Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাফোনের অবৈধ ট্রান্সমিশন সেবা

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : লাইসেন্স ছাড়াই ট্রান্সমিশন সেবা প্রদান করছে বাংলাফোন লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন সেবা প্রদান করলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। বারবার লাইসেন্সিং নীতিমালা ভঙ্গ এবং অবৈধ সেবা প্রদানের পর কেবল চিঠি দিয়েই সতর্ক করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ গতকালও (মঙ্গলবার) চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধ এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বিটিআরসি’র লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নাফিসা মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাফোন লিমিটেডের অনুকূলে ইস্যুকৃত পারমিটের মেয়াদ গত বছর ২২ এপ্রিল উত্তীর্ণ হওয়ায় পরবর্তীতে পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি বা নবায়ন করা হয়নি। তাছাড়া বাংলাফোনের কোনো এনটিটিএন লাইসেন্স নেই। এনটিটিএন লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট গাইডলাইনের বিধান অনুযায়ী অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন এবং এ সংক্রান্ত সেবা শুধু কমিশন হতে এনটিটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্ত অপারেটররা প্রদান করতে পারে। কমিশন হতে ইতোমধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ রেলওয়ে, ফাইবার এট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বাংলাফোন লিমিটেড হতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা গ্রহণ করছে। বিটিআরসি’র ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাফোন লিমিটেড হতে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা গ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে এনটিটিএন সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স/গাইডলাইনের শর্ত অনুযায়ী কমিশন হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট থেকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সেবা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় অবৈধভাবে এনটিটিএন সেবা প্রদানকারী এবং উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত জুনে বিটিআরসি’র লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্স বিভাগের উপ-পরিচালক সাজেদা পারভীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একইভাবে বলা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাফোনের অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন ‘অনুমতি’ (পারমিট) নবায়ন করেনি বিটিআরসি। ফলে প্রতিষ্ঠানটি আর এ সেবা দিতে পারবে না। বাংলাফোন থেকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা গ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠানকে কমিশনের লাইসেন্সধারী নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে ওই চিঠিতেও বলে বিটিআরসি। ওই সময়ের চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকার অনুমোদিত এনটিটিএন গাইডলাইন ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার গাইডলাইনের সঙ্গে বাংলাফোনের পারমিটের শর্ত সাংঘর্ষিক। এই পারমিটের আওতায় সকল প্রকার বাণিজ্যিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ওই চিঠিতে বাংলাফোনকে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এই পারমিটের আওতায় অর্জিত রাজস্বের সাড়ে পাঁচ শতাংশ অর্থ বিস্তারিত তথ্যসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্যও নির্দেশ দেয় বিটিআরসি।
টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত কাজে শৃঙ্খলা আনতে সরকার ২০০৯ সালে দুটি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন লাইসেন্স দেয়। নীতিমালা অনুসারে এই লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নয়ন বা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স পেতে প্রতি প্রতিষ্ঠানকে এককালীন তিন কোটি টাকা এবং প্রতি বছর নবায়নের জন্য ২৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এসব শর্তে লাইসেন্স নেয় ফাইবার এট হোম ও সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। অথচ লাইসেন্স ছাড়াই কেবল বিটিআরসির ‘অনুমতি’ নিয়ে লাইসেন্স নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই কার্যক্রম চালিয়ে যায় বাংলাফোন। বাংলাফোনের অনুকূলে ২০০৯ সালে ইস্যু করা অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন ‘অনুমতি’ ছয় দফায় নবায়ন করে বিটিআরসি। গত বছর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাফোনের এই সেবা দেয়ার সুযোগ ছিল। টেলিযোগাযোগ আইনের ৪০ ধারা অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠান টেলিযোগাযোগ কার্যক্রম শুরু বা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেবে। কিন্তু বিটিআরসি বাংলাফোনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়নি। লাইসেন্স পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠান বাংলাফোনের এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠিও দেয়। মন্ত্রণালয় চিঠিতে বিটিআরসির এ কাজ বিধিসম্মত হয়নি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু তারপরও বাংলাফোনের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান এবং কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কমিশন। বরং প্রতিবারই প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন সেবা বন্ধের জন্য চিঠি দিয়েই দায় সারছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আইআইজিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ : ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্ধারিত সময়ে কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত মাসেই বাংলাফোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। নীতিমালায় বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই দেশের বিভিন্ন স্থানে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় গত বছর ১১ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওই বছরের এপ্রিলে বাংলাফোন ছাড়াও লাইসেন্স পাওয়া আরো ১০ প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়। টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১-এর ধারা ৪৬-এর ২ অনুযায়ী এ নোটিস দেয় বিটিআরসি। পরের মাসে নোটিসের জবাব দেয় বাংলাফোন। আইআইজি লাইসেন্সিং নীতিমালার শর্ত ১৪ অনুযায়ী লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া লাইসেন্সের শিডিউল ২-এ বলা হয়েছে, ঢাকার বাইরে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (পিওপি) স্থাপনের প্রয়োজন হলে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। ২০১২ সালে আইআইজি লাইসেন্স পাওয়া বাংলাফোনের নেটওয়ার্ক রোলআউট লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিষ্ঠানটির সময়সীমা ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে কোনো অনাপত্তি নেয়নি বাংলাফোন। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ না নেয়ায় লাইসেন্স ও নীতিমালার শর্ত ভঙ্গ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাবে প্রতিষ্ঠানটি জানায় দেশের ৩৭টি জেলা ও ২৪৪টি উপজেলায় পিওপি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে স্থাপন করা এসব পিওপির জন্য কমিশন থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এটি লাইসেন্সের শর্তের পরিপন্থী। এজন্য বাংলাফোনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠিও দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাফোনের অবৈধ ট্রান্সমিশন সেবা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ