযরত নূহ (আ.)-এর পর হতে শুরু করে হযরত ঈসা (আ.)-এর আকাশে আরোহণ পর্যন্ত বিস্তিৃত। আর শেষ যামানা মোহাম্মাদ মোস্তাফা, আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর জন্ম গ্রহণ হতে কেয়ামত পর্যন্ত বিস্তিৃত।
বিশ্লেষকগণ আরো বলেছেন যে, শেষ যামানাটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগটি হলো- হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা, আহমাদ মোজতাবা (সা.)-এর জন্ম গ্রহণ হতে হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর আগমন পর্যন্ত বিস্তিৃত। দ্বিতীয় ভাগটি হলো- হযরত ইমাম মাহদী (আ.)-এর ইন্তেকাল হতে কেয়ামতের শিঙ্গায় ফুৎকার পর্যন্ত প্রলম্বিত। বর্তমান পৃথিবীতে বসবাসকারী আদম সন্তানেরা শেষ যামানা বা যুগের প্রথম ভাগটি প্রায় অতিবাহিত করে ফেলেছে। এমনকি বৈজ্ঞানিক যুগের এই নটরাজরা দ্বিতীয় ভাগের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছে এবং জল-স্থল অন্তরীক্ষ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার মতো অস্ত্র-শস্ত্র ও হাতিয়ারের ভান্ডার দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা যায় যে, বর্তমানে পৃথিবীতে পনের হাজারেরও বেশি নিউক্লিয়ার বোমা মজুদ আছে। এর একটি বোমার আঘাতে পৃথিবীর বড় একটি শহর যেমন নিউইয়র্ক, টরেন্টো, টোকিও, মস্কো, ঢাকা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কালো কয়লায় পরিণত হবে।
সে যাই হোক, উল্লিখিত পাঁচটি যুগ ও কালের কথা যা আমরা উপস্থাপন করেছি, তা নতুন কিছু নয়। মহান রাব্বুল আলামিন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ কোরআনুল কারিমের দুই নম্বর সূরা আল বাকারাহ-এর একশত’ পঁচাশি নম্বর আয়াতের রামাদান শব্দটির মধ্যে এর হেকমত প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, আরবি রামাদান শব্দে পাঁচটি অক্ষর আছে। যেমন- রা, মিম, দোয়াদ, আলিফ এবং নূন। আর এই শব্দটি ষোলআনা কোরআন শরীফে মাত্র একবারই এসেছে। হিজরি দ্বিতীয় মাসে মহান রাব্বুল আলামীন পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর উম্মতের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। পূর্ববর্তী কোনো নবী ও রাসূলের এবং তাদের উম্মতের ওপর এক নাগারে এক মাস রোজা ফরজ ছিল না। এক মাস রোজা পালন করা উম্মতে মোহাম্মাদিয়ার জন্য একটি বড় নেয়ামত। যার প্রথম দশ দিন রহমতের ঝর্ণা ধারায় পরিপ্লুত। দ্বিতীয় দশ দিন মাগফেরাতের শামিয়ানার ছায়ায় সঞ্জীবিত। আর তৃতীয় দশ দিন জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি ও নিষ্কৃতির জন্য নির্ধারিত। সুতরাং ‘রামাদান’ শব্দের মহাসাগরতুল্য মর্ম ও মহাত্ম আল্লাহপাক তাওফিক এনায়েত করলে বারান্তরে তুলে ধরার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
তবে যে কথা বলছিলাম, যুগ ও কালের চতুর্থ ভাগের শেষাংশে যে সকল নিদর্শনাবলী বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে বলে সাইয়্যেদুল মুরসালিন, রহমাতুল্লিল আলামীন (সা.) ঘোষণা করেছেন, সেগুলো হলো- “দেশের শাসনকর্তাগণ দেশের জনসাধারণের সম্পদকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে মনে করবে। যাকাতকে জরিমানা স্বরূপ আদায় করা হবে, আর যাকাত দেয়াকে যাকাত দাতাগণ জরিমানা বলেই মনে করবে। মানুষ আমানতের মালকে যুদ্ধলব্দ লুটের মাল বলে মনে করবে, তা নিজেদের প্রয়োজনে ইচ্ছামতো ব্যয় করবে। স্বামীগণ স্ত্রীগণের বাধ্য ও অনুগত হবে এবং স্ত্রীগণের অনুসরণ করবে। ছেলে-মেয়েরা মাতা-পিতার অবাধ্য হবে ও অসৎ লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। পার্থিব লাভের উদ্দেশে লোকেরা দ্বীনি এলেম অর্জন করবে। মূর্খতা, অধর্মাচরণ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। প্রত্যেক জাতি ও গোত্রের অসৎ ও লোভী ও ব্যক্তিগণ সমাজের নেতা নির্বাচিত হবে। অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ লোকদের হাতে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার ভার অর্পিত হবে। দেশের নেতাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ অনিচ্ছাসত্তে¡ও তাদেরকে সম্মানপ্রদর্শন করতে বাধ্য হবে। প্রকাশে মদ পান চলবে। ব্যভিচার ও জিনা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। নিত্য নতুন নাচ-গানের প্রবর্তন হবে। খেলাধুলা ও আমোদ-প্রমোদের সাজ-সরঞ্জাম ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে। মানুষ পূর্ববর্তী সৎ ও পরহেজগার লোকদের নিন্দাবাদ করবে। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা, ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা এবং পরস্পরের প্রতি মায়া-মমতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি হবে। লজ্জা-শরম আদম কায়দা উঠে যাবে। কথা ও কাজ কারবারের মিথ্যা প্রচারণা, প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে যাওয়া, আকাশ হতে পাথর বর্ষিত হওয়া, আকৃতি পরিবর্তিত হওয়া প্রভৃতি আশ্চর্য ঘটনা সংঘটিত হতে থাকবে। মসুল্লিগণ মসজিদে বসে উচ্চঃস্বরে হাসি-তামাশা, গল্প-গুজব, তক-বিতর্ক এমন কি অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করবে। পরস্পর দু’ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে সালামের পরিবর্তে অকথ্য ভাষায় গাল-মন্দ করবে। মানুষ প্রবঞ্চনা, প্রতারণা ও মিথ্যাকে বুদ্ধির পরিচয় বলে মনে করবে। মানুষের অন্তর হতে আল্লাহর ভয় তিরোহিত হবে। মুসলমানদের ওপরে কাফের ও মুশরিকগণ ক্রমশ: প্রভাব বিস্তার করতে থাকবে। জুলুম, অত্যাচার, চুরি-ডাকাতি ও খুন এবং গুপ্তহত্যা এত অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে যে, তা হতে নিরীহ ও শান্তি প্রিয় লোকের মুক্তি লাভ করা অসম্ভব ও কষ্টকর হবে। বাতিল মাযহাব, মিথ্যা হাদীস প্রচার ও ভ্রান্তিগোষ্ঠির সংখ্যা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। মুসলমানগণ নির্যাতিত ও পরাজিত এবং তাদের বিত্তমান নেতা মারা যাবে। খ্রিস্টানগণ সিরিয়া, কনস্টান্টিনোপল ও খায়বর পর্যন্ত দখল করে নেবে। মুসলমানগণ নিস্পৃষ্ট ও নির্যাতিত হয়ে নিজ নিজ গৃহে বা নগর বন্দরে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তখন সূতা ছিন্ন তাসহিবের দানার মতো বিপদাপদ মুসলমানদের ওপর আপতিত হবে। বর্তমানে আমরা এই সময়টিই অতিক্রম করছি। ওয়াল্লাহুল মুস্তায়ামু আলা কুল্লি হাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।