পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতীয় কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতাকামী কাশ্মিরী তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানিকে হত্যার পর সহিংস বিক্ষোভ অবসানের চেষ্টায় কাশ্মীরের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছে। কাশ্মীরের ইংরেজি দৈনিক ‘রাইজিং কাশ্মীর’-এর সম্পাদক সুজাত বুখারি লিখেছেন সংবাদপত্র বন্ধ করায় তিনি অবাক হননি।
তিনি লিখেছেন : ১৬ জুলাই শনিবার সকালে আমার এক বন্ধু টেলিফোন করল। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে সে জানতে চাইল পত্রিকাসহ আমরা সবাই ভালো আছি কি না। সে আরো জিজ্ঞেস করল তোমার পত্রিকার ছাপাখানায়ও কি পুলিশ হানা দিয়েছে?
আমি বললাম, খবর নিয়ে দেখতে হবে।
সে বলল, অন্যান্য পত্রিকা তাদের ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করে জানিয়েছে যে, তাদের পত্রিকার ছাপাখানায় পুলিশ হানা দিয়েছে।
কাশ্মীরে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর আমার পত্রিকায় উসকানিমূলক কিছু প্রকাশ করেছি কি না চিন্তা করতে থাকলাম। কিন্তু তেমন কিছু করেছি বলে মনে হলো না।
আমি যখন পত্রিকা অফিসে টেলিফোন করলাম একজন কর্মচারী নিশ্চিত করে বলল যে, আমাদের ছাপাখানায় পুলিশ হানা দিয়েছে, স্টাফদের আটক করেছে ও পত্রিকার মুদ্রিত কপিগুলো নিয়ে গেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী ১৬ জুলাই যেসব সংবাদপত্র কার্যালয়ে অভিযান চালায় তার মধ্যে রয়েছে ইংরেজি দৈনিক কাশ্মীর টাইমস, গ্রেটার কাশ্মীর, কাশ্মীর ইমেজেস ও রাইজিং কাশ্মীর। উর্দু দৈনিক কাশ্মীর উজমার ৫০ হাজার কপি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
২০০৮ ও ২০১০ সালেও ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করেছিল।
২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলার জন্য অভিযুক্ত আফজাল গুরুকে যখন ২০১৩ সালে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, তখনো ছাপাখানা ও পত্রিকা বিক্রির স্ট্যান্ড থেকে সংবাদপত্র আটক করা হয়। আমার মনে আছে, আমার সংবাদপত্রটির প্রকাশনা চার দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। ২০১০ সালের আন্দোলনের সময় আমরা দশ দিন পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ রাখতে বাধ্য হই।
এবার ওয়ানি হত্যার পর সৃষ্ট সহিংসতায় ৪০ জনের বেশি লোক ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৮ শ’রও বেশি। সারা কাশ্মীরে কারফিউ জারি রয়েছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাশ্মীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে।
তথ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ছিল ২০১০ সালে রাষ্ট্রীয় কৌশলের অংশ এবং এবারও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
সরকারি মালিকানাধীন এক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়া ডাটা সার্ভিসসহ সব মোবাইল ফোন সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টিভি চ্যানেলও বন্ধ। সেই সাথে ইংরেজি, উর্দু ও কাশ্মিরী ভাষায় প্রকাশিত ৭০টি সংবাদপত্রের প্রকাশনা কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুধু মুষ্টিমেয় কিছু ব্রডব্যান্ড সংযোগ বাকি বিশ্বের সাথে আমাদের যোগসূত্র বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর সময় থেকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সামরিকীকৃত এ অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমকে ক্ষুরের কিনারা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।
১৯৯০ সালের সংঘাতে ১৩ জন সাংবাদিক নিহত হন। জীবনের প্রতি হুমকি, ভীতি প্রদর্শন, হামলা, গ্রেফতার ও সেন্সরশিপ স্থানীয় সাংবাদিকের জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
সাংবাদিকরা সামরিক বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী উভয়েরই টার্গেট। ছোট সংবাদপত্রগুলোর আয়ের প্রধান উৎস কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপন, কিন্তু তাদের তা দেয়া হয় না।
কোনো সাংবাদিক যদি নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতা বিষয়ে রিপোর্ট করেন তিনি দেশবিরোধী বলে আখ্যায়িত হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হবেন। তারা যদি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখেন তাদের তেহরিক (আন্দোলন)-বিরোধী বা ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হতে পারে।
কাশ্মীরের শিক্ষামন্ত্রী নাঈম আখতার বলেছেন, সংবাদপত্র বন্ধ একটি অনিচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত।
তিনি দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রকে বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এটা এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। তরুণরা সংবাদমাধ্যমের খবরে আবেগতাড়িত হয়ে রাস্তায় নামছে, যা কি না ট্র্যাজেডির মাত্রা বৃদ্ধি করছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বেপরোয়া চেষ্টায় সরকার সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়ায় নানা গুজব আকাশে ডানা মেলছে। যার ফলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে। কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই সংবাদমাধ্যম শত্রু হতে পারে না। সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে না। কাশ্মীরে গণতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরেই হুমকির মুখে। সূত্র : বিবিসি ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।