পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গত ২০ বছরে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় বিপ্লব ঘটে যাওয়ায় এই স্তম্ভ এখন আরো পোক্ত। দেশে ২০ থেকে ২৫টি টেলিভিশন দিনরাত সচিত্র খবর প্রচার করছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে লাইভ সচিত্র প্রতিবেদন দেখছে দর্শক। কিন্তু এই খবর জনগণের উপকার করছে না অপকার?
করোনাভাইরাস নিয়ে গোটা বিশ্ব টালমাটাল। বাংলাদেশেও করোনা আক্রমন করেছে। মরণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে সব মহলে উৎকণ্ঠা, শঙ্কা। সবার মধ্যে ভীতি এই বুঝি করোনায় আক্রান্ত হলাম। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা পৃথিবীকে এমন ভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে; করোনাকাল শেষ হলে পৃথিবী নতুন ভাবে পথচলা শুরু করবে। এ সময় প্রয়োজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা। কিন্তু কর্পোরেট হাউজ প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশনগুলো সংবাদ প্রচারের প্রতিযোগিতার নামে দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার করছে কি? করোনাভাইরাস নিয়ে লাইভ নিউজ, ব্রেকিং নিউজ, সদ্য নিউজ, এই মাত্র পাওয়া খবর এবং করোনা নিয়ে নানা কিসিমের টক-শো দশর্কদের উপকারে আসছে না কি মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করছে? টিভিগুলোর করোনা নিয়ে খবর প্রচারের প্রতিযোগিতায় অনেক সাধারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। হার্টের রোগীদের বেহাল দশা।
‘ছুরি’ একটি হাতিয়ার। এই ছুরি দিয়ে গৃহিনী তরকারি কাটেন, ডাক্তার রোগীর অপারেশন করেন, ছিনতাইকারী রাস্তাঘাটে ছিনতাই করেন এবং কসাই গরু জবেহ করেন। কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে সে দায় ছুরির নয়, দায় ব্যবহারকারীর। টিভিগুলোর টক-শো নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। টক-শো’র নামে আলোচনা এমন স্তরে নামানো হয়েছে যে, যিনি করোনাভাইরাস শব্দটি ঠিকমতো লিখতে পারবেন না তিনিও টিভির বদৌলতে হয়ে গেছেন করোনা বিশেষজ্ঞ। জাতিকে করোনা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছেন। টক-শো কার্যত সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী তৈরির প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
করোনা সারাবিশ্বের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। মহাপরাক্রমশালী ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে শি জিং পিং-এর হার্ট দুর্বল করে দিয়েছে করোনা। করোনার ছোঁবল থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘পরীক্ষা পরীক্ষা পরীক্ষা’র পরামর্শ দিয়েছেন। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘সামাজিক দূরত্ব’ সৃষ্টিই কেবল করোনা থেকে মুক্তির পথ। করোনাভাইরাস নিয়ে যাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক-ভীতির সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরা করোনা নিয়ে পরিশিলিত খবর প্রচার করছে। এমনকি পাশের দেশ এনডিটিভি একই পথ অনুসরণ করেছে।
করোনা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ভীতি থাকায় সতর্কতার সঙ্গে খবর প্রকাশ করেছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিশ জনসনের করোনা আক্রান্তের পর বিসিসি ‘ব্রেকিং নিউজ’ প্রচার করলেও সিএনএন ও আল জাজিরা ব্রেকিং নয় গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে। করোনা নিয়ে ওই গণমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশে সতর্কতায়ও শেখার রয়েছে। বাংলাদেশের টিভিগুলোতে খবর প্রচারের প্রতিযোগিতার নামে কি হচ্ছে?
ডিজিটাল যুগ আলোড়ন তৈরি করার মতো অনেক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এখন মিডিয়ার অভূতপূর্ব ক্ষমতা। এক্ষেত্রে সংবাদ প্রকাশের কৌশল হবে ডিজিটাল আর মানবিক। এক্সক্লুসিভ খবর প্রকাশের লড়াইটা হবে এই দুইয়ের সমন্বয়ে। কিন্তু আমরা কি দেখছি? ৭ বছর আগের রানা প্লাজার খবর প্রচারে টিভিগুলোর অমানবিক প্রতিযোগিতার কেলেঙ্কারী দেখেছি।
রিমোর্ট টিপলেই করোনা খবর। যেন হৈহৈ কান্ড রৈরৈ ব্যাপার। দেশের টিভিগুলো ২৪ ঘণ্টা করোনার খবর প্রচার করছে, দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তের। খবরের মধ্যে লাইভ সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে। এসব খবরে দেখা যায়, কোনো এক গ্রামে একজন করোনায় আক্রান্ত, কোনো একটি দোকান লকডাউন, কোনো এক হাসপাতালে রোগীর পরীক্ষা হচ্ছে, কোনো গ্রামে মানবদেহে করোনার আলামত পাওয়া গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমনভাবে এসব খবর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে লাইভ প্রচার করা হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে। হার্টের রোগী এবং যাদের হার্ট দুর্বল তারা পড়ে গেছেন বিপর্যয়কর অবস্থায়। জনমনে ভীতি ছড়ানো শঙ্কা থেকে সিএনএন-আলজাজিরা বরিস জনসনের করোনা আক্রান্তের খবর ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে প্রচার করেনি।
অথচ বাংলাদেশে একজন রিকশাওয়ালা করোনায় আক্রান্ত হলেই সে খবর টিভিতে লাইভ প্রচার হচ্ছে (দুঃখিত রিকশাওয়ালাকে খাটো করছি না)। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বদলে খবর পৌঁছে দেয়ার নামে ভীতি ছড়ানো কি সাংবাদিকতা? এটা ঠিক দেশের বড় বড় কর্পোরেট হাউজগুলো মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের সম্পদ রক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু কার আগে কে প্রচার করবে সে প্রতিযোগিতায় ছোট্ট খবরকে ‘বিরাটভাবে’ প্রচার করে জনমনে ভীতির সৃষ্টি সুষ্ঠু সাংবাদিকতার সঙ্গে যায় না।
আগেই বলেছি, দেশে টিভি সাংবাদিকতায় বিপ্লব ঘটেছে। নানান বিষয়ে টিভিতে সচিত্র খবর প্রচার হওয়ায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু অনুসন্ধানী এবং নির্ভেজাল সাংবাদিকতায় আমরা কতদূর এগিয়েছি? কয়েকবছর আগে গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লী পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তো দেশের টিভিগুলোর নিউজের ক্যারিশমার প্রমাণ দিয়েছে। সাঁওতাল পল্লী পুড়ে যাওয়ার ১৫ দিন পর আল জাজিরার সচিত্র খবর প্রচারের পর দেশের মানুষ জানতে পেরেছেন আগুন কারা লাগিয়েছিল। পরে অবশ্য দেশের সব মিডিয়া আল জাজিরার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে করোনাকালে টিভিগুলোর সংবাদ প্রচারে এই বেখেয়ালি প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে কবে? এক সময় মানুষ শুধু বিটিভি দেখতো। পরবর্তীতে আরো দুই তিনটি বেসরকারি টিভি এলো। এখন অনেক টেলিভিশন। বিজ্ঞানের বদৌলতে দ্রুত খবর প্রচারে টিভির অনেক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু সেটা যেন ডাক্তারের ‘ছুরি’ ব্যবহারের মতো হয়, কসাই-ছিনতাইকারীর মতো নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।