ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ : গত ১ জুলাই ২০১৬ তারিখে গুলশানে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা শুধু বাংলাদেশকে নয়, বরং সারা বিশ্বকে, মানবতাকে বিমূঢ় করে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, এ ধরনের অধিকাংশ ঘটনার জন্য দায়ি করা হয় ইসলামকে, মুসলমানদেরকে। জেনে রাখা দরকার, শরীয়তের দৃষ্টিতে এসব হামলাকারী মুসলিম নয়। হয়ত তারা নামে মুসলিম, কখনও কর্মে নয়। তারা ভ্রান্ত, অন্ধকারে নিমজ্জিত।
১. ইসলাম সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তি ও সুন্দরের ধর্ম। ইসলামি বিধি-বিধান শান্তি প্রতিষ্ঠায়, সৌন্দর্য রক্ষায় প্রবর্তিত হয়েছে। আমাদের কাজ হলো আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নির্দেশিত পথ অনুযায়ী তা বাস্তবায়নে মেধা-মনন, শ্রম-শক্তি, অর্থ-কড়ি দিয়ে যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বিজয়ের জন্য ধৈর্য এবং আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশা করা। (সূরা বাকারাহ, ২ : ২১৪) জোর-জবরদস্তি তাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে (সূরা বাকারাহ, ২ : ২৫৬)। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও তাই অন্যের ক্ষতি না হওয়ার শর্তে অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। (সূরা কাফিরুন, ১০৯ : ৬) অথচ বিশ্বে ইসলামের নামে, মুসলিম নামধারী অথবা অন্য কোন স্বার্থান্বেষী মহল সারা বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা ইসলাম কোনভাবেই সমর্থন করে না। তাদের জন্য দুনিয়াতে ধ্বংস এবং আখেরাতে জাহান্নাম নিশ্চিত। সুতরাং ইসলামের নামে কোন মুসলিম সন্ত্রাসের সাথে কিংবা সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত থাকতে পারে না।
২. ইসলামের দুইটি অর্থ। শান্তি (সালামুন) এবং আত্মসমর্পণ (ইসতিসলামুন)। এই দুইটি অর্থই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং পরিচিত। সুতরাং যে ধর্মে শান্তির কথা বলা হয়, বা যে বিধান পালন করলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সহজতর হয় এবং তার অনুসারীরা তাদের রবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে শেখে সেই ধর্মকেই ইসলাম ধর্ম বলা হবে। আর যারা এ ধর্ম পালন করে তারা হবে শান্তিপ্রিয় এবং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। তাদেরকেই তো মুসলিম হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে। যদি তাই হয়, তাহলে বর্তমান সময়ে ইসলাম ও মুসলমানদের নামে যে বা যারা সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত কিংবা সমাজ-সভ্যতায় অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ছড়াতে সচেষ্ট তারা ইসলামের অনুসারী কিনা বা মুসলিম কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। তাছাড়া, ইসলাম ও মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হলো : (ক) যে নিয়ম-নীতি মানলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনে অশান্তি নেমে আসে সেটা ইসলামিক নীতি না। (খ) যে নিয়ম-নীতি পালন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কিংবা অন্য কাউকে বা কারো কাছে নিজেকে সপে দেয়া লাগে আল্লাহ ব্যতিত, সেটাও ইসলামিক নীতি না। (গ) যেসব মানুষ ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রের যেকোনো ক্ষেত্রে যদি শান্তি নষ্ট করার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তারা মুসলিম না। এবং (ঘ) যারা আল্লাহর কাছে ব্যতিত অন্য কারো আছে নিজেদেরকে সপে দিয়ে তাদের সত্য-মিথ্যা, ঠিক-বেঠিক, ভাল-মন্দ বিচার না করে তাদের অনুসরণ করে কিংবা তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলে তারাও প্রকৃত অর্থে মুসলিম না। সুতরাং ইসলামী রীতি-নীতি এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চর্চা যদি থাকে। তাহলে, বা অবাঞ্ছিত কোনো কারণে কেউ কাউকে হত্যা করবে না, তেমনি বিনা বিচারেও কেউ কাউকে হত্যা কিংবা হত্যার কারণ হবে না। সমাজের অন্যায়, অবিচার, দুনীতি, চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস, অশ্লীলতা করার মত কেউ থাকবে না। কারণ, একজন মুসলিম কখনও কোনো বিচারে এমন কাজ করতে পারে না।
৩. শরীয়তের বিধানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অবশ্যই কবিরা (বড়) গুনাহ। অপরদিকে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিম সেই ব্যক্তি যার মুখ (কথা) ও হাত (কাজ) থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) ইসলাম যেখানে মুখের কথা হতেও মানুষের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে সেখানে সেই ইসলামের নামে বিনা কারণে কারও হত্যা তো দূরের কথা কারও কোন কষ্টের কারণ হওয়াও কি বৈধ হবে? অবশ্যই না। এটা নিষিদ্ধ, গোনাহ। আল্লাহ বলেন, যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মোমিন ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে জাহান্নামী। (সূরা আন-নিসা, ৪ : ৯৩) আর রাসূল (সা.) বলেছেন, সে কুফুরি করল। (সহিহ বুখারি)
এসব কর্মকা- থেকে সমাজকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কোরআনের বিধান যদি কার্যকর করা যায়, আমরা নিশ্চিত, শুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয় বরং কোন ধরনের হারাম কাজ, ক্ষতিকারক কোন কিছু আর সমাজে সংগঠিত হবে না। আল্লাহ বলেন- “তোমরা সৎ ও ভাল কাজে একে অপরকে সাহায্য করো, কিন্তু অসৎ ও মন্দ কাজে কেউ কাউকে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়েদাহ, ৫:২) পিতা-মাতা যদি তার পুত্রের, পুত্র যদি তার পিতা-মাতার, ভাই যদি বোনের কিংবা বোন যদি তার ভাইয়ের, স্বামী যদি তার স্ত্রীর কিংবা স্ত্রী যদি তার স্বামীর সকল অসৎ ও মন্দ কাজের সহযোগিতা না করে বিরোধিতা শুরু করে, তাহলে ভাবুনতো কীভাবে তা করা সম্ভব হবে?
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসসহ অন্যান্য খারাপ কাজ নির্মূলে শুধু সরকার বা কোন গোষ্ঠির উপর দায়ভার দিয়ে নিজেদেরকে মুক্ত মনে করলে হবে না। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, সমাজের প্রত্যেকটা ব্যক্তি এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। যদিও তা নিজের সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে হয়। (সূরা আন-নিসা, ৪ : ১৫৩) সর্বশেষ রাসূল (সা.)-এর বাণীকে আমরা স্মরণ করতে পারি। তাহলো, তিনি বলেছেন, “তোমরা সমাজে যদি কোন নিষিদ্ধ খারাপ কাজ হতে দেখ, তাহলে তা হাত দ্বারা প্রতিহত কর, যদি সম্ভব না হয় তবে, মুখ দ্বারা, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে তাদেরকে অন্তরে ঘৃণা কর।” (সহিহ বুখারি)
লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।