পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:)-এর হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) ঘোষণা করেছেন : ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে রাখবে, তার পূর্ববর্ষী ও পরবর্তী গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, জামে তিরমিজী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)। এই হাদীসে ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে রোজা পালনকারীদের জন্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জীবনের গোনাহমাফ হওয়ার শুভ সংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! এটা ঈমানদার সিয়াম পালনকারীদের জন্য একটি বড় নেয়ামত। তবে, কথা হচ্ছে এই যে, মাহে রমজানের রোজা আল্লাহপাক ঈমানদারদের ওপরই ফরজ করেছেন।
আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৮৩)। এতে বোঝা যায় যে, যারা ঈমানদার তাদের ওপর মাহে রমজানের রোজা ফরজ। কিন্তু যারা বেঈমান তাদের ওপর নয়। সুতরাং রোজা পালনকারী ঈমানদারদেরকে ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে রোজা আদায় করার তাকিদ করার তাৎপর্য কি, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহ:) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত আসরারে শরীয়ত বিষয়ক গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাততে উল্লেখ করেন : বস্তুত ঈমান দুই শ্রেণীর হয়ে থাকে। প্রথম শ্রেণীর ঈমানের ওপর পার্থিব জীবনের বিধান নির্ভরশীল। অর্থাৎ জানমালের হেফাজত হওয়া এবং আনুগত্য প্রকাশের প্রকাশ্য বিষয়গুলো তার ভিত্তিতে সুশৃঙ্খল রূপে নির্বাহ হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা:) স্পষ্টতই বলেছেন, আমাকে ততক্ষণ জেহাদ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সাক্ষ্য না দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মোহাম্মাদ (সা:) আল্লাহর রাসূল এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয়।
যখন তারা এ কাজ করবে তখন তাদের জানমাল আমার তরফ থেকে হেফাজতে থাকবে, যদি না ইসলামের কোনো বিধান তাদের ওপর আরোপিত হয় এবং তার আমল হিসাব-নিকাশ আল্লাহর ওপর রয়েছে। তিনি এ কথাও বলেছেন : যে ব্যক্তি আমাদের নামাজ পড়ল, আমাদের কিবলার দিকে মুখ ফিরাল এবং আমাদের জবাই করা জীব ভক্ষণ করল সে মুসলমান এবং তার জন্য আল্লাহ ও রাসূলের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তোমরাও আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্বে খেয়ানত কর না। রাসূলুল্লাহ (সা:) এ কথাও বলেছেন, তিনটি কথা হলো ঈমানের ভিত্তি। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ল তার থেকে তোমরা বিরত থাক। গোনাহের জন্য তাকে কাফের বলো না। কোনো কাজের জন্য তাকে ইসলাম থেকে খারিজ কর না।
আর দ্বিতীয় শ্রেণীর ঈমান হলো- পারলৌকিক জীবনের বিধানের ভিত্তি। অর্থাৎ নাজাত প্রাপ্তি ও মর্যাদা লাভ সংশ্লিষ্ট বিধান। এ সব কিছু সার্বিক আকীদা, পুণ্য কাজ ও উত্তম যোগ্যতা নিয়ে গঠিত। এটা কম ও বেশি হতে পারে। শরীয়াত প্রণেতার রীতি হলো এই যে, তিনি এর সব কিছুকেই ঈমান নামে অভিহিত করেছেন। যেন সকলেই ঈমানের অংশগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন থাকে। আর রাসূলুল্লাহ (সা:) এ কথাই বলেছেন : যার ভেতর আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই এবং যে ব্যক্তি ওয়াদা রক্ষা করে না তার দ্বীন নেই। অন্যত্র তিনি বলেছেন : মুসলমান তাকেই বলা যাবে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।
এই নিরীখে অবশ্যই বলা যায় যে, রোজাদারের মধ্যে উল্লেখিত উভয় শ্রেণীর ঈমান পূর্ণরূপে পরিব্যক্ত থাকবে, আল্লাহপাক তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেবেন, আমীন! ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।