Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নাৎসি বাহিনী ও বার্লিনের পতন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০২০, ৮:৫০ পিএম

নাৎসি স্বৈরশাসক অ্যাডল্ফ হিটলার (২০শে এপ্রিল, ১৮৮৯ - ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫) ইতিহাসের একটি কুখ্যাত নাম। অস্ট্রিয় বংশোদ্ভ‚ত জার্মান রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দেশটির ফিউরার ছিলেন। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড দখল করায় ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।
হিটলারের রাজ্য দখল ও বর্ণবাদী আগ্রাসনে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়। তার নেতৃত্বে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় যা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। ৭৫ বছর আগে কীভাবে হিটলারের মৃত্যু হয়েছিল এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে সমাপ্ত হয়, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট ইউকে। সুদীর্ঘ প্রতিবেদনটি ৩ পর্বে ভাগ করে ১ম পর্ব প্রকাশ করা হল আজ ঃ
ইউনিফর্মে স্যুপের দাগ নিয়ে ক্ষমতাহীন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং সময়ের আগেই বৃদ্ধ হয়ে পড়া ভীত জার্মান নেতার শেষ দিনগুলি কেটেছে ফিউরার বাঙ্কারের অন্ধকারে। তার অর্ধ-নির্মূল সেনা বাহিনীকে অযৌক্তিক আদেশ দেয়াও কমে গিয়েছিল। হিলারের ফ্যাসিবাদী মিত্র বেনিটো মুসোলিনি উত্তর ইতালীর ছোট্ট গ্রাম জুলিনো দি মেজেজেগ্রায় নিজদলের বিরোধীতাকারীদের দ্বারা নিহত হওয়ার ২ দিন পর তিনি রাইখ চ্যান্সেলরির ভ‚গর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন।
ইউরোপ পুনরুদ্ধারে অগ্রসর পশ্চিমা মিত্রজোট, পোল্যান্ড দখল করে দ্রুত অগ্রসর হওয়া রাশিয়ান রেড আর্মি এবং নিয়ন্ত্রণহীন অবরোধ কবলিত বার্লিনের সাথে সাথে ফিউরার হাজার হাজার বছর ধরে রাজত্ব করার জন্য যে নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা চুরমার হয়ে যায়।
আদি জার্মানদের বৃহত্তর গৌরব অর্জনের জন্য হিটলারের বিশ্বজয়ের আশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তিনি সায়ানাইড ক্যাপসুল চিবিয়ে ধরে ৭.৬৫ মিলিমিটার ওয়ালথার পিপি পিস্তল দিয়ে নিজের ডান কপালে গিয়ে গুলি চালান যাতে তার বেঁচে থাকার তিল পরিমাণ সম্ভাবনাও না থাকে।
তার স্ত্রী ইভা ব্রাওন, যাকে হিটলার আত্মহত্যার ১ দিন আগে তাদের ভূগর্ভস্থ স্যাঁতসেতে কক্ষে বিয়ে করেছিলেন, তিনিও একই পস্থা অবলম্বন করেন। হিটলারের নির্দেশে ৩য় রাইখের মাধ্যমে নজিরবিহীন সহিংসতা চালানোর কারণে জবাবদিহিতা এড়াতে এবং রাশিয়ানদের হাতে ধরা না পড়ার উদ্দেশ্যে তিনিও আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
একসময়কার শক্তিশালী জার্মান সেনাবাহিনী ৬ বছরের ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসায় সে বছরের ১৬ জানুয়ারী হিটলার, ব্রাউন, প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবেলস, তার স্ত্রী মাগদা এবং তাদের ৬টি সন্তান, পাশাপাশি দলের বিশ্বস্ত অভ্যন্তরীণ চক্রের সদস্য এবং কর্মীরা ভূগর্ভস্থ বাসস্থানে আশ্রয় নেয়। পরবর্তী প্রতিটি দিনই পশ্চিমে নাজি অধিকৃত অঞ্চলে অবিচল ব্রিটিশ এবং আমেরিকান বাহিনীর অগ্রগতির এবং পূর্বদিকে অপ্রতিরোধ্য সোভিয়েত সেনাদের অগ্রযাত্রার আরো খবর আসতে থাকে।
১৬ এপ্রিলের মধ্যে, রাশিয়ান বাহিনী মার্শাল জর্জি জুকভ, আইভান কোন্ভ এবং কনস্ট্যান্টিন রকোসোভকি’র নেতৃত্বে ২ কোটি ৫০ লাখ পুরুষ এবং ৬ হাজার ৫শ’ ২৫টি ট্যাঙ্ক নিয়ে বার্লিনের যুদ্ধ লড়ার জন্য সম্মুখ সমরে ৩টি দলে বিভক্ত হয়ে বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম নগরীর দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়।
অবসন্ন নাৎসিরা সংখ্যায় কমে গিয়েছিল এবং ৫-১ অনুপাতে রাশিয়ান বাহিনীর হাতে মারা পড়ছিল। রাজধানী রক্ষার আশা হারিয়ে হতাশায় পর্যবসিত নাৎসি সৈন্যরা আক্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য নামেমাত্র প্রতিরোধ ধরে রেখেছিল।
বার্লিনকে বাঁচানোর জন্য সর্বশেষ নাৎসি প্রতিরোধ বাহিনীর দায়িত্বে থাকা জেনারেল হেলমুচ ওয়েইডলিং মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমাকে গুলি করলে আরো ভাল হবে।’ (চলবে)

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাৎসি-বাহিনী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ